শুভাশিস দেব সরকার: হাওড়া
শ্রমজীবী মানুষের রোজগার এবং কাজের সুযোগ ক্রমশ কমছে, আর শাসকদলের নেতামন্ত্রীদের আয় ক্রমশ আকাশছোঁয়া হচ্ছে। তাদের খাটের তলায় টাকা, বাড়ি ভর্তি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। সোমবার সিআইটিইউ’র হাওড়া জেলা ১৬ তম সম্মেলন উপলক্ষে বাউড়িয়ায় প্রকাশ্য সমাবেশে এ কথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। কেন্দ্রের বিজেপি এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করে তিনি বলেছেন, ওদের নীতি আর দুর্নীতিতে বৈষম্য বাড়ছে, শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার বদলে কর্পোরেট মুনাফার বন্দোবস্ত করে দিচ্ছে বলে কর্পোরেট চাঁদা আর ইলেক্টোরাল বন্ডে বিজেপি আর তৃণমূলের তহবিল ভরছে। সেই টাকায় মানুষের অধিকার লুট থেকে ভোট লুটও করছে। বামপন্থীরা এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সমস্ত শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করছে।
সিআইটিইউ’র হাওড়া জেলা সম্মেলন উপলক্ষে এদিন বাউড়িয়া ফোর্ট গ্লস্টার গেটের সামনে শ্রমিক সমাবেশ হয়। সমাবেশে মহম্মদ সেলিম ছাড়াও ভাষণ দেন সিআইটিইউ’র পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি অনাদি সাহু, নবনির্বাচিত জেলা সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র অধিকারী। সভাপতিত্ব করেন সমীর সাহা। সমাবেশ শেষে শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী শ্রম কোডের প্রতিলিপি পোড়ানো হয়। গত শনিবার থেকে বাউড়িয়া সুরশ্রী সিনেমা হলে সিআইটিইউ’র হাওড়া জেলার ১৬ তম সম্মেলন শুরু হয়। এদিন সম্মেলন শেষে সমীর সাহাকে সভাপতি, সুমিত্র অধিকারী সাধারণ সম্পাদক ও কল্লোল মজুমদারকে কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত করে ১৫৫ জনের জেলা কাউন্সিল ও ৬৫ জনের জেলা ওয়ার্কিং কমিটি গঠিত হয়।
সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেন, সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, শিক্ষা চিকিৎসা ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের মজুরি বাড়ছে না। বরং কাজ না পেয়ে হাজার হাজার গরিব মানুষকে বাধ্য হয়ে অন্য রাজ্যে কাজের সন্ধানে যেতে হচ্ছে, তারপর আরএসএস বিজেপি’র ঘৃণার রাজনীতির শিকার হয়ে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে শেষে অনেকের দেহ কফিন বন্দি হয়ে নিজের বাড়িতে ফিরছে। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের কেউ এই পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষায় কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
তিনি বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বড় বড় পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষা করতে ব্যস্ত। তাদের মুনাফা বাড়াতে শ্রমিকদের সুরক্ষার আইন বদলে শ্রমকোড নিয়ে এসেছে। শ্রমিকদের ওপর কাজের চাপ বাড়ানো হচ্ছে, শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজের অর্জিত অধিকারের বদলে ১০ ঘণ্টা জোর করে কাজ করানো হচ্ছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির বালাই নেই, তাঁদের জীবিকার নিরাপত্তাও কেড়ে নিয়েছে। আর এই সব কিছুর বিরুদ্ধে শ্রমিকরা যাতে প্রতিবাদ করতে না পারে তার জন্য শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারটাও কেড়ে নিতে চাইছে বিজেপি ও তৃণমূল পরিচালিত সরকার।
শ্রমিকরা যাতে রুটিরুজির প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে না পারে তার জন্য তাঁদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ঘটানোর অভিযোগ করে সেলিম বলেছেন, সারা দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়াচ্ছে আরএসএস বিজেপি। এরাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ভাঙতে তৃণমূলকে সামনে রেখে ধর্মের নামে রাজনীতি করছে আরএসএস। ধর্মের ভিত্তিতে, ভাষার ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে তারা। নাগপুরের কর্মসূচি রূপায়ণ করছে তৃণমূল, খেটে খাওয়া মানুষকে শ্রমের মূল্য না দিয়ে মন্দির মসজিদ দেখিয়ে ভাগাভাগি করে দুর্বল করে রাখতে চাইছে। লাল ঝান্ডা শক্তিশালী হলে শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য বাঁচবে, তাঁদের অধিকার রক্ষার আন্দোলন তীব্র হবে, বাংলা বাঁচবে, তবে আগামী দিনে দেশ বাঁচবে।
সেলিম বলেন, আরএসএস’র হাত মাথায় নিয়ে আমাদের রাজ্যে সর্বত্র দুর্নীতি চালাচ্ছে তৃণমূল, সরকারি স্কুল মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমছে, স্কুলছুট বাড়ছে। আর এসবের থেকে নজর ঘোরাতেই একদল বলছে হিন্দুরা বিপদে, আরেকদল বলছে মুসলিমরা বিপদে। আসলে বিপদে সমস্ত শ্রমজীবী মানুষ।
সমাবেশে অনাদি সাহু বলেন, সারা দেশে শ্রমজীবী মানুষের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে। পুঁজিপতিদের স্বার্থে শ্রমিকদের অর্জিত অধিকার কেড়ে নিতে শ্রম কোড চালু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক নীতির ফলে একদিকে বেকাররা কাজ পাচ্ছেন না, অন্যদিকে নতুন করে কাজ হারিয়ে বেকার হচ্ছেন শ্রমিকেরা। এরাজ্যেও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি হচ্ছে না, বরং শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষাগুলি তুলে দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যাচার ও প্রতারণা করছেন শ্রমজীবীদের সঙ্গে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের এই শ্রমিক বিরোধী নীতি পরিবর্তনের জন্য শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই চালাতে হবে।
...................................................
Comments :0