অরিজিৎ মণ্ডল: হলদিয়া
শ্রমিক কর্মচারীদের ওপর এখন আক্রমণ দ্বিমুখী। বাজার অর্থনীতির ফলে মুনাফার সঙ্গে মজুরির দ্বন্দ্ব তীব্রতর। চলছে ক্রমবর্ধমান শোষণ। অন্যদিকে সরকারের নীতির ফলে কোণঠাসা হতে হচ্ছে শ্রমজীবীদের। পাল্টা লড়াইও চলছে, চলছে সংগ্রামও।
সিআইটিইউ ১৩তম রাজ্য সম্মেলনে দ্বিতীয় দিনের প্রতিনিধিদের আলোচনায় উঠে এলো এই প্রসঙ্গগুলি। লড়াই জোরদার করার আহ্বান উঠল আলোচনার মধ্যে।
মোট ২২ টি জেলা থেকে প্রতিনিধিরা ও জুট শিল্প কয়লা চা বাগান স্ট্রিট হকার সহ বিভিন্ন
বাধা তৃণমূলের দুষ্কৃতীবাহিনীর। আবার শ্রমজীবীর মধ্যে বিভাজনের প্রচারও সংগঠিত আন্দোলনের গড়ার সমস্যা। আজকে জরুরি কর্মস্থলের পাশাপাশি শ্রমজীবীর বাসস্থানেও পৌঁছানো।
শনিবার হলদিয়ায় সিআইটিইউ রাজ্য সম্মেলনে এই প্রয়োজনের কথা বলেছেন প্রতিনিধিদের অনেকে। একাজে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনের ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক মানিক দে-ও। শুনিয়েছেন ত্রিপুরার অভিজ্ঞতা। আর প্রাদেশিক কৃষকসভার সম্পাদক অমল হালদার ব্রিগেডের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে বুথে বুথে শ্রেণি ঐক্য গড়ার ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে শ্রেণিশক্তির ভারসাম্য বদলাতে জোর দিতে হবে বুথে।
মানিক দে বলেছেন যে ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার। সেখানে এরাজ্যের মতো বামপন্থীরাই আক্রমণের লক্ষ্য। সিআইটিইউ’র ১৫৬টি দপ্তর কার্যত নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে বিজেপি’র বাহিনী।
তিনি বলেছেন, শক্তিকে সংহত করে প্রতিরোধ গড়ার ওপর জোর দিয়েছে ত্রিপুরার শ্রমিকশ্রেণি। সিআইটিইউ’র নেতৃত্বে সে কাজ হচ্ছে। কর্মস্থলে ঢুকতে বাধা আসছে। ফলে বাড়ি বাড়ি পৌঁছানো হচ্ছে।
তিনি বলেছেন যে সরকারি দপ্তরেও স্থায়ী কাজ নেই। বহু অস্থায়ী। তাঁদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করে পৌঁছানো জরুরি।
এদিন সিআইটিইউ অনুমোদিত বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন। পশ্চিম বর্ধমানের প্রতিনিধি আলোচনায় বলেন, বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কলকারখানা বন্ধের মুখে। দুর্গাপুর রানিগঞ্জ অঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্পগুলি ধুঁকছে। স্থায়ী কাজ নেই। বিহার ওডিশা থেকে শ্রমিকদের নিয়ে এসে কম পয়সায় কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাঁরাও শোষিত। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। বৃহৎ আন্দোলন তৈরি করা না গেলেও নির্দিষ্ট দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন মজবুত করা হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে কর্মী বাহিনী।
তিনিই বলেন যে দুর্গাপুর শহরে গিগ ওয়ার্কারের সংখ্যা শেষ তিন বছরে বেড়েছে। আমরা তাঁদের মধ্যে কাজ করছি, সংগঠিত করার চেষ্টা করছি। পুরুলিয়ার একটি ইউনিয়নের নেতা বলেন যে ধর্মীয় জাতিগত বিভাজনের সঙ্গে রয়েছে মালিকের চোখ রাঙানি। তারপরও বিড়ি শ্রমিক ও স্ট্রিট হকারদের সংগঠিত করার কাজ হয়েছে।
উত্তর দিনাজপুরের প্রতিনিধি বলেছেন যে শ্রমিক মহল্লায় পৌঁছানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রতিনিধি জানিয়েছেন তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনীর হামলার মোকাবিলা করে সংগঠনের কাজ করার অভিজ্ঞতা।
শুক্রবার চারটি বিষয়ে কমিশন হয় সম্মেলনে। সেখানে মোট ১২০ জন আলোচনা করেন। ১১০০ প্রতিনিধিই ভাগ ভাগ করে ছিলেন চারটি কমিশনে। সেই আলোচনার রিপোর্ট আজ পেশ হয়েছে সম্মেলন মঞ্চে।
এদিন অভিন্দন জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন ডিওয়াইএফআই’র পক্ষে জেলা সম্পাদক এবং রাজ্যের নেতা ইব্রাহিম আলি, এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষও।
Comments :0