অনিমেষ মিত্র
পরাধীন ভারতবর্ষে ইংরাজ আমলে তৈরি হওয়া আলিপুর টেলিকম ফ্যাক্টরি হেরিটেজ বিল্ডিং হিসাবে পরিচিত। কিন্তু আজ বিজেপি শাসনে ক্রোনি ক্যাপিট্যালিজমের লোভ-লালসার হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না হেরিটেজ বিল্ডিং তকমাধারী এই সম্পত্তি। ইংরেজ আমলে এই কারখানা তৈরি হয়েছিল সিপাহী বিদ্রোহের সময়। বিদ্রোহ দমনে সৈন্য চলাচলের সুবিধার্থে যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসাবে টেলিগ্রাফ সদ্য চালু হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সারানোর কাজে প্রাথমিকভাবে এই কারখানার গোড়াপত্তন হয় টেলিগ্রাফ ওয়ার্কশপ নামে। তারপর টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন ব্যবস্থা চালু হলে তার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ শুরু হয়। স্বাধীনতার পর টেলিফোন এবং টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা প্রসারিত হলে এখানে টেলি যন্ত্রাংশ উৎপাদন বাড়তে থাকে। কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মচারী এই কারখানায় যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ দপ্তর দু’ভাগ হলে এই কারখানার নামকরণ হয় টেলিকম ফ্যাক্টরি। ২০০০ সালের অক্টোবর মাসে টেলিকম দপ্তর কর্পোরেশনে পরিণত হলে বিএসএনএল এই কারখানা পরিচালনার দায়িত্ব পায়। সময়ের প্রয়োজন মতো এই কারখানা আধুনিক যন্ত্র উৎপাদনও করতে থাকে। কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্রে রেস কোর্সের উলটোদিকে অবস্থিত ১৬ একর জায়গা জুড়ে এই কারখানাতে এখনও উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। কিন্তু টেলি যোগাযোগ ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটে চলেছে সে অনুযায়ী কারখানাতে আধুনিকীকরণ করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি অনুসারে এই কারখানার সব রকম উৎপাদন বন্ধ করে বাইরে থেকে যন্ত্রাদি কিনে কোম্পানির পরিষেবা চালু রাখা হচ্ছে।
টেলি যোগাযোগের ব্যবস্থা ও আলিপুর টেলিকম ফ্যাক্টরি
কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্রে, রেসকোর্সের বিপরীতে ১৬ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই কারখানার বেশির ভাগ অংশই হেরিটেজ হিসাবে সংরক্ষনের আওতায় থাকলেও ভারত সরকারের এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএল ম্যানেজমেন্ট ঐতিহ্যপুর্ণ কারখানাটির সরকারি তকমায় শেষ পেরেক পুঁততে চলেছে। এখনো কিছু উৎপাদন হয় এখানে। বিশেষ করে পিএলবি পাইপের ডাক্ট। এই উৎপাদনটির চাহিদাও আছে। বাজার দর এবং আয়ও যথেষ্ট। অন্যান্য কিছু উৎপাদনও হয়ে থাকে। প্রায় ১০০ জন কর্মচারী এখনো কাজ করেন। কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৪০। তাসত্ত্বেও এই ফ্যাক্টরিকে বিক্রয় করার লক্ষ্যেই গত ১৭ জানুয়ারি দিল্লিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপ লাইন এ অর্থ জোগানের লক্ষ্যেই গঠিত হয়েছিল ন্যাশনাল ল্যান্ড মানিটাইজেশন কর্পোরেশন এবং তার পক্ষ থেকে ফ্যাক্টারি বিক্রি করার টেন্ডার প্রক্রিয়ার নোটিস জারি করা হয়।
প্রতিবছরে ২০,০০০ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে অর্থমন্ত্রক ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপ লাইন গঠন করার মধ্য দিয়ে। বিএসএনএল সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও রাষ্ট্রায়ত্ত দপ্তরে পর্যায়ক্রমে এই কাজ শুরু করেছে এনএলএমসি। তৃতীয় পর্যায়ে তাদের টার্গেট এখন আলিপুর টেলিকম ফ্যাক্টরি। মূলত জমি হাঙরদের কাছে লোভনীয় অফারে এই জায়গা বিক্রি করতে চায় মোদী সরকার। দিল্লি থেকে সরকারি আদেশ জারি করা হয় ১৫ জানুয়ারি। আত্মসমর্পণ করে বিএসএনএল কর্তৃপক্ষ। তারাও ৭ এপ্রিল সরকারি আদেশ জারি করে জানিয়ে দেয় কর্মচারী-শূন্য করতে হবে এই কারখানা। বিএসএনএল-কে জমির স্বত্ব ও অধিকার ছাড়তে হবে। দখলদারি নেবে কর্পোরেট-লালিত নতুন ঠিকাদার ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। বন্ধ হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া বিএসএনএল দপ্তর। প্রসঙ্গত এ কথা উল্লেখযোগ্য যে, প্রায় চার লক্ষ শ্রমিক কর্মচারী অফিসার নিয়ে ২০০০ সালে পথ চলা শুরু হয়েছিল বিএসএনএল’র। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিষেবামূলক সরকারি দপ্তর থেকে হাত ওঠাও নীতির ব্যাপক রূপায়ণের কারণে আজ বিএসএনএল’র কর্মী সংখ্যা কম বেশি ৬০ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে। শূন্যপদের অবলুপ্তি, নিয়োগ বন্ধ ও ভিআরএস নীতি কার্যকরী করার মধ্য দিয়ে বিএসএনএল আজ এই সঙ্কটে ভুগছে।
আরও লাখ খানেক ক্যাজুয়াল ও ঠিকা কর্মী দিন গুজরান করতো এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় শ্রম নিবেশ করে। সরকারের লক্ষ্য সাধনে বিএসএনএল সিদ্ধান্ত নিয়েছে একে একে সারা ভারত জুড়ে গড়ে ওঠা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, কারখানা সবই বন্ধ করবে। সে জায়গায় গড়ে উঠবে আকাশচুম্বী রিয়েল এস্টেট। আয় কমবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএসএনএল, লাভ করবে ব্যক্তিমালিক, পুঁজিপতি গোষ্ঠী। তারই সুন্দর পরিকল্পনা ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইন (National Monitisation Pipeline), যার বর্তমান টার্গেট আলিপুর টেলিকম ফ্যাক্টরি।
১৮৫৫ সালে দেশে টেলিযোগাযোগের সূচনা পর্বে আলিপুর টেলিকম ফ্যাক্টরির যাত্রা শুরু। মোদী সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ধ্বংসের নীতিতে তা আজ অবলুপ্তির পথে। এর আগে এভাবেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বজবজ রোডে অবস্থিত টেলিকম ফ্যাক্টরিকে। একমাত্র বামপন্থীরা ছাড়া কেউ এর প্রতিবাদ করেনি। বামপন্থীদের লড়াইয়ের কারণে এখনও সচল খড়্গপুর টেলিকম ফ্যাক্টরি। অতীতে এক সময় কর্মচারী সংগঠন বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের দাবি মতো ইউনিয়ন নেতৃত্ব এবং কর্তৃপক্ষর সম্মিলিত প্রতিনিধিরা টেলিকম ফ্যাক্টরিগুলি পরিদর্শন করে আধুনিকীকরণ ও পুনর্গঠনের পক্ষে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল বিএসএনএল ম্যানেজমেন্টের কাছে। দাবি উঠেছিল বিকল্প উৎপাদন প্রক্রিয়াতে যুক্ত করতে হবে কলকাতা সহ অন্য ফ্যাক্টরিগুলিকে। বাজারে চাহিদা আছে ব্যাটারি, টাওয়ার, অ্যান্টেনা, সিম কার্ড — এরকম বহু কিছু উৎপাদন প্রক্রিয়াতে যুক্ত করতে ফ্যাক্টরিগুলিকে আধুনিকীকরণের দাবি তুলেছিল একমাত্র স্বীকৃত বামপন্থী ইউনিয়ন বিএসএনএলইউ। কিন্তু সরকার নিজেই চাইছে এই বিপুল সম্পত্তি বিক্রয় করতে। ১৪০ কোটি দেশের বড় জনগণের বড় চাহিদা তৈরি হয়েছে এই টেলিকম ব্যবসায়। বিএসএনএল সহ চারটি বড় কোম্পানি এখন দেশের টেলি ব্যবসার সামনের সারিতে। কিন্তু মোদী সরকারের বদান্যতায় ৯০ শতাংশ গ্রাহকই আদানি, আম্বানি ও বহুজাতিক কোম্পানির মালিকাধীন অধীনে। সরকার নানাভাবে বিএসএনএল পরিষেবা উন্নতির পথে প্রতিবন্ধকতা নামিয়ে আনা সত্ত্বেও প্রায় ৯.৪ কোটি গ্রাহক পরিষেবা বিএসএনএল দিয়ে থাকে। এই পরিষেবার মান উন্নত করতে এই ফ্যাক্টরির পুনর্জীবন দেশে প্রকৃতভাবে মেক ইন ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিয়ে আরও কর্মসংস্থান সম্ভব করতে পারবে।
ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপ লাইন ও বিএসএনএল
এই মুহূর্তে দেশের টেলি পরিষেবা প্রদানকারী চারটি বড় কোম্পানির মধ্যে একটি হলো রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সংস্থা বিএসএনএল অথচ বিএসএনএল দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তি টেলিকম পরিকাঠামো সহ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত উৎপাদন ক্ষেত্রগুলি বেসরকারি উৎপাদকদের স্বার্থে বন্ধ ও বিক্রি করতে চায় বিজেপি সরকার। সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করার সুন্দর নাম ‘ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইন’ যা দেশের সরকারি দপ্তর ও রাষ্ট্রায়ত্ত দপ্তরের জমি, বাড়ি, পরিকাঠামো জলের দরে ব্যক্তিপুঁজি তথা কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতেই অর্থমন্ত্রক তৈরি করেছে ‘ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইন’। মোদী সরকার দ্বিতীয়-দফায় ক্ষমতায় আসার পরই ঘোষণা করেছিল ‘ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইন’ রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের অধিকারে থাকা জমি বাড়ি সম্পত্তি আর্থিক কাঠামোর এক বিশ্লেষক দলিল। এই দলিলেই নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল সরকারি রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পগুলির মধ্যে সামনের সারির নাম বিএসএনএল-কে। এই দলিলের প্রতি পাতাতেই উল্লেখ করা হয়েছে, কিভাবে বিএসএনএল দপ্তরের জমি, বাড়ি, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, স্টাফ কোয়ার্টার, টাওয়ার, অপটিক্যাল ফাইবার সহ বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির হাতবদল করতে চায় দেশের পুঁজিপতি গোষ্ঠীদেরকে। তাদের চোখে পড়ে কলকাতার বুকে অতীতের পিঅ্যান্ডটি (P&T) আমলে গড়ে-ওঠা টেলিফোন পরিকাঠামো সরবরাহকারী আলিপুর টেলিফোন ফ্যাক্টরি। যা মাটির ওপরে টাওয়ার ও মাটির তলায় কেবল তৈরির একমাত্র কারখানা ছিল। কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এরকম আটটি কারখানা গড়ে উঠেছিল। পুরানো দিনের টেলিফোন পোস্ট ও কেবলস দিয়ে শুরু করে আধুনিক যুগের মোবাইল সিমকার্ড পর্যন্ত উৎপাদন করার একমাত্র স্তম্ভ ছিল পিঅ্যান্ডটি’র এই কারখানা যা পরবর্তীকালে বিএসএনএল। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে সারাদেশে প্রায় আটটি এরকম ফ্যাক্টরি কাজ করে আসছিল, যার মধ্যে আমাদের রাজ্যে ছিল তিনটি— আলিপুর, গোপালপুর এবং খড়্গপুর। সর্বশেষ খড়্গপুরে টেলিফোন ফ্যাক্টরি গড়ে তুলতে জমি দিয়ে সাহায্য করেছিল সেই সময়ে বামফ্রন্ট সরকার। সেটা ছিল পুরানো দিনের কথা। কিন্তু বর্তমানে উদারীকরণের শুরুর দিকে বিজেপি শাসনে, অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বের বিএসএনএল গঠনের পর খড়্গপুর টেলিফোন ফ্যাক্টরিকে বিক্রি করার সরকারি প্রচেষ্টা হয়েছিল, যার মোকাবিলা করেছিল দপ্তরের ট্রেড ইউনিয়নগুলি ও রাজ্যের সাধারণ মানুষ। পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার। ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে ধারাবাহিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে রক্ষা পেয়েছিল খড়্গপুর ফ্যাক্টরি— যা আজও চালু আছে। প্রযুক্তিগত পরিরর্তনকে মাথায় রেখে সেই সময় ট্রেড ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে ফ্যাক্টরি আধুনিকীকরণের দাবি উঠেছিল। কর্ণপাত করেনি দেশের কেন্দ্রীয় সরকার তথা কর্তৃপক্ষ। ফ্যাক্টরিতে পুঁজি বিনিয়োগ বন্ধ করা হয়েছিল। ধাক্কা খেয়েছিল উৎপাদন প্রক্রিয়া। শুধুমাত্র ব্যক্তি-পুঁজিপতিদের ব্যবসা ও মুনাফা করার লক্ষ্যেই এই ভূমিকা পালন করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের এই নীতির প্রয়োগের কারণেই আনা হয়েছিল জাতীয় টেলিকম নীতি। কংগ্রেস জমানাতে যার নাম ছিল নয়া-টেলিকম নীতি, যা বিজেপি শাসনে জাতীয় টেলিকম নীতি নিয়ে কর্পোরেট টেলি-ব্যবসায়ীদের সাহায্য করতে গুরুত্ব ভুমিকা পালন করেছিল। আমরা মনে করি এই নীতির রূপায়ণের মধ্য দিয়েই এরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প হিন্দুস্তান কেবলসের ঝাঁপ চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। টেলিযোগাযোগের পরিকাঠামো গড়ে তোলবার নিজস্ব সম্পত্তি, যা মাটির তলার কেবলস থেকে শুরু করে মাটির উপরে টাওয়ার তৈরি করার একমাত্র কারখানা ছিল।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জন্য রাষ্ট্রের পুঁজি জোটে না। ফলে, সরকারি ক্ষেত্র বেসরকারি উৎপাদকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ পায় না। সরকারি ক্ষেত্র উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মানের সঙ্গে বেসরকারি উৎপাদকেরাও প্রতিযোগিতায় যেতে চায় না। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার আড়ালে থেকেই বাজার দখল করে। তাই রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেবল কারখানা হোক, আর কলকাতার টেলিকম ফ্যাক্টরি হোক এদের উৎপাদন বন্ধের ফরমানে, পুঁজি না দিয়ে রাষ্ট্র বেসরকারি উৎপাদনেরই সহায় হয়। প্রতিযোগিতা হয় না। টেলিকম ফ্যাক্টরি সেভাবেই মরণের ফরমান পেয়েছে। শ্রমিক কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধে। সরকার তথাপি এসএনএল’র সিদ্ধান্তে তাই এখানকার কর্মীরা ক্ষুব্ধ। তাঁরা পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাঁদের দাবি এই কারখানাটিকে পুণরায় উৎপাদনশীল করে তুলতে পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে। নতুন প্রযুক্তির পণ্য উৎপাদন এই কারখানায় করতে হবে এবং সেজন্য কর্মীদেরও প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দিয়ে উপযুক্ত করে তুলতে হবে। রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট শাখা খুলতে হবে। প্রযুক্তির প্রয়োজনে উপযুক্ত সংস্থার সঙ্গে কোলাবরেশন করতে হবে। টেলিকম ফ্যাক্টরি বন্ধ না করে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কেন্দ্রীয় সরকার ফ্যাক্টরি পুনর্গঠন করতে পারতো। শিল্পের ট্রেড ইউনিয়নগুলি ও কর্মচারীরা দাবি উত্থাপন করেছে যে, কারখানার জমি ও কাঠামো বিক্রি করা চলবে না। ফ্যাক্টরিতে টেলিফোন সরঞ্জাম তৈরির উৎপাদন বজায় রাখতে হবে। যা আজকের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রযুক্তির পক্ষে সহায়ক। বিকল্প পদ্ধতিতে পুনরায় উৎপাদন শুরু হলে অনেক কর্ম সংস্থানের সম্ভাবনা আছে।
আরও একটিবিষয়ে প্রাসঙ্গিক যে, রাজ্যে টেলিকম ফ্যাক্টরি বন্ধ করার ফরমান জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার কিন্তু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তার কোনও প্রতিবাদ করা হয়নি। কর্মচারীরা মনে করে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের পক্ষে নীতিগত বিরোধিতার প্রশ্ন তুললে কেন্দ্রীয় সরকার চাপে পড়তো। কর্মচারীদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল রাজ্য সরকারের। কিন্তু যেহেতু উদারীকরণের নীতির পথেই চলছে এ রাজ্যের সরকার, তারাও বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের বেসরকারিকরণ করছে, তাই আলিপুর টেলিকম ফ্যাক্টরি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত মোদী সরকার গ্রহণ করলেও প্রতিবাদ করেননি রাজ্য সরকার।
এই পটভূমিকায় কলকাতার বুকে টেলিকম ফ্যাক্টরিতে কর্মচারীদের মরণ-বাঁচনের লড়াই সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। দিল্লির বিএসএনএল কর্পোরেট দপ্তরে ইতিমধ্যে প্রতিরোধ জানিয়েছে স্বীকৃত সংগঠন বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন। রাজ্যজুড়ে বিএসএনএল কো-অর্ডিনেশন কমিটি সংগঠনের পতাকা তুলে নিয়মিত অনিয়মিত ও পেনশনার্স বিএসএনএল কর্মচারীরা রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। প্রকৃত পক্ষে এ লড়াই যেমন ফ্যাক্টরি রক্ষার লড়াই, শিল্প রক্ষা ও বিএসএনএল রক্ষার লড়াই। আগামী ৯ জুলাই ধর্মঘটে দেশরক্ষা ও শিল্প রক্ষা দাবির সাথে যুক্ত হবে ফ্যাক্টরি রক্ষার আন্দোলনও। এই আন্দোলনকে বৃহত্তর পরিষরে বিকশিত রাজ্যের জনসাধারণের কাছেও আবেদন জানিয়েছে বিএসএনএল কো-অর্ডিনেশন কমিটি।
###প্রকৃত পক্ষে এ লড়াই যেমন ফ্যাক্টরি রক্ষার লড়াই, শিল্প রক্ষা ও বিএসএনএল রক্ষার লড়াই। আগামী ৯ জুলাই ধর্মঘটে দেশরক্ষা ও শিল্প রক্ষা দাবির সাথে যুক্ত হবে ফ্যাক্টরি রক্ষার আন্দোলনও।
###যেহেতু উদারীকরণের নীতির পথেই চলছে এ রাজ্যের সরকার, তারাও বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের বেসরকারিকরণ করছে, তাই আলিপুর টেলিকম ফ্যাক্টরি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত মোদী সরকার গ্রহণ করলেও প্রতিবাদ করেননি রাজ্য সরকার।
Comments :0