Editorial

কাজের নামে আর এক ধাপ্পা

সম্পাদকীয় বিভাগ

ভয়াবহ বেকারির দেশে কর্মসংস্থানের খরা কাটাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপ‍‌তিত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা এক চমকপ্রদ প্রকল্প চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকল্পের পোশাকি নাম কর্মসংস্থানভিত্তিক প্রণোদনা বা এমপ্লয়মেন্ট লিঙ্ক ও ইনসেনটিভ, সংক্ষেপে ইএলআই। প্রকল্পটিকে অবশ্য একেবারে নতুন বলা যাবে না। গত বছর লোকসভা ভোটের পর তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসে জুলাই মাসে যে পূর্ণাঙ্গ বাজেট (২০২৪-২৫) পেশ করেছিল তাতে এই প্রকল্পটির উল্লেখ ছিল, কর্মংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত হিসাবে। তারজন্য দু’লক্ষ কোটি বরাদ্দও করা হয়েছিল। কিন্তু সেই অর্থবর্ষে প্রকল্পটি চালু করা হয়নি। সামনে বিহার সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে নির্বাচনকে মাথায় রেখে সেটা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া।
এই প্রকল্পে নতুন কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে মালিকদের জন্য বিশেষ আর্থিক উৎসাহভাতা দেবার বন্দোবস্ত হয়েছে। তেমনি যে নতুন কাজ পাবে তাকেও  টাকা দেবার ব্যবস্থা থাকবে। অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। বাড়ছে না মজুরিও। এদিকে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে  বেকারের সংখ্যা। মানুষের আয় নেই। কেনার ক্ষমতা নেই। তাই বাজারে বাড়ছে না পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা। চাহিদা না বাড়ায় উৎপাদন বাড়ছে না। আবার উৎপাদন  বাড়ছে না বলে নতুন ক‌র্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। মোদী জমানায় দেশের অর্থনীতি  এমন স্থবিরতার ম‍‌ধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য সরকার অনেক প্রকল্প চালু করেছে। মেক ইন ইন্ডিয়া, স্কিল ইন্ডিয়া, উৎপাদনভিত্তিক আর্থিক সাহায্য, অ্যাপ্রেন্টিস প্রকল্প ইত্যাদি কিন্তু কোনও কিছুতেই কর্মসংস্থান বাড়ছে না। মাঝখান থেকে সরকারের তহবিল  থেকে বিপুল অর্থ চালান হয়ে যাচ্ছে বেসরকারি মালিকদের ঘরে। শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য একের পর এক আইন ও বিধি শিথিল করা হয়েছে। কর্মীদের মজুরি খাতে যাতে মালিকের ব্যয় সর্বনিম্ন  করা যায় তার জন্য সমস্ত শ্রম আইন বদলে শ্রমিক অর্জিত অধিকারগুলি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কাজ তুলে ঠিকা-চুক্তি কাজ চালু হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার দায় থেকে মালিকদের রেহাই দেওয়া হয়েছে। কাজের সময়ের  কোনো উর্ধ্বসীমা নেই। অর্থাৎ সবচেয়ে কম টাকা দিয়ে শ্রমিকদের সবচেয়ে বেশি  খাটিয়ে নেবার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এই ব্যবস্থায়‌  সমপরিমাণ উৎপাদনে আগের থেকে অর্ধেক কর্মী লাগে। ফলে সমপরিমাণ উৎপাদনে মালিকদের মুনাফা বেড়ে গেছে দ্বিগুণ তিনগুণ।
মোদী সরকারের কর্পোরেটমুখীর নীতির কারণেই নতুন কাজ তৈরি হচ্ছে না।  অথচ মালিকের মুনাফার কোনও সমস্যা নেই। এই অবস্থায় ইএলআই প্রকল্প বেকার কর্মপ্রার্থীদের জন্য একটি ধাপ্পা ছাড়া কিছুই নয়। সরকার নিজের ভাড়ার থেকে নবনিযুক্ত শ্রমিকদের বেতন এবং মালিকদের বকশিস দেবে। যতদিন (দু’বছর) সরকার টাকা দেবে ততদিনই কাজ থাকবে।  কোনোটাই স্থায়ী কাজ নয়। দু’বছরে সাড়ে তিন কোটি  চাকরি হয়েছে বলে মোদী বক্তৃতা দে‍‌বেন, ভোট চাইবেন। তারপর সব ভোঁ-ভাঁ। মাঝখান থে‍‌কে পকেট ভরবে মোদীর প্যায়ারের কর্পোরেট বন্ধুদের।

Comments :0

Login to leave a comment