Bihar elections

কমিশন থেকে বেরিয়ে হুঁশিয়ারি বিরোধীদের

জাতীয়

বিহারে ‘ভোটবন্দি’ মানা হবে না। ভোটের অধিকার কাড়ার চেষ্টা হলে রাজপথ প্রতিবাদের জন বিস্ফোরণের সাক্ষী হবে। বুধবার নয়াদিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দপ্তর থেকে বেরিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন বিরোধী দলের নেতারা। বিহারে বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার বিশেষ সার্বিক সংশোধন বা এসআইআর এর যে কথা বলেছে, তার বিরোধিতা করে এদিন ১১টি দলের নেতৃবৃন্দ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে দেখা করতে যান। আচমকাই নতুন নিয়মের কথা বলে বিরোধী দলের নেতাদের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেওয়া হয়। এই নিয়েও তীব্র আপত্তি জানান বিরোধী নেতারা। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনার পরে বাইরে এসে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন বিরোধীরা। তাঁরা বলেন, নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক মোটেই সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়নি। ভোটাধিকার কাড়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে যে ধারণা করা হচ্ছিল, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পরে সেই আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিরোধীরা। 
এদিন নির্বাচন কমিশন থেকে বেরিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সিপিআই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সাংসদ জন ব্রিটাস ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক এদিন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বিহারের কোটি কোটি ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ষঢ়যন্ত্র চলছে। পিছনের দরজা দিয়ে এনআরসি কার্যকরী করতেই এই পদক্ষেপ। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বিরোধীদের কোনও প্রস্তাব মানেননি। নোটবন্দির মতো করে বিহারে ভোটবন্দি করার চেষ্টা হচ্ছে। নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি। কমিশন যে এসআইআর করতে চাইছে, তার সঙ্গে অনেক আইনি বিষয়ও জড়িত। আদালতে যাওয়া সহ পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে বিরোধীরা আলোচনার পরে স্থির করবে বলে জানান ব্রিটাস। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া হলো। অথচ মহারাষ্ট্রে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ৪০ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকায় তোলা হলো। এখন কমিশন যা করতে চাইছে, তাতে বিহারের ৮ কোটি ভোটারের মধ্যে ৪.৫ কোটির উপরে সরাসরি এর প্রভাব পড়বে। 
এদিন নির্বাচন কমিশন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখেন কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি, আরজেডি’র মনোজ ঝা এবং সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। প্রথমেই নির্বাচন কমিশনে নতুন নিয়মের কথা বলে বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রে যে বাধা দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে সরব হন সিংভি। তিনি বলেন, যদিও বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে নামের তালিকা দিয়ে কমিশনকে জানানো হয়েছিল কারা আসছেন প্রতিনিধি দলে। এই নিয়ে আধ ঘণ্টা-চল্লিশ মিনিট বাক বিতণ্ডার পরেও সকলকে যেতে দেওয়া হয়নি। তাঁরা বাইরেই বসে থাকেন। সিংভি বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এখন থেকে রাজনৈতিক দলের প্রধান ছাড়া আলোচনা করতে আসতে পারবেন না। এটা সম্পূর্ণ অবাস্তব এবং অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি। এই জিনিস অতীতে কখনও হয়নি। তারপর বলা হয়, প্রতি দল থেকে দুই জন করে যেতে দেওয়া হবে। সেই হিসেবে ১১টি দলের ২২ জন যেতে পারত। কিন্তু ১৮ জনের বেশি যেতে দেওয়া হয়নি। কংগ্রেসের দুই মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এবং পবন খেরাকেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি ভেতরে। তারা তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা বাইরে বসে থাকেন। 
অভিষেক মনু সিংভি বলেন, আমরা মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে প্রশ্ন করেছি ২০০৩ সালের পর থেকে বিহারে যত ভোট হয়েছে, তাহলে কি সেটা নিয়ম মেনে হয়নি? সেই নির্বাচনগুলি কি অবৈধ? দ্বিতীয় বিষয় হলো, বিশেষ সার্বিক সংশোধন বা এসআইআর করার হলে জুনের শেষে এসে করার কথা বলছেন কেন? কেন জানুয়ারি মাসে বা গত ডিসেম্বরেই এই পদক্ষেপ করেননি? পৌঁনে ৮ কোটি ভোটারের জন্য এত বড় পদক্ষেপ কীভাবে এক মাসের মধ্যে করা সম্ভব? তারপর আপত্তি সংশোধনের জন্য আরও দুই-তিন মাস লাগবে। বিশেষ করে বর্ষার সময়ে বিহারে এই কাজ করা অসম্ভব। আধার, রেশন কার্ড ইত্যাদিকে বৈধ নথি হিসেবে মানবেন না বলছেন! তার বদলে জন্মের শংসাপত্র চাইছেন। বিপুল অংশের গরিব, পিছিয়ে পড়া অংশ, সংখ্যালঘুদের এই নথিপত্র থাকেও না, তা এত অল্প সময়ের মধ্যে জোগার করতে তারা পারবে না। 
আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা নির্বাচন কমিশনকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবের চিঠি নির্বাচন কমিশনের কাছে দিয়ে এসেছি। মানুষকে বেদখল করার জন্য, ভোট দিতে না দেওয়ার জন্য এই ষড়যন্ত্র চলছে। বিহারের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ বাইরে থাকে। তাদের টার্গেট করা হয়েছে যাতে ভোট দিতে না পারে। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে যা করা হয়নি, তা হঠাৎ ভোটের মুখে করার সিদ্ধান্ত কেন, জবাব দিতে পারেনি কমিশন। এই কাজ করার জন্য কমিশন কর্মচারী পাবে কি না, সেটাও বলতে পারেনি। তিনি বলেন, গরিব গুর্বো মানুষের কাছে এত নথিপত্র যত্নে সংরক্ষিত থাকে না। বিশেষ করে প্রত্যেক বছর বিপুল অংশ বানভাসী হন। মনোজ ঝা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কারোর ইচ্ছায় এই কাজ করার পরিকল্পনা করে থাকলে সেখান থেকে সরে আসুন। ভোটের অধিকার কাড়ার চেষ্টা হলে সড়কেই জনঢেউ উঠবে। 
সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, কমিশনের এই পদক্ষেপকে বিহারের মানুষ নাম দিয়েছেন ‘ভোটবন্দি’। যেভাবে নোটবন্দি করে গরিবের পেটে লাথি মারা হয়েছিল, সেই কায়দাতেই এই সংশোধন হচ্ছে। যাকে সাধারণ মানুষ ভোটবন্দি বলছেন। বিহারে গরিব মানুষের কাছে নথিপত্র বলতে আধার, ভোটার কার্ড, জব কার্ড। যুবকদের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি থাকে। এইগুলিকে মান্যতা দিতে নারাজ কমিশন। কমিশনের ভূমিকা সন্দেহজনক বলে তিনি জানিয়ে দেন ভোটের অধিকার কাড়ার চেষ্টা কোনোভাবেই মানা হবে না। এদিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিআই (এম), সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, আরজেডি, সমাজবাদী পার্টি, এনসিপি-এসপি সহ বিহারের আরও কিছু দল।

Comments :0

Login to leave a comment