Aravalli Protest

মন্ত্রীর আশ্বাসেও থামছে না আরাবল্লী পাহাড় ঘিরে প্রতিবাদ

জাতীয়

- ভারতের উত্তরাঞ্চলে আরাবল্লী পর্বতমাল ঘিরে ক্রমশ তীব্র হচ্ছে আন্দোলন। কেন্দ্রীয় সরকারের সুপারিশ মেনে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি আরাবল্লীর সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ধারণ করতেই প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে।
পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ভূ-ভাগ এই আরাবল্লী পর্বতমালা—রাজস্থান, হরিয়ানা, গুজরাট এবং রাজধানী দিল্লি জুড়ে বিস্তৃত। সর্বোচ্চ আদালতের স্বীকৃত নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, আশপাশের ভূমি-পৃষ্ঠ থেকে ন্যূনতম ১০০ মিটার উঁচু কোনও ভূমি-গঠনকেই আরাবল্লী পাহাড় ধরা হবে। এ ধরনের দুটি বা বেশি পাহাড় যদি ৫০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত হয় এবং মধ্যবর্তী জমি সহ একটিকে অন্যের সঙ্গে যুক্ত করে—তবে সেটি ধরা হবে আরাবল্লী রেঞ্জ।
পরিবেশবিদদের অভিযোগ, শুধু উচ্চতার ভিত্তিতে পাহাড় নির্ধারণ করা হলে অসংখ্য নিচু, ঝোপঝাড়ে ঢাকা অথচ পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরাবল্লী ভূখণ্ড বাদ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। এর ফলে নির্মাণ ব্যবসা, খনন ও অবৈধ পাহাড় কাটার সম্ভাবনা আরও বাড়বে।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, সংজ্ঞাকে একরূপ ও নিয়মতান্ত্রিক করার লক্ষ্যেই এই পরিবর্তন। এর ফলে সুরক্ষা দুর্বল হবে না বরং নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী হবে।
গত সপ্তাহান্তে গুরগাঁও, উদয়পুর সহ উত্তর ভারতের নানা শহরে শান্তিপূর্ণ পথসভা, মানববন্ধন ও মিছিল হয়েছে। তাতে যুক্ত স্থানীয় বাসিন্দা, কৃষক, পরিবেশ আন্দোলনকারী, এমনকি আইনজীবী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা।
‘পিপল ফর আরাবল্লিস’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নীলম আহলুওয়ালিয়া বিবিসিকে বলেছেন, “আরাবল্লী মরুপ্রবাহ ঠেকায়, ভূগর্ভস্থ জলভাণ্ডার রক্ষা করে, জীবিকা সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। নতুন সংজ্ঞা সেই ভূমিকা অস্বীকার করছে।”
পরিবেশ কর্মী বিক্রান্ত টোঙ্গড় বলেন, “পাহাড়কে উচ্চতা দিয়ে নয়, তার পরিবেশগত ও ভৌগোলিক ভূমিকা দিয়ে চিহ্নিত করা উচিত।” তাঁদের মতে, আন্তর্জাতিকভাবে পাহাড় বা পর্বতশ্রেণি নির্ধারণ হয় ভূমির কার্যকরী ভূমিকা বিচার করে—ইকোলজি, জল ধারণ ক্ষমতা, আবহাওয়ার প্রভাব, বন্যপ্রাণীর চলাচল ইত্যাদি বিবেচনায়।
বিরোধীদের আশঙ্কা, এই নতুন সলজ্ঞা খনি সম্প্রসারণে উৎসাহ জোগাবে। প্রসার ঘটবে নির্মাণ ব্যবসার। পরিবেশগত ক্ষতি হবে। তৈরি হবে ভূগর্ভস্থ জলের সঙ্কট। এচাড়াও  মরুপ্রবাহ আরও দক্ষিণে নেমে যাওয়ার সম্ভবনা।
সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেছেন, “আরাবল্লী রক্ষা করা মানেই দিল্লির অস্তিত্ব রক্ষা।”
রাজস্থান কংগ্রেস নেতা টিকা রাম জুল্লি বলেছেন, “আরাবল্লী রাজস্থানের প্রাণরজ্জু। এটি না থাকলে দিল্লি পর্যন্ত অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতো।”
রবিবার কেন্দ্র একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, সংজ্ঞাকে একক ও বিজ্ঞানসম্মত করা হয়েছে। এতে নাকি খনন নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর হবে। কেন্দ্রের দাবি, ঢাল, উপত্যকা, সংযুক্ত ভূখণ্ড—সবই সুরক্ষার আওতায় থাকবে। এছাড়াও সরকার বলছে, ১০০ মিটারের নিচের সব জমিতে খনন অনুমতি মিলবে—এ ধারণা ভুল।
পরিবেশ মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব জানান, “পুরো ১.৪৭ লক্ষ বর্গকিমি আরাবল্লী অঞ্চলের মাত্র ২ শতাংশ এলাকাই সম্ভাব্য খননযোগ্য। তাও কঠোর পরিবেশ মূল্যায়ন ও অনুমতি ছাড়া সম্ভব নয়।”
খনন নিষিদ্ধ এলাকা থাকবে সংরক্ষিত বন, ইকো সেনসিটিভ জোন, জলাভূমি, অতি সংরক্ষিত অঞ্চল।
পরিবেশ আন্দোলন এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের মুখে সোমবার কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব জানালেন, নতুন কোনও খনি লিজ অনুমোদন করা হচ্ছে না। সোমবার নয়া দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী জানান, আগামী দিনগুলোতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ফরেস্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন (আইসিএফআরই)-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা-ভিত্তিক রিপোর্ট তৈরি করার, যাতে নির্দিষ্ট করে বলা হবে, আরাবল্লীর কোন কোন পাহাড় খনির মানদণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। স্পষ্ট করে তিনি বলেন, এই চিহ্নিতকরণ শুধুমাত্র খনন নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক নজরদারির উদ্দেশ্যে, অন্য কোনও ব্যবহার নয়।
প্রসঙ্গত, ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে সম্পূর্ণ আরাবল্লী পর্বতমালা ঘিরে টেকসই খনন ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বিস্তারিত ‘ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান ফর সাসটেইনেবল মাইনিং’ (এমপিএসএম) প্রস্তুত করা হবে। সেই পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং জেলা-ভিত্তিক চিহ্নিতকরণের দায়িত্ব পালন করবে আইসিএফআরই। পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, পরিবেশবিধি কঠোরভাবে মেনে চলেই আগামীতেও খনি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হবে; পরিবেশগত ক্ষতি হতে পারে এমন এলাকাকে কোনোভাবেই উন্মুক্ত করা হবে না।
কেন্দ্রের আশ্বাসেও যদিও প্রতিবাদ থামছে না। পরিবেশ ও নাগরিক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, প্রতিবাদ চলবে। পাশাপাশি আদালতের নতুন সংজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি বিকল্প খোঁজা হচ্ছে। পরিবেশবিদদের গভীর আশঙ্কা, আরাবল্লী পর্বতমালার বিশাল অঞ্চল খনির জন্য খুলে দিতেই মোদী সরকারের এত তৎপরতা।

Comments :0

Login to leave a comment