ধূসরবেলা
পৃথিবীর পথে
মনীষ দেব
মুক্তধারা
দেশ দেশের মতো হোক।
দেশ ধর্মনিরপেক্ষ কিনা কে জানে! ছোটবেলায় সুজয় চোখ আলো করে বলতো — দেশে যাব। সেই দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল কিনা জানিনা। আলো ছিল। এক-দেড় হাপ্তা পরে সুজয় ফিরতো তখন — এরোপ্লেন-জাহায়-হাতি আঁকা হাতের লেখার খাতা গুলি ফাঁকা, শুধু ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেছে আধ খানা গরমের ছুটি। কনুইয়ে-হাটুতে কালো আঁচড়ের দাগ, কাঁচাআম কাসুন্দিতে মাখামাখি দেশের বাড়ি, নিকোনো উঠোনে আমসত্ত্ব থেকে আমসী। দেশ মানে একদল উলঙ্গ-অর্ধনগ্ন শিশুদের নয়নজলীতে দাপিয়ে মাছ ধরা, ধর্মহীন এক একটা রক্তমাংসের পিন্ড — শুধু প্রাণ, শুধু প্রাণ অফুরান প্রাণ। দেশ মানে একটা নদীর কোথাও জল, কোথাও পানি — কোথাও বাংলা, কোথাও হিন্দি, কোথাও উর্দু, কোথাও সংস্কৃত — নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান।
দেশ যখন শাসকের — দেশ তখন ধর্মনিরপেক্ষ — দেশ তখন অসহিষ্ণু — দেশ তখন যুদ্ধের! রামায়ণের দেশ যুদ্ধের। মহাভারতের দেশ যুদ্ধের। সম্রাট অশোকের দেশ যুদ্ধের! নবাব সিরাজের দেশ যুদ্ধের! স্বাধীনতার লড়াই শেষেও থামেনি যুদ্ধ।
দেশ এখন রাষ্ট্রের নজরদারীতে! তোমার পিতৃত্বে নজরদারী! তোমার মাতৃত্বে নজরদারী! তোমার প্রেমে নজরদারী! তোমার ভালবাসায় নজরদারী! তোমার ভাললাগায় নজরদারী! তোমার একটুকরো খাবারের মাংসে নজরদারী! তোমার প্রার্থনার সুরে নজরদারী! আসলে দেশটাই এখন এক চৌকিদারের কড়া নজরদারীতে আর চৌকিদারের হাজার-লক্ষ-কোটি পাইক। ইতিহাস বড় নির্মম একদিন এই পাইকরাই ঘুরে দাঁড়াবে — রুখে দাঁড়াবে — ভেঙে পড়বে রাষ্ট্রের চাকা — নেই চৌকিদার, নেই নজরদারী — নেই রাষ্ট্র — নেই রাষ্ট্রযন্ত্র। দেশ শুধু দেশ — এমন একটা দেশ — যেখানে বিক্রি হয়ে যাবে না তোমার শিক্ষা ও কাজের অধিকার শাসকের হতে। এক স্বপ্নের দেশ, যেখানে ইস্কুলে না গেলে, মিলবে না খাবার, জ্বলবে না ঘরে আলো, আর একটি মা'ও বেঁচে দেবে না তার মেয়েকে — শুধু মেয়ে হওয়ার অপরাধে যেখানে লুট হয়ে যাবে না একটি মেয়েরও সম্মান। কাঠ কুড়িয়ে ফেরা বুধিয়া সোরেনের জঙ্গল থেকে মনি-মুক্তা-সোনা'রা আবার পৃথিবীর পথে — একদিন পৃথিবীর পথে।
Comments :0