কোন উপায়ে চাকরি ফিরে পাবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে এবার সিপিআই(এম)’র রাজ্যসভার সাংসদ, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির ফলে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
চলতি মাসের ৭ তারিখ থেকে শিক্ষা মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের দাবিতে বিকাশ ভবনের সামনে ধরনায় বসে রয়েছেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সরকার আলোচনায় না বসলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। একই সঙ্গে এবার কাদের দুর্নীতিতে শিক্ষাক্ষেত্রের এই হাল, সেটা সামনে আনুক সরকার— সেই দাবিতেও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেন আন্দোলনকারী চাকরিহারারা।
শনিবার আন্দোলনকারী চাকরিহারাদের প্রতিনিধিদল আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন। কীভাবে তাদের চাকরি বাঁচানো যায়? সরকারের নেতামন্ত্রীদের দুর্নীতিতে খুইয়ে ফেলা চাকরি কোন আইনি পথে ফিরে পাবেন? এই প্রশ্নগুলির উত্তর পেতে তাঁরা আলোচনা করেন প্রবীণ এই আইনজীবীর সঙ্গে।
চাকরিহারাদের সঙ্গে আলোচনায় বিকাশ ভট্টাচার্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, এইভাবে চাকরি তাঁরা ফেরত পাবেন না। তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে রায় হওয়ার পর ওদের আর পুরানো কাজ ফিরে পাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। সরকারের বিভিন্ন বিভ্রান্তমূলক প্রচারের জন্যই ওরা আরও বিভ্রান্ত হয়েছেন। ওদের ভুল বোঝানো হয়েছিল কাজ ফিরে পেতে পারেন। আইনত ওদের কাজ ফেরার সম্ভাবনা নেই। এইটাই আমি ওদের স্পষ্ট করে বললাম, সরকার যে বলছে রিভিউ পিটিশন করে ওদের চাকরি ফিরিয়ে দেবে, সেটা আইনত অসম্ভব। ওদের নতুনভাবে পরীক্ষায় বসতেই হবে। তারপরই যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে চাকরি ফিরে পাবে। রিভিউ পিটিশন করে লাভের লাভ কিছু হবে না। ওরা আইনি দিকটা বোঝার জন্য এসেছিল, আমি আমার বুদ্ধিমত বুঝিয়ে দিলাম।’
বিকাশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলোচনার পরে চাকরিহারারা বলেন, ‘আমরা সকলের সঙ্গেই কথা বলছি। মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়ে বলেছি চাকরি বাঁচান। জানতে চেয়েছিলাম আমাদের চাকরি বাঁচানো যায় কি না। আলোচনার পরবর্তী পদক্ষেপের একটা মানচিত্র পাবো। তবে এবার রাজ্য সরকার সকলের সামনে আনুক এই দুর্নীতির সঙ্গে কারা যুক্ত। এবার এই দাবিতেই আন্দোলন করব।’ তাঁরা জানান, সরকার পক্ষ তো পিটিশন করেছে, তাতে লাভ হবে কি না, কী কিভাবে আইনি পথে চাকরি ফেরানো সম্ভব তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন।
অন্যদিকে, অবস্থানরত চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকারা কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন হলেই অবস্থানের স্থান পরিবর্তন করবেন বলে জানান। অবস্থানস্থলের শেড, জল, বায়োটয়লেট এবং বিদ্যুৎ পরিষেবার অতিরিক্ত দাবি সহ সমস্ত ব্যবস্থাপনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হলে তাঁরা বইমেলা প্রাঙ্গণের সামনে স্থানান্তরিত হবেন। ততক্ষণ তাঁরা বিকাশভবনের সামনেই থাকছেন বলে জানানো হয়েছে। তবে আবারও সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য এদিন সময় ধার্য করে দিলেন তাঁরা। ইমেল, চিঠি, এমনকি, সংবাদমাধ্যমের মধ্যে দিয়েও চাকরিহারারা শিক্ষা মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের চাকরি এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় বসার আবেদন জানিয়েছিলেন। ১৮দিন ধরে একইভাবে বসে আছেন তাঁরা অথচ শিক্ষা মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী কেউ দেখা করেননি। আগামী সোমবারের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি নিয়ে আবারও শিক্ষা মন্ত্রীকে চিঠি দিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এবার দেখা না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। শনিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একথা জানান ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ ২০১৬’। রাজ্যের প্রত্যেক সাংসদকে চিঠি পাঠাবেন এবং আগামী অধিবেশনে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরার দাবিও করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
চাকরিহারাদের বক্তব্য, এই অচলাবস্থার দায় সরকারের। দায় শিক্ষা মন্ত্রীর, দায় মুখ্যমন্ত্রীর। প্ল্যান-এ-বি-সি-ডি’ যে আসলে শাসক দলের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, প্রভাবশালীদের টাকা দিয়ে চাকরি যোগাড় করা অকৃতকার্যদের বাঁচানোরই কৌশল তা স্পষ্ট হয়েছে এখন অবশিষ্ট চাকরিপ্রার্থীদের কাছেও। দেড় বছর সময় মিলেছিল। শুধু সুপ্রিম কোর্টেই গত এপ্রিল থেকে এই এপ্রিল পর্যন্ত ২০টি শুনানির সুযোগ পেয়েছিল। তারপরেও আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করে তালিকা কেন জমা দিতে পারেনি এসএসসি, রাজ্য সরকার? গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চের ৪১ পাতার রায়ের রায়ের ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদে তাই স্পষ্ট করেই লেখা হয়েছে- এসএসসি’র যুক্তি আমরা সব মেনে নিতে পারি যদি তাদের কাছে অন্তত ওএমআর শিট কিংবা তার মিরর কপি থাকতো! কমিশন নিজেই স্বীকার করেছে তাদের কাছে ওএমআর শিটের কোনও কপি নেই। সব নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ফলে যোগ্য- অযোগ্য বাছাইয়ের সমস্ত সম্ভাবনাকে খুন করেছে সরকার, কমিশন, পর্ষদ আর শাসক দলের তোলাবাজ নেতারাই, একযোগে।
SSC SCAM
কাদের দুর্নীতিতে চাকরি গেল, সামনে আনতে আন্দোলনে চাকরিহারারা

×
Comments :0