AIADWA State Conference

দেশের ঐক্যকে বজায় রাখতে গেলে এগিয়ে আসতে হবে মহিলাদের, উদ্বোধনে বললেন ধাওলে

রাজ্য

শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন মারিয়াম ধাওলে সহ নেতৃত্ব।

পূজা বোস, অরিজিৎ মণ্ডল : কলকাতা

‘দেশের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি একসাথে করে দক্ষিণপন্থী শক্তিকে হারাতে হবে। সমানাধিকার ও নারী মুক্তির সংগ্রামকে দৃঢ় করবে মহিলা সমিতি।’ সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির ৩০ তম রাজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে একথাই বললেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মারিয়াম ধাওলে। 
ধাওলে বলেন, ‘বড়লোকের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করবে, নিচুতলার মানুষ বঞ্চিত হবে তা হতে পারে না। আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ থাকবে কিনা জানা নেই। গণতান্ত্রিক থাকবে কিনা জানা নেই। তবে মহিলারা যদি একজোট হয় তাহলে আমাদের দেশের চরিত্র বদলাতে দেবো না। বাংলা রাস্তা দেখাবে এটা আমরা বিশ্বাস করি।’
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির ৩০তম রাজ্য সম্মেলন শুরু হয়েছে কলকাতার রথীন্দ্র মঞ্চে। হাতরাস থেকে বিলকিস বানুর ঘটনা, তিলোত্তমা থেকে তামান্না কসম তোদের এই মাটিতে অপরাধীদের ছাড়বো না এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্যালেস্টাইন সংহতি নগর শিবানী ভৌমিক লক্ষীমণি ব্যানার্জি মঞ্চ ও তিলোত্তমা কক্ষে রাজ্য সম্মেলনের জন্য মিলিত হয়েছে মহিলারা। 
এদিন সম্মেলন শুরুর আগে পতাকা উত্তোলন করেন মহিলা সমিতির রাজ্য সভাপতি জাহানারা খান। শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মারিয়াম ধাওয়াল, সভাপতি পিকে শ্রীমতি, সর্বভারতীয় নেতৃত্ব তাপসী প্রহরাজ, রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ, মীনাক্ষী মুখার্জী, প্রবীণ মহিলা নেত্রী মিনতি ঘোষ, অঞ্জু কর সহ নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনে এ দিন উপস্থিত ছিলেন  তামান্নার মা ও বাবা, ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভাপতি অয়নাংশু সরকার, এসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরদের সাধারণ সম্পাদক উৎপল ব্যানার্জি ও চিকিৎসক আন্দোলনের নেতা ডাক্তার মানস গুমটা ও ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামী। বক্তব্য রাখেন অভ্যার্থনা কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
উদ্বোধনী সংগীত দিয়ে শুরু হয় সম্মেলন। সভাপতি মন্ডলী, স্টিয়ারিং কমিটি ও মিনিটস কমিটি গঠন করে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন বিদায় রাজ্য কমিটির সভাপতি জাহানারা খান। 
উদ্বোধনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে মারিয়াম ধাওলে বলেন, ‘বিজেপি - আরএসএস এর মনুবাদী রাজনীতি ও তাকে প্রশ্রয় দেওয়া তৃণমূলের রাজনীতির বিরুদ্ধে মহিলা সমিতি যেভাবে লড়াই সংগ্রাম চালাচ্ছে, প্রথমেই তাকে আমি অভিনন্দন জানাই। এই সম্মেলন আলোচনা হবে কিভাবে আগামী তিন বছর মহিলা সমিতি নারীমুক্তি, সমান অধিকার ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে মহিলাদের একত্র করে লড়াই করবে। গোটা বিশ্বে মহিলাদের অবস্থা শোচনীয়। প্যালেস্টাইনের দিকে তাকালে দেখা যাবে ইজরাইলের জায়নবাদী হামলার কাছে মাথা না ঝুঁকিয়ে প্যালেস্টাইনের পুরুষদের পাশাপাশি সমানভাবে লড়াই করে চলেছে মহিলারাও। ইজরায়েল চাইছে প্যালেস্টাইনের অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে। পুঁজিবাদের অন্যতম ধারক ও বাহক আমেরিকাতেও মহিলাদের ওপর শোষণ চলছে। গোটা বিশ্বজুড়েই দক্ষিণপন্থার বাড় বাড়ন্তের সামনে লড়াই করছে প্রগতিশীল ও বামপন্থী মহিলারা। সারা দুনিয়ায় এই সমাধিকারের লড়াইয়ের অংশ হিসেবেই লড়াই চালাচ্ছে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। 
দেশের পরিস্থিতি কথা বলতে গিয়ে ধাওলে বলেন, ‘আমাদের দেশের শাসকরা পুঁজিপতিদের পক্ষেই সওয়াল করছে। গোটা বিশ্বের কাছে ভারতবর্ষের যে গরিমা ছিল তা ধ্বংস হয়েছে। ট্রাম্প উদ্ধত চোখে ভারতের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় নাগরিকদের হাতে পায়ে বেড়ী পরিয়ে দেশে পাঠিয়েছে। একটিও কথা বলেননি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী। আসলে আরএসএস বিজেপির যে মূল লক্ষ্য দেশের সার্বভৌম গণতন্ত্র ও সংবিধানের উপর আক্রমণ করে তা পরিবর্তন করা। কিন্তু আমাদের দেশ এক সময় প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়িয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে। কিন্তু আরএসএস বিজেপি ভারতের মানুষের পাশেই দাঁড়াতে পারছে না।’ 
তিনি বলেন, ‘এমজিএনআরইজিএ আইনকে শেষ করে দেওয়া হল বর্তমানে এর পিছনে রাজনীতি বুঝতে হবে। আসলে পুঁজিপতিদের চাপে সাধারণ মানুষের জন্য যে কল্যাণকর প্রকল্প রয়েছে তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বাড়ছে গার্হস্থ্য হিংসাও। এইসব নিয়েই লড়াই চলবে। কৃষি আইন ও শ্রম কোড মহিলাদের অধিকার হরণ করার বড় উদাহরণ। মনবাদী আক্রমণ থেকে বাঁচাতে গেলে মহিলাদের সংঘটিত করতে হবে। মনুবাদ মহিলাদের শুধুমাত্র ঘরের মধ্যেই আটকে রাখতে চায়। তারা চায় মহিলাদের নিয়ন্ত্রণ থাকুক পুরুষদের হাতেই। আরএসএস বিজেপি মহিলাদের স্বতন্ত্র ভাবে বাঁচার অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। আরএসএস গভীর ভাবে বিদ্বেষের এজেন্ডাকে প্রচার করছে।’

Comments :0

Login to leave a comment