দেবাশিস মিথিয়া
বর্তমানে, ‘অনুপ্রবেশ’ ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা। এটি দেশের সীমান্তবর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা এবং উত্তর-পূর্বের অন্যান্য রাজ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে। প্রভাবিত হচ্ছে বিহার, ঝাড়খণ্ডও। অর্থাৎ এটি কেবল একটি বা দুটি রাজ্যের স্থানীয় সমস্যা নয়, বরং একটি জাতীয় ইস্যু। যা দেশের অর্থনীতি, সমাজ, নিরাপত্তা এবং রাজনীতি সবকিছুর সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িত। তাই অনুপ্রবেশ নিয়ে বিতর্ক অনেক। কিন্তু এই বিতর্ক কি শুধুই রাজনৈতিক সুবিধা তোলার কৌশল, নাকি এর মাধ্যমে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান খোঁজা ? এর সঠিক উত্তর পেতে হলে বিতর্কের গভীরে যেতে হবে।
সম্প্রতি একটি ইংরেজি নিউজ পোর্টালে সাংবাদিক সরুর আহমেদ লিখেছেন, বিহারে ‘অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে – অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং রাজনৈতিক কৌশল একে অপরের সঙ্গে মিশে এক জটিল বিতর্ক তৈরি করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও এই ইস্যুতে বারবার বিতর্ক সামনে এসেছে। অনুপ্রবেশের প্রেক্ষাপটে এই দুই রাজ্যের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে হয়তো আসল ছবিটা ফুটে উঠবে ।
ওই সাংবাদিকের বিশ্লেষণ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, বিহারে অনুপ্রবেশ বিতর্কটি মূলত রাজনৈতিক ফায়দা তোলার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি যে প্রচার শুরু করেছে, তার মূল উদ্দেশ্য হলো ভোটারদের মধ্যে মেরুকরণ তৈরি করা।
বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, বিহারে অনুপ্রবেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক বাস্তবতার কোনও মিল নেই। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় (২০২২-২৩ আর্থিক বছরে প্রায় ২৮২৪ টাকা), বিহারের মাথাপিছু আয়ের (৬৬০ টাকা) থেকে যথেষ্ট বেশি। তাই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল বিহারে বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষের অনুপ্রবেশ আর্থিক উন্নতির কারণে– এমন যুক্তি ধোপে টেকে না। রাজনৈতিক দলগুলো তাই অর্থনৈতিক কারণের পরিবর্তে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভেদকে উসকে দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে। ফলে, বিহারে অনুপ্রবেশের সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানের চেয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর অনেক বেশি।
পশ্চিমবঙ্গেও ‘অনুপ্রবেশ’ বিতর্কটিকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে দুটি বিপরীতমুখী প্রবণতা দেখা যায়। একদিকে, রাজ্যের বহু মানুষ অভাবের তাড়নায় পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি জমাচ্ছেন; অন্যদিকে, প্রতিবেশী দেশ থেকে এখানে অনুপ্রবেশ ঘটছে। এই আপাত-বিরোধী পরিস্থিতির মূলে রয়েছে রাজ্যের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কিছু জটিল বাস্তবতা।
কেন এমনটা ঘটছে দেখা যাক। পশ্চিমবঙ্গের ১৫-২৯ বছর বয়সি যুবকদের বেকারত্বের হার ভারতের জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি। এই বেকার যুবকেরা কাজের খোঁজে অন্য রাজ্যে, এমনকি বিদেশে যেতে বাধ্য হচ্ছে। রাজ্য সরকারও একে মান্যতা দিয়েছে। তারা বলছে– লক্ষ লক্ষ মানুষ কেরল, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু বা দিল্লির মতো রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করে। এর মূল কারণ রাজ্যের শিল্পে মন্দা। নতুন শিল্প স্থাপন নেই বললেই চলে এবং পুরানো শিল্পগুলোকেও পুনরুজ্জীবিত করার কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে, তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ সীমিত। এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর, যেখানে সারা বছর কাজ পাওয়া যায় না এবং মজুরিও কম। তাই উন্নত জীবনের আশায় এবং ভালো মজুরির খোঁজে অনেকেই অন্য রাজ্যে চলে যান।
