জলপাইগুড়ি কোচবিহার জেলার প্রান্তসীমায় জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের ব্রহ্মপুর এলাকায় মৈনাক হিল টি স্টেটে অবৈধভাবে ৬ জন শ্রমিকের বরখাস্তের প্রতিবাদে গর্জে উঠল শ্রমিকেরা। জানা গেছে কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে ম্যানেজারের তুঘলকি কর্মকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৬ জন বরখাস্ত হওয়া চা শ্রমিক। ছয় জন চা শ্রমিক সম্পর্কে ম্যানেজার মিথ্যে অভিযোগ আনলেও সেই অভিযোগ তিনি প্রমাণ করতে পারেননি। কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকের অতিরিক্ত লেবার কমিশনারের অফিসে ’দুবার ত্রিপাক্ষিক সভা ডাকলেও একবার উপস্থিত হয়ে ম্যানেজমেন্ট বুঝে যায় যে তারা যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা সম্পূর্ণ প্রচলিত শ্রম আইন বিরোধী। বরখাস্ত হওয়া চা শ্রমিকদের জমিতেই এই গড়ে উঠেছিল মৈনাক চা বাগান।
ম্যানেজার শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে শ্রমিকদের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি করবার মধ্য দিয়ে বাগান পরিচালনা করতে চাইছেন বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। এই শ্রমিকেরা আইএনটিটিইউসি অন্তর্গত ভুক্ত শ্রমিক সংগঠনের সাথেই যুক্ত ছিলেন। কিন্তু সেই সংগঠন এবং ম্যানেজারের মধ্য আঁতাতের ফলে এই ছয় জন শ্রমিকদের হয়ে ঐ সংগঠন ভূমিকা পালন করেনি বলে অভিযোগ করেন ছাঁটাই হওয়া চা শ্রমিক ভবেশ রায়। অপর ছাঁটাই শ্রমিক জিতেন রায় বলেন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। ম্যানেজমেন্ট যেখানেই আমাদের কাজ দেন আমরা সেখানেই কাজ করতে যাই। আমাদের বাগানটি চারটি ডিভিশন, এর মাঝখানের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার । আমরা কখনো বলিনি যে আমাদের এক ডিভিশন থেকে আরেক ডিভিশনে পাঠালে আমরা যাব না। কিন্তু ১৫ কিলোমিটার যাতায়াতের জন্য যে সময় দরকার তা ম্যানেজমেন্ট কখনোই দেয় না। রাজ্যের আর কোন চা বাগানে এরকম পরিস্থিতি নেই যে এক ডিভিশন থেকে আরেক ডিভিশনের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। ম্যানেজমেন্ট আমাদের সম্পর্কে মিথ্যে অভিযোগ এনে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
শ্রমিক কেশব কুমার রায় বলেন ডোমেস্টিক এনকোয়ারির নাম করে মালিক যে উকিল বাবুকে নিয়ে এলেন তিনি আমাদের কোন কথা সেভাবে শোনেননি। তিনি একতরফা তার রিপোর্ট পেশ করে গেছেন। অপর ছাটাই হওয়া চা শ্রমিক রোহিণী রায় বলেন ডোমেস্টিক এনকোয়ারি যিনি করবেন আইন অনুযায়ী আমাদের আগে তাকে জানাতে হবে আমাদের যদি তার সম্পর্কে কোন কথা থাকে তাহলে তা ম্যানেজমেন্ট কে শুনতে হবে। আমরা যেহেতু বাংলায় কথা বলি এবং বেশি শিক্ষিত নই। ফলে ইংরেজিতে কী লেখা হলো আর কি বলা হলো আমরা বুঝতে পারিনি. তার পরেও আমাদেরকে বরখাস্ত করা হয় চাকরি থেকে। আমরা এই অবস্থায় চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলম এর কাছে গেলে তিনি আমাদের আইনি সহায়তা করেন। মেখলিগঞ্জ অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার দুবার সভা ডাকলে আমরা দুবারই উপস্থিত হই এবং সি আই টি ইউ র অন্তর্গত চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের জলপাইগুড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলম উপস্থিত হন। কিন্তু দ্বিতীয়বার মালিকপক্ষ উপস্থিত হন নি।
চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের জলপাইগুড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক এবং সিআইটিইউ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলম বলেন, এই ছয় জন চা শ্রমিক এমন কোন গুরুতর অপরাধ করেননি যে যার ফলে তাদের ছাঁটাই হতে হবে। এই বাগানের ম্যানেজার তিনি কোন আইনের তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে এই ৬ জন চা শ্রমিককে বরখাস্তের জন্য নোটিশ দিয়েছেন। রাজ্য সরকারের শ্রম অধিকারিক যখন জানতে চাইল যাকে দিয়ে ডোমেস্টিক এনকোয়ারি করানো হয়েছিল সেখানে ওই ছয় জন চা শ্রমিকের থেকে কোন লিখিত মতামত নেওয়া হয়েছিল কিনা সেই কাগজ তাদের জমা দিতে। এটা বলার পরেই তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। প্রচলিত আইন অনুযায়ী এই ধরনের এনকোয়ারি করার ক্ষেত্রে যিনি এনকোয়ারি করবেন দুপক্ষের সম্মতি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এক্ষেত্রে চা শ্রমিকদের কোন মতামত নেওয়া হয়নি। যা চূড়ান্ত আইন বিরোধী। পাশাপাশি এই বাগান দীর্ঘদিন ধরে গ্র্যাচুইটি প্রদান করছে না। আইনি মেটার্নিটি লিভের প্রাপ্য সুবিধা দিচ্ছেন না। একই বাগানে একই কাজ করা চা শ্রমিকদের ভিন্ন ভিন্ন মজুরি দিচ্ছেন। যা প্লান্টেশন আইন বিরুদ্ধ। বৃহস্পতিবার চা বাগানের শ্রমিকরা মিলিত হয়ে বিক্ষোভ দেখলে সেখানে তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথা গুলো বলেন। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিআইটিইউ জেলা নেতৃত্ব কৃষ্ণ সেন, জ্যোতি প্রকাশ ঘোষ, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি হরিহর রায় বসুনিয়া,কৃষক নেতা ভুপতি মোহন সেন গোপাল রায় সহ বাগানের ২০০ উপরে চা শ্রমিক।
Comments :0