GENERAL KNOWLEDGE — TAPAN KUMAR BIRAGAYA — SUSHILA SUNDARI — NATUNPATA — 4 JULY 2025, 3rd YEAR

জানা অজানা — তপন কুমার বৈরাগ্য — সার্কাসের সম্রাজ্ঞী সুশীলা সুন্দরী — নতুনপাতা — ৪ জুলাই ২০২৫, বর্ষ ৩

ছোটদের বিভাগ

GENERAL KNOWLEDGE  TAPAN KUMAR BIRAGAYA  SUSHILA SUNDARI  NATUNPATA  4 JULY 2025 3rd YEAR

জানা অজানানতুনপাতা - বর্ষ ৩

সার্কাসের সম্রাজ্ঞী সুশীলা সুন্দরী
 

তপন কুমার বৈরাগ্য
 

আজ থেকে কুড়ি পঁচিশ বছর আগেও ভারতের বিভিন্ন স্থানে সার্কাসখেলা দেখানো হতো।সার্কাসে তখন বিভিন্ন বন্য জন্তু বাঘ,সিংহ, হাতীর খেলা দেখানো হতো। ১৮৮৭খ্রিস্টাব্দে
প্রিয়নাথ বসু গ্রেটবেঙ্গল সার্কাস প্রতিষ্ঠা করেন। তারপরে কতো সার্কাসের জন্ম হয়েছে।যেমন গ্রেট রয়্যাল সার্কাস, গ্রেট গোল্ডেন সার্কাস,গ্রেট বম্বে সার্কাস,অলিম্পিক সার্কাস, রাশিয়ান সার্কাস।এখন সার্কাস প্রায় বিলুপ্তির পথে।২০১১খ্রিস্টাব্দ থেকে সার্কাসে বন্যপ্রাণীর খেলা আইনতঃ নিষিদ্ধ করা হয়।সেই থেকে সার্কাসের মাহাত্ম্য কমতে থাকে।এখন সার্কাস প্রায় তলানীতে এসে থেকেছে। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে গ্রেট বেঙ্গল প্রতিষ্ঠার পর মৃন্ময়ী নামে এক যুবতী তার দলে যোগ দেন।তিনি হাতির খেলা দেখাতেন।
প্রিয়নাথ বসু চেয়েছিলেন দুজন দক্ষ মেয়ে।একেই বলে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।দুই বোন সুশীলা সুন্দরী বসু এবং কুমুদিনি বসু জিমন্যাস্টিক এবং ট্রাপিজে পটু খেলোয়াড়।তাদের ইচ্ছা
সার্কাসে খেলা দেখাবেন।তাদের সাংসারিক অবস্থা ছিলো খুবই খারাপ।প্রিয়নাথ বসুর সার্কাস দল তখন বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। তারা দুই বোন সোজাসুজি চলে এলেন পার্কসার্কাসে।যেখানে প্রিয়নাথ বসুর সার্কাস প্রদর্শনী চলছে। প্রিয় নাথ বসু তখন প্রফেসর বোস নামে খ্যাতি অর্জন করেছেন।প্রিয়নাথের কাছে তারা সার্কাসে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।প্রিয়নাথ তাদের সাদরে গ্রহণ করেন।সুশীলা সুন্দরী ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী। পরেরদিন থেকে দুই বোন খেলা শুরু করলেন। তখন সুশীলা সুন্দরীর বয়েস মাত্র ১৪ বছর। তারা দুই বোন ঘোড়ায় চড়ে সার্কাসের মঞ্চে প্রবেশ করতেন।সুশীলা সুন্দরীকে দেখে দর্শকরা মনে করতেন রাণী দুর্গাবতী। তারা যোগ দেওয়ার তিন বছরের মধ্যে গ্রেটবেঙ্গলের চাহিদা শতগুন বেড়ে গেল। সালটা ১৮৯৬,রেওয়া নামক দেশীয় রাজ্যের রাজদরবারে রেওয়ার রাজা রামানুজ প্রসাদ গ্রেট বেঙ্গলকে তার রাজ্যে আমন্ত্রণ
জানালেন।সুশীলা সুন্দরীর অপূর্ব ক্রিয়া প্রদর্শনীর জন্য রাজা তাকে দুটো বাঘ উপহার দিলেন।রেওয়া তখন সাদা বাঘের জন্যবিখ্যাত ছিল। সুশীলা সুন্দরী পাঁচ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাঘ দুটোকে বাগে আনলেন।বাঘ দুটো তার কথায় উঠতো,বসতো, গর্জন করতো।তিনি বাঘ দুটির নাম দিলেন লক্ষ্মী এবং নারায়ণ। লক্ষ্মী- নারায়ণকে নিয়ে তিনি যখন খেলা দেখাতেন তখন তার ছিল অসীম সাহস।বাঘের উপর শুয়ে থাকতেন,বাঘের পিঠে ঘুরে বেড়তেন।তার এই বাঘের সাথে খেলা দেখানোর জন্য তিনি বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছেন। তেইশ বছর এই বাঘেদের নিয়ে তিনি দূর্দান্ত সব খেলা দেখালেন।এই বাঘ দুটো তার কোনোদিন কোনো ক্ষতি করেনি।তার সাথে বাঘেদের এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
১৯২৩খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্মীর ভীষণ অসুখ করল।বাঘ দুটোর যেন মা ছিল সুশীলা সুন্দরী।তিনি সার্কাসে কয়েকদিন আর খেলা দেখালেন না। প্রিয়নাথ বসু অনেক অনুরোধ করলেন।কিন্তু
তিনি বললেন আমার কাছে এরা সত্যিকারের মাতৃস্নেহ পেয়ে ধন্য ।এরা আমার কাছে সন্তানতুল্য।লক্ষ্মী ভালো না হলে আমি কিছুতেই খেলা দেখাব না।কয়েকদিন পর লক্ষ্মী মারা গেল। সুশীলা সুন্দরীর হৃদয় ভেঙে চূরমার হয়ে গেল।কয়েকদিন তিনি কিছুই খেলেন না।যেন নিজের সন্তান হারানোর বেদনা তার মধ্যে ফুটে উঠেছে।
তার জন্য ছ'মাস গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস বন্ধ থাকলো। প্রিয়নাথ বসুর মাথায় হাত।অনেক চিন্তা ভাবনা করে একটা বাঘ কিনলেন।বাঘটার নাম দিলেন ফরচুন। সালটা ১৯২৪,
অনেক বুঝিয়ে শুজিয়ে প্রিয়নাথ বসু সুশীলা সুন্দরীকে ফরচুন ও নারায়ণকে নিয়ে খেলা দেখাতে রাজী করালেন। সুশীলা সুন্দরীর চোখে কিন্তু লক্ষ্মী।ফরচুন এবং নারায়ণকে নিয়ে
খেলা দেখাতে গিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে পড়লেন।ফরচুন তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।তার দেহটা ক্ষত-বিক্ষত করে দিলো। নারায়ণ চেষ্টা করল সুশীলা সুন্দরীকে বাঁচানোর জন্য।
বয়স্ক নারায়ণ দূর্দান্ত ফরচুনের সাথে পেড়ে উঠল না। মাত্র ৪৫বছর বয়েসে সার্কাসের মঞ্চে বাঘের আক্রমনেমৃত্যু হলো এক সুন্দরী নারীর। সার্কাসের সম্রাজ্ঞী সুশীলা সুন্দরীর। 

Comments :0

Login to leave a comment