বিহারে নির্বাচনের মুখে তড়িঘড়ি ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন করতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। স্বল্প সময়ে তাড়াহুড়ো করে একাজ করতে গিয়ে প্রায় তিন কোটি মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিরোধীদের। ভোটারদের মধ্যে তাই চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মাত্র এক মাসের মধ্যে ভোটার তালিকায় নাম থাকা ৭.৮৯ কোটি ভোটারকে বিশেষ ধরনের ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে। ২০০৩ সালে বিশেষ সংশোধনের পর তালিকায় যাদের নাম ছিল তাদের ফর্মের সঙ্গে কোনও নথি জমা দিতে হবে না। কিন্তু পরে ২২ বছরের মধ্যে যে ২.৯৩ কোটি নাম তালিকায় যুক্ত হয়েছে তাদের সকলকে ১১টি নির্দিষ্ট নথির মধ্যে অন্তত একটি জমা দিতে হবে। অর্থাৎ তাদের জন্মের তারিখ এবং পিতামাতার জন্মের তারিখ ও স্থান সংক্রান্ত নথি দিতে হবে। এক্ষেত্রে আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড নথি হিসাবে গণ্য হবে না।
এই জায়গাতেই গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। কোর্টের মতে কমিশন ভোটারের পরিচিতি যাচাই করতে পারে, নাগরিকত্ব নয়। কেউ ভারতের নাগরিক কিনা সেটা একমাত্র ঠিক করতে পারে স্বরাষ্ট্র দপ্তর। সর্বত্র সবক্ষেত্রে আধার পরিচয় পত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তাহলে ভোটারের পরিচয়পত্র হিসাবে ব্যবহৃত হবে না কেন? কমিশনজাত শংসাপত্র গ্রহণ করছে। অথচ জাত শংসাপত্র পেতে আধার জরুরি। অর্থাৎ যে আধার দেখিয়ে জাত শংসাপত্র পাওয়া যায় সেই আধার কমিশনে স্বীকৃত নয়। অথচ জাত শংসাপত্র স্বীকৃত।
খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যেসব নথি বেশির ভাগ মানুষের কাছে আছে, যেমন আধার, রেশন, ভোটার কার্ড সেগুলি কমিশন গ্রহণ করছে না। কিন্তু সেই নথিই চাইছে যেগুলি বেশিরভাগের নেই অথবা জোগাড় করা কঠিন। মানুষকে হয়রানি করা বা বিপদে ফেলা ছাড়া এর অন্য কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে? বিরোধীদের অভিযোগ এমন জটিলতা তৈরি করে একটা বিরাট অংশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র। নিশ্চিতভাবে এর শিকার হবেন দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিক এবং অবশ্যই দরিদ্র পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষ। সাধারণভাবে এরা হিন্দুত্ববাদী বিভাজনকারীদের ভোটার নন। শাসক বিজেপি চাই এদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে।
২০০৩ সালে বিহারে শেষ বিশেষ সংশোধন হয়েছে। অন্য অনেক রাজ্য আছে যেখানে তারও আগে এই বিশেষ সংশোধন হয়েছে। সেখানে এই সংশোধনের কাজে হাত না দিয়ে নির্বাচনের একাজে হাত দেওয়া কেন? নির্বাচনের পর সময় নিয়ে যত্ন সহকারে কাজটা ভালোভাবে করা যেত। এখন কাজটা অন্যত্র করলে অসুবিধা ছিল না। তাছাড়া বিহারে গত জানুয়ারিতে সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়েছে। বিশেষ উদ্দেশ্য না থাকলে তার পরে তাড়াহুড়ো করে অল্প সময়ের মধ্যে বিশেষ সংশোধন হতে পারে না। সুপ্রিম কোর্ট এই জায়গাতেও গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
তুলনামূলকভাবে গরিব রাজ্য বিহার। উন্নয়নের বেশিরভাগ সূচকে একেবারে পেছনের সারিতে। দলিত, আদিবাসী, মুসলিমদের বেশিরভাগের কাছেই তেমন কোনও নথিপত্র নেই বা থাকে না। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে এবং ভোটের জন্য আধার, রেশন, ভোটার কার্ড বেশির ভাগেরই আছে। অথচ কমিশন এই তিনটি নথিই অস্বীকার করছে। তার অর্থ জেনে বুঝে এই অংশের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে চায়। সবচেয়ে লজ্জার কথা কমিশন নিজের দেওয়া ভোটার কার্ডকেও অস্বীকার করছে। যে কার্ড দিয়ে ২২ বছর ধরে ভোট দিয়েছে। যে ভোটারের ভোটে জিতে মোদী তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কমিশনের চোখে তারা সন্দেহজনক। তাহলে তো ধরে নিতে সন্দেহজনকদের ভোটে জিতে মোদী সরকার চালাচ্ছে। কমিশনের যুক্তি মানলে মোদী সরকারকেই অবৈধ ঘোষণা করতে হয়। বোঝাই যাচ্ছে গোটাটাই পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।
Bihar EC
বিহারে প্রশ্নের মুখে কমিশন

×
Comments :0