চিন্ময় কর- মেদিনীপুর
সারা শরীর জুড়ে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। সেই অবস্থায় রাস্তায় এক যুবক আর্তনাদ করেছেন বাঁচাও বাঁচাও বলে। তাঁর শরীর জ্বলছে। গা শিউরে ওঠা সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে কলেজ পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন নিরাপদ স্থানে পৌছানোর তাগিদে। শনিবার দুপুরে এই ঘটনা মেদিনীপুর শহরের প্রবেশ দ্বার ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের কেরানিচটি চকে। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, ওই যুবক ও তাঁর দোকানকে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিন জন দুষ্কৃতী বাইকে করে এসে বোতল ভর্তি পেট্রেলে আগুন ধরিয়ে দোকানের মধ্যে ওই যুবকের দেহে ছুঁড়ে দেয়। এই কান্ড ঘটিয়ে দুষ্কৃতীরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। সেই আগুন ওই যুবকের দেহে ও দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে তিনি দোকান ঘর ছেড়ে সড়ক রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। সবার চিৎকারে নিজেই দেহের পোশাক খুলে নিজেকে রক্ষা করেন। আক্রান্ত ওই যুবকের নাম সুরজিৎ সাহু।
২৪ ঘন্টাও পার হয়নি। গতকাল শুক্রবার ভর দুপুরে এই মেদিনীপুর শহরের মহাতাবপুর শশ্মানঘাট সংলগ্ন ব্যাস্ততম সড়ক রাস্তায় যাত্রীবাহি বাস আটক করে আগ্নেয়াস্ত্র ধারী মুখঢাকা ৫ জন দূষ্কৃতী এক জনের কাছ থেকে ব্যাগ ছিনাতাই করে চলে যায়। এখনেও পর্যন্ত সেই ঘটনার কোনো কিনারা হতে না হতে আবারও এদিন ভর দুপুরে দুষ্কৃতীদের তান্ডব দেখলো মেদিনীপুর শহর।
সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায় এক যুবকের সারাদেহ দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। দেহের পোষাক খুলে ফেলে দেওয়ায় প্রাণে বাঁচলেও শরীরের অনেক জায়গায় পুড়ে ক্ষত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে এদিন দুপুর দুটোর পর দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওই যুবক। সেই সময় মুখ ঢাকা তিন দুষ্কৃতী দোকানের সামনে এসে বাইক নিয়ে দাঁড়ায়। তারপরই ওড়ানায় ঢাকা একটি পেট্রল ভর্তি সলতে সমেত বোতলে আগুন জ্বেলে ছুঁড়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় মানুষ দোকানের আগুনে জ্বল ঢেলে নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষনে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পুলিশ। আহত যুবককে বাড়ির লোকজন সহ প্রতিবেশীরা মেদিনীপুর মেডিকেলে নিয়ে এসে ভর্তি করান। দেহের অনেকটাই অংশ ঝলসে গেছে। পুলিশ আক্রান্ত যুবকের বয়ান নিয়েছে বলে জানা গেছে। ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে এই ঘটনা বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায় গত তিন চার দিন আগে ওই যুবকের দোকানের সামনে ফুটপাতে ঠেলা গাড়ি লাগিয়ে ফাস্ট ফুডের দোকান বসায় স্থানীয় ইন্দকুড়ি এলাকার এক ব্যবসায়ী। এছাড়া একটি লটারি দোকানও বসে। ফলে তার দোকান পুরোটাই ঢাকা পড়ে যায়। দোকান অকেজো করার জন্য বচসা বাঁধে। মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালি থানার পুলিশ গিয়ে হস্তক্ষেপ করে। ঠেলা গাড়ির দোকানটিকে সরিয়ে বসতে বলে আসে। তারপর শনিবার এই ঘটনা ঘটে। আক্রান্ত পরিবারের অভিযোগ, তাদের দোকানের সামনে ফুটপাতে দোকান বসাকে কেন্দ্র করে গত দুদিন আগে যে বচসা হয়, তার জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়েছে ওরাই। অগ্নিদগ্ধ সুরজিত সাউয়ের চিকিৎসা চলছে মেদিনীপুর মেডিকেলের বার্ন ওয়াড়ে। তাঁর শরীর স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। তবে এই ঘটনায় কে বা কারা যুক্ত, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সম্পূর্ণ ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ।
Comments :0