পশ্চিমবঙ্গের কাজের এত অভাব, তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে মানুষ কেন এই রাজ্যে আসছেন? এর কারণ অনেক। এই অনুপ্রবেশ শুধুমাত্র কাজের সহজলভ্যতার ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বাংলাদেশের গরিব মানুষের উপর দারিদ্র, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ‘পুশ ফ্যাক্টর’ তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করে। আবার, পশ্চিমবঙ্গের ‘পুল ফ্যাক্টর’, যেমন, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক মিল, ভৌগোলিক নৈকট্য এবং কম মজুরির অসংগঠিত খাতে কাজের সুযোগ, তাদের আকর্ষণ করছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ধর্মীয় বৈষম্যের কারণে কিছু মানুষ নিরাপত্তার সন্ধানে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস দুটি দলই এই অনুপ্রবেশকারীদের একটি অংশকে নিজেদের ‘ভোটব্যাঙ্ক’ হিসেবে ব্যবহার করে, যা তাদের ভারতে থাকতে উৎসাহিত করে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার নিজের রাজ্যের জনগণের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতেই ব্যর্থ, তাহলে বাংলাদেশি অভিবাসীদের আশ্রয় দেয় কোন যুক্তিতে? এর পেছনে একাধিক মনগড়া যুক্তি রয়েছে। রাজ্য সরকার প্রায়শই মানবিক কারণ এবং আন্তর্জাতিক নীতির দোহাই দিয়ে আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে কথা বলে। পশ্চিমবঙ্গের কিছু খাতে কম মজুরির শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে, যা স্থানীয়রা অনেক সময় করতে রাজি হন না, আর এই চাহিদা পূরণ করতে অবৈধভাবে আসা শ্রমিকদের ব্যবহার করা হয়। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার দায় এড়াতে বলে থাকে, সীমান্ত সুরক্ষা যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে, তাই এই বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। যুক্তি যাই দেখানো হোক না কেন, মূলত ভোটের রাজনীতিই কাজ করে। একদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তারা অবৈধ মুসলিম অভিবাসীদের নিজেদের ভোট বাড়াতে কাজে লাগাচ্ছে। অন্যদিকে, বিজেপি ‘সিএএ’-এর মতো আইনের মাধ্যমে হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হিন্দু ভোট টানার চেষ্টা করছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুটিও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বিতর্কের একটি অংশ। বিজেপি অভিযোগ করে যে মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিচ্ছে, যা নিরাপত্তা এবং জনমিতির (বয়স, জাতি এবং লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে জনসংখ্যার অধ্যয়ন) জন্য হুমকি। অভিযোগগুলোকে এমনভাবে প্রচার করা হয় যাতে হিন্দু ভোটাররা বিশ্বাস করতে শুরু করে মুসলিমরা ‘অনুপ্রবেশকারী’।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ, হিন্দু-মুসলিম বিতর্ক এবং রোহিঙ্গা ইস্যু একই সূত্রে গাঁথা। এই বিষয়গুলোকে ব্যবহার করে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস একে অন্যকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। বিজেপি’র অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস অবৈধ মুসলিম অভিবাসীদের ভোটের জন্য ব্যবহার করছে, যার ফলে জনসংখ্যাগত ভারসাম্য বদলে যাচ্ছে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগকে সরাসরি সাম্প্রদায়িক বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং বিজেপি-কে বিভেদ সৃষ্টির জন্য দায়ী করে। এই বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)। বিজেপি এই আইন কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা হিন্দু এবং মুসলিমদের মধ্যে বিভেদকে আরও বাড়িয়েছে।
তবