Post Editorial

উপমহাদেশে সন্ত্রাসবাদ মার্কিন মদতেই

উত্তর সম্পাদকীয়​

সায়ন চক্রবর্তী

পহেলগামে পাকিস্তানী সন্ত্রাসবাদী হামলার পালটা হিসেবে এক পক্ষকাল ভারত সরকারের নীরবতার পর শুরু হওয়া ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গে পরবর্তীকালে ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত ভারতের ডিফেন্সঅ্যাটাশে ক্যাপ্টেন শিবকুমার প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন ‘ভারত কিছু যুদ্ধ বিমান খুইয়েছে’।
২০১৯ সালে পুলওয়ামায় পাকিস্তানী সন্ত্রাসবাদী হামলা, ৪০ জন সেনা জওয়ানের বেঘোরে মৃত্যু— উদগ্র মুসলিম বিদ্বেষ ও জাতীয়তাবাদের উত্তুঙ্গ হাওয়ায় ভর করে দ্বিতীয়বারের জন্য ‘মোদী সরকারের’ ক্ষমতায় আসা পরবর্তী সময়ে তৎকালীন জম্মু-কাশ্মীরে নিযুক্ত রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক প্রকাশ্যেই একাধিকবার মিডিয়ায় জানিয়ে ছিলেন এধরনের সন্ত্রাসবাদী হামলার বিষয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ‘ইনপুট ছিল’ যা নিয়ে বারবার কেন্দ্রের সরকারকে আগাম সতর্ক করা সত্ত্বেও তাকে ‘চুপ থাকার’ পরামর্শ দেওয়া হয়।
উল্লিখিত প্রথম ঘটনার সাথেই সম্পর্কযুক্ত পাকিস্তানী সেনা ব্যবহৃত চীনা যুদ্ধবিমান সংস্থা AVIC ছাঙদুর স্টক প্রাইস সংঘর্ষ চলাকালীন পরপর দু’দিনে প্রায় ১৭.৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে যায়, পক্ষান্তরে ভারতীয় সেনা ব্যবহৃত রাফাল যুদ্ধ বিমানের সংস্থা দাসাউ অ্যাভিয়েশনের স্টক প্রাইস ইউরোপিয়ান এক্সচেঞ্জে প্রায় ৭ শতাংশ পড়ে যায়।
এখন আন্তর্জাতিক স্তরের ওয়াকিবহাল মহল, যুদ্ধবাজ অস্ত্র ব্যবসায়ী লবি খুঁটিনাটি তথ্য বা বিশদ ঘটনা কতটা কি জানে বা জানাতে চায় সেকথা আলাদা হলেও ভারতের সংসদে চলতি বাদল অধিবেশনে বিরোধী ব্লক ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে স্বচ্ছ ও বিস্তারিত আলোচনা চেয়েছিল, যার জবাবে সরকার পক্ষের তরফে শেষ বক্তা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমস্ত জরুরি প্রশ্ন এড়িয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই প্রসঙ্গান্তরে ভাষণ দিয়েছেন। ১৪ বার জওহরলাল নেহরুর নামে সমালোচনা করলেও যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বারংবার একাধিক মিডিয়ায় এবং নিজের ‘ট্রুথ’ হ্যান্ডেলে দাবি করেছেন তার মধ্যস্থতায় ভারত-পাক বিবাদ থেমেছে সেই বিষয়ে গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে দেশবাসীর প্রশ্ন থাকলেও তিনি একটা শব্দও এক্ষেত্রে উচ্চারণ করেননি।
ঘটনাক্রম ভারতের সার্বভৌমত্ব, স্বকীয়তা, সেনাবাহিনীর স্বাধীনতা ও ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক নীতির স্বাধীনতার প্রশ্নে উদ্বেগজনক।
সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে লাহোর-করাচি প্রায় দখল সহ পাক সেনা প্রধান আসিম মুনিরের গোপন বাঙ্কারে লুকানো অথবা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মতন গুজব বিজেপি’র আইটি সেল সহ দেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া পর্যন্ত ছড়িয়েছিল, অথচ সেই আসিম মুনিরই সংঘর্ষ বিরতির পর পাকিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেনা আধিকারিক হিসেবে ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত হয়। এই আসিম মুনিরই ২০০১ সালের পর একমাত্র সেনা প্রধান যে পারভেজ মুশাররফের পর দীর্ঘ ২৪ বছর বাদে গত ১৮ জুন মার্কিন রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে আমেরিকার ‘হোয়াইট হাউসে’ প্রবেশ করে এবং ‘সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধের পরিস্থিতিকে থামিয়ে দেওয়ার’ জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার আহ্বানও জানায়!
তারপরেও এসব নিয়ে ভারতের সংসদে নীরব মোদী!
বিশ্ববাজারে ঋণে-অনুদানে ন্যূব্জ পাকিস্তান বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ভারতের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় কোন সাহসে?
শেষ অর্থবর্ষের হিসাব অনুযায়ী বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ মিলিয়ে প্রায় ২৮০ বিলিয়ন ডলার ঋণের বোঝা পাকিস্তানের ঘাড়ে, যার মধ্যে শুধু বহির্বিশ্বের কাছেই ঋণের পরিমাণ ১৩১ বিলিয়ন ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১০ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা।
গোটা পাকিস্তান জুড়েই চরমে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ, চড়া মূল্যবৃদ্ধির আগুন সাথে স্বাধীন বালুচিস্থান-স্বাধীন পাখতুনিস্তানের দাবিতে সরকার ও সেনা বিরোধী সশস্ত্র সংঘর্ষ – এই সব নিয়ে সেদেশজুড়ে চরম অরাজক পরিস্থিতি। তারপরেও পাকিস্তান হুকুমতের যুদ্ধং দেহি আস্ফালন কেন? কার মদতে? 
ঠান্ডা যুদ্ধের আবহাওয়ায় ১৯৫৯ সালেই পাকিস্তান তাদের পেশোয়ার বিমান ঘাঁটি ভাড়ায় তুলে দিয়েছিল মার্কিন সেনার হাতে। ‘ক্যাম্প বাদাবর’ ব্যবহার করে মার্কিন ইউ-২ গুপ্তচর বিমান মোতায়েন ছিল সোভিয়েত সহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ওপর নজরদারি চালানোর জন্য। ঠিক তার আগের বছর, ১৯৫৮ সাল থেকে পাকিস্তানের জন্য ঋণ বরাদ্দ শুরু করে আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থা (আইএমএফ)। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত ২৮ বার ঋণ মঞ্জুর হয়েছে। যদিও ১৯৬৯ সালের পর আর মার্কিনী সেনার তরফে পেশোয়ার বিমান ঘাঁটি ব্যবহারের চুক্তি নবীকরণ হয়নি, কিন্তু অর্থের জোগান বজায় রয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যখন সোভিয়েতের লালফৌজ আফগানিস্তানের নাজিবুল্লা সরকারকে সহায়তা করছে ঠিক তখনই আবার শুরু হয় ‘অপারেশন সাইক্লোন’— মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ’র অন্যতম ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদী গোপন অপারেশন। 
জিমি কার্টার থেকে রোনাল্ড রেগান— ১৯৭৯ থেকে ১৯৯২, আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্টের হিসেবে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার এবং বেসরকারি মতে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার (তৎকালীন সময়ে) ব্যয় করেছিল পাকিস্তানের সেনা, গুপ্তচর সংস্থা (আইএসআই), সরকারের হাত দিয়ে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদী মুজাহিদীন গোষ্ঠী তৈরি, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ ইত্যাদির জন্য। এসবই ছিল আসলে সোভিয়েত সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি। 
১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের পেশোয়ারে ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে ‘আল-কায়দা’র জন্ম এই অপারেশনের দৌলতে। ঠিক তার আগের বছর ১৯৮৭ তে মূলত ভারতীয় উপমহাদেশকে উপদ্রুত রাখা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ‘লস্কর ই তৈবা’র জন্মও এই ‘অপারেশন সাইক্লোন’ এর ফলে। 
সোভিয়েত পতন পরবর্তী ১৯৯২ সালের জানুয়ারিতে ‘সাইক্লোন’ সমাপ্তি উত্তর সময়, মার্কিন অর্থ ও অস্ত্রবলে পুষ্ট এই তামাম সন্ত্রাসবাদী মুজাহিদিন গোষ্ঠীর একটা অংশের মোল্লা মুহাম্মদ ওমরের নেতৃত্বে পাখতুন-কান্দাহারের ব্যাপক সংখ্যক ছাত্রদের দলবল সহ ‘তালিবান’ রূপে প্রকাশ আর বাকি অংশটা এই উপমহাদেশ সহ গোটা দুনিয়ার মহড়া নিতে ছড়িয়ে যায়, যার মধ্যে পাকিস্তান প্রভাবিত বেশ কিছু সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী কার্যত ভারতের দিকে পাখির চোখ করে নাশকতায় যুক্ত হয়ে পড়ে। 
এ ইতিহাস প্রমাণিত, এ ইতিহাস সর্বজনবিদিত যে ১৯৭১ এর যুদ্ধে সোভিয়েত সেনার প্রভূত সাহায্য ভারতের সাথে ছিল পাকিস্তানকে থেকে দু’টুকরো করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার প্রশ্নে। বস্তুত বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ঢুকে পড়া মার্কিন রণতরীর সপ্তম নৌবহরকে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করার বদলে ফিরে চলে যেতে হয় সোভিয়েত নৌ বাহিনীকে পাহারায় থাকতে দেখে। 
ফলে সোভিয়েত-ভারত থেকে আজকের রুশ-ভারত জুটি, সেনা নিয়ন্ত্রিত পাকিস্তানী হুকুমত গোষ্ঠীগুলির বরাবরের হতাশার কারণ যেমন হয়েছে, ঠিক তেমনি দক্ষিণ এশিয়া সহ এই উপমহাদেশের বিপুল বিস্তৃত অর্থনীতির বাজারকে দখল ও নিয়ন্ত্রণ করার মার্কিনী পুঁজিবাদের পথে অন্তরায় হয়েছে। 
সোভিয়েত ভাঙার পর দুনিয়া জুড়ে চলা ‘উদার অর্থনীতি’র হাওয়া ভারতের ওপর দিয়েও বয়ে গেছে।
বাজপেয়ী সরকারের গ্যাট চুক্তি সহ উদার অর্থনীতির বল্গাহীন ষাঁড়ের পিঠে চড়ে বসা ভারতের অর্থনীতি ক্রমশ মার্কিন পুঁজিবাদের উপর নির্ভরশীল হতে থাকে। তখন থেকেই ব্যাপকহারে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ ও এফডিআই’র ক্ষেত্র প্রস্তুত করা সহ একের পর এক ‘সংস্কার’ শুরু হয়। 
আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার, বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতন সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে এই উপমহাদেশ সহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উদগ্র আমেরিকান পুঁজিবাদ যেমন ধারাবাহিকভাবে পাকিস্তানী সন্ত্রাসবাদকে মদত দিয়ে ব্যবহার করে সামরিকভাবে ভারতকে মার্কিন মুখাপেক্ষী হতে বাধ্য করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনই অর্থনৈতিকভাবে প্রায় দেড়শো কোটির এই দেশকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল ফেঁদে চলেছে— যার সাম্প্রতিকতম নমুনা হলো শুল্ক হুমকি।
‘ইন্টারন্যাশনাল নর্থ সাউথ ট্রেড করিডোর’ (আইএনএসটিসি) মারফত আফগানিস্তান-ইরান-রাশিয়া-বেলারুশ হয়ে সরাসরি ইউরোপের সাথে ব্যবসার জন্য যে ৭২০০ কিলোমিটার সড়ক, রেল ও জাহাজ পথের প্রস্তাব যা চলতি সুয়েজ ক্যানেল হয়ে ইউরোপ পৌঁছানোর চেয়ে কুড়ি পঁচিশ দিন কম সময়ে এবং প্রায় ৩০–৪০ শতাংশ কম খরচে হয়ে যাওয়ার চুক্তি হয়েছিল, সেখানেও আমেরিকার তীব্র আপত্তি। অন্যদিকে ইরান ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে এই আমেরিকাই ভারতের স্বার্থ বিঘ্নিত করে কার্যত বাধ্য করছে মার্কিন পুঁজির স্বার্থবাহী ‘ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডরের’ (আইএমইসি) মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে কম সুবিধা ও কম লাভে বাণিজ্য পথ গ্রহণ করতে। 
ইরান-পাকিস্তান-ইন্ডিয়া (আইপিআই) এলপিজি গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে অত্যন্ত সস্তায় ভারতের বাজারে জ্বালানি গ্যাস আনার পথ সরাসরি মার্কিন চাপে যেমন বন্ধ করতে হইয়েছে, তেমনই মার্কিন মদতে চলা পাকিস্তানী সন্ত্রাসবাদী-সেনা উপদ্রবের কারণে পাকিস্তান হয়ে সহজে আসা এই পাইপলাইন প্রজেক্ট বাতিল করতে হয় ভারতকে। 
বর্তমানে আমেরিকার গ্যাসের সর্ববৃহৎ খরিদ্দার ভারত, অন্যদিকে কুয়েতের পর আমেরিকার থেকেই সবচেয়ে বেশি এলপিজি আমদানি করে ভারত। ধারাবাহিকভাবে মার্কিন অর্থনীতির স্বার্থে কাজ করতে ভারতকে বাধ্য করে চলা আমেরিকার নীতির বদল হয়নি, বরং ছলে বলে কৌশলে ভারতকে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে ব্যবহার করার পাশাপাশি ভারতের অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত সুরক্ষার ব্যাপারেও মার্কিনী হস্তক্ষেপ বাড়তে বাড়তে আজ দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ কাশ্মীরের বিষয়েও কার্যত ভারত সরকারকে চুপ করিয়ে রেখে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ভাষণ দিচ্ছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফা ভাবে ভারত-পাক সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাচ্ছে আর আশ্চর্যজনকভাবে বিজেপি সরকার তাতে ‘মৌন’ থেকে সম্মতি দিচ্ছে। দেশের সামরিক নীতি সহ সার্বভৌমত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ছে। 
‘অনুপ্রবেশকারী’ ভারতীয়দের হাতে-পায়ে শিকল বেঁধে সামরিক বিমানে করে যে আমেরিকা অমানবিকভাবে তাদের ভারতে ফেরত পাঠায়, সেই আমেরিকাই আবার পাকিস্তান সেনা সরকারের মদতে সন্ত্রাসবাদীরা ভারতকে যখন রক্তাক্ত করছে তখন সন্ত্রাসবাদী নিধনে উদ্যত ভারতীয় সেনাকে নিরস্ত করতে ভূমিকা গ্রহণ করছে।
গত ২২ এপ্রিল পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী হামলায় বৈশ্বরণ ভ্যালিতে ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের প্রাণহানি হওয়ার ঠিক ৪ দিনের মাথায় পাকিস্তান অর্থ মন্ত্রকের ব্যবস্থাপনায় ইসলামাবাদে ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিনান্সিয়াল’ (ডাবলিউএলএফ) নামক মার্কিন ক্রিপ্টো কোম্পানির সাথে মাত্র তার এক মাস আগে তৈরি হওয়া ‘পাকিস্তান ক্রিপ্টো কাউন্সিলের’ (পিসিসি) চুক্তি হয়। এই বৈঠকে আশ্চর্যজনক ভাবে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিল সেনাপ্রধান সেই আসিম মুনিরও!
পিসিসি’র ঘোষণা এবং পাকিস্তানকে দক্ষিণ এশিয়ার ‘ক্রিপ্টো রাজধানী’ করার কাজে বেছে নিয়ে অর্থ-পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে চলেছে যে মার্কিন সংস্থা (ডাবলিউএলএফ) সেই কোম্পানির ৬০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা আমেরিকান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুই ছেলে এরিক ও ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের হাতে। 
এই চুক্তির ১০ দিনের মাথায় মে মাসের ৭-৮ তারিখ যখন ভারতীয় সেনা পাকিস্তানী সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলি নিশ্চিহ্ন করার জন্য ড্রোন হামলা চালাচ্ছে, ভারতের সেনা জওয়ান শহীদ হচ্ছেন, তখনই ‘ব্যবসা বন্ধ’ করার মার্কিন রাষ্ট্রপতির হুমকির পর কার্যত ভারতীয় সেনাকে থেমে যেতে হয়!
মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের নির্দেশে ভারত সরকার তার সেনা অভিযান নিয়ন্ত্রণ করবে?
যে পাকিস্তান তার সেনা, তার জমি ব্যবহার করতে দিয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ভারতকে রক্তাক্ত করবে সেই পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করার কাজে ভারতকে মার্কিন রাষ্ট্রপতির অঙ্গুলি হেলনে থমকে যেতে হবে কেন?
দুনিয়াজুড়ে অস্ত্র ব্যবসা করে বড়লোক হওয়া আমেরিকার থেকে গত দশ বছরে এক পয়সার যুদ্ধাস্ত্র না কেনা পাকিস্তানকে ভারতের সাথে সেনা সংঘর্ষের মাঝেই হঠাৎ আইএমএফ থেকে ১.৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহ তাৎক্ষণিক ভাবে আরও ১ বিলিয়ন ডলার আর্থিক প্যাকেজ মঞ্জুর করা হয় কোন উদ্দেশ্যে? 
গত দশ বছরে ভারত তার চিরকালীন ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ রাশিয়ার থেকে অস্ত্র আমদানি কমিয়ে ধাপে ধাপে ফ্রান্স, ইজরায়েল ও আমেরিকার থেকে মোট আমদানিকৃত অস্ত্রের ৫৫ শতাংশ কিনেছে।
আইএমএফ’র খাতায় সর্বোচ্চ প্রায় ১৭ শতাংশ ভোট শেয়ারের অধিকারী আমেরিকা তার তাঁবেদার এই সংস্থার মাধ্যমে গত অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য ঘুরপথে অর্থের জোগান দিয়ে যাচ্ছে, ভারতের সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত করছে আবার অন্যদিকে ভারতকে বাধ্য করছে সর্বক্ষেত্রে মার্কিন নির্ভরশীলতা বাড়াতে।
যে আমেরিকান অর্থ ও অস্ত্রবলে ঐতিহাসিক ভাবে পাকিস্তানের হাত ধরে এই উপমহাদেশে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী, সন্ত্রাসবাদের জন্ম হলো সেই আমেরিকাই আবারও নতুন করে অর্থের জোগান বাড়িয়ে ভবিষ্যতের জন্য সন্ত্রাসবাদকে জিইয়ে রাখছে আর বর্তমান বিজেপি সরকার ভারতের চিরাচরিত সমস্ত বন্ধু দেশের সাথে সম্পর্ক শিথিল করে দেশের স্বকীয় অবস্থান পালটে সেই মার্কিন পুঁজিবাদের দালালির পথ আরও প্রশস্ত করে চলেছে।
মোদী সরকার মার্কিন নির্ভরশীলতার পথ ছেড়ে দেশের স্বার্থবাহী নীতি অনুসরণ না করলে পাক সন্ত্রাসবাদের ‘কোমর ভাঙার’ কাজ অধরাই থেকে যাবে।

Comments :0

Login to leave a comment