বইকথা
দেশের সেরা ব্যারিস্টারকে নিয়ে বঙ্গবাণী প্রকাশ করেছিল বিশেষ সংখ্যা
প্রদোষকুমার বাগচী
দেশের তিনি তখন সেরা ব্যারিস্টারদের অন্যতম। ব্যারিস্টার হিসেবে খ্যাতি, সমাজজীবনে প্রভাব-প্রতিপত্তি আর অগাধ অর্থ, কি ছিল না তাঁর! কিন্ত সব ছেড়েছুড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অসহযোগ আন্দোলনে। তাঁর সেই অসামান্য ত্যাগের সংবাদ নিমেষে ছড়িয়ে পড়েছিল দিগ্বিদিকে। প্রাণিত হয়েছিল বৃহত্তর মানুষ। সকলেই জানতে চান কে তিনি। হ্যাঁ, তিনি চিত্তরঞ্জন দাশ।
তিনি প্রেসিডেন্সির ছাত্র ছিলেন। দেশপ্রেমের জোয়ারে বইতো তখন প্রেসিডেন্সিতে। স্বাভাবিকভাবে সেখান থেকে বহু ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। চিত্তরঞ্জনওনের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সক্রিয় ভাবে তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন রাজনীতিতে। সুরেন্দ্রনাথের স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন তিনি। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাত্রা। দেশে ফেরার পর তাঁর দেশের জন্য কাজের প্রতি সক্রিয়তা বর্ধিত হয়।অরবিন্দ ঘোষের মামলা, বারীন্দ্রনাথ ঘোষের মামলায় যুক্ত থেকে ব্যবহারজীবী হিসাবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। চিত্তরঞ্ন কেবল ব্যারিস্টারই ছিলেন না, দানশীল মানুষ ছিলেন। সাহিত্য রচনাতেও সক্রিয় ছিলেন। কবিতা লিখতেন। গদ্য সাহিত্যের চর্চাও করেছেন। রবীন্দ্রনাতের সঙ্গে তাঁর নৈকট্য ছিল। পরে চিত্তরঞ্নের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হলেও রবীন্দ্রমন থেকে তাঁর আসন সরে যায়নি। তাই তাঁর প্রয়াণের পরে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে উদ্দেশ করে লিখেছিলেন—‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ/ মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।’
দেশের মানুষ তাঁকে 'দেশবন্ধু' হিসেবে বরণ করে নিয়েছিলেন। দেশবন্ধুর প্রয়াণের পর মহামূল্যবান একটি সংখ্যা প্রকাশ করেছিল 'বঙ্গবাণী'। সম্পাদক ছিলেন বিজয়চন্দ্র মজুমদার। সংখ্যাটি গবেষণার জন্য একটি অমূল্য দলিল। পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের দুই পুত্রের পরিচালনায়। দুষ্প্রাপ্য সংখ্যাটি একালের অনুসন্ধিৎসু পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া হল 'সূত্রধর'-এর ব্যবস্থাপনায়। প্রায় একশো বছর আগে প্রকাশিত এই দুর্লভ সংখ্যাটি হাতে পেয়ে মননশীল পাঠক যে আনন্দে আপ্লুত হবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
'বঙ্গবাণী'-র দুর্লভ-দুষ্প্রাপ্য এই সংখ্যাটি উদ্ধার করেছেন পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একাটা অসামান্য কাজ করেছেন। শিশুসাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক তিনি। গবেষক হিসেবেও সুখ্যাত। বেশ কয়েকটি বই আছে তাঁর। অবনীন্দ্রনাথের শিশুসাহিত্য নিয়ে পিএইচ-ডি করেছেন। বাংলা ছড়ার বিবর্তন নিয়ে উচ্চতর -গবেষণা, ডি.লিট উপাধি অর্জন। শিশুসাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে যেমন বই লিখেছেন, তেমনই লিখেছেন ঠাকুরবাড়ি-কেন্দ্রিক বেশ কিছু বই।
বর্তমান বইটতে রয়েছে কয়েকজনের পরিচিতি যাঁরা চিত্তরঞ্জন সংখ্যায় লিখেছিলেন। তাঁদের দুএকজনের নাম উল্লেখ করি— প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সতীশচন্দ্র রায়, দীনেশচন্দ্র সেন, ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, নিরুপমা দেবী, সাহানা দেবী প্রমুখ। গবেষক ও আগ্রহীদের কাছে বইটির যে কদর থাকবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
বঙ্গবাণী : দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ সংখ্যা। শ্রাবণ, ১৩৩২
পুনরুদ্ধার ও সম্পাদনা পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সূত্রধর। ৪৭/বি বোসপাড়া লেন, বাগবাজার, কলকাতা-৭০০ ০০৩। ৬৫০ টাকা।
Comments :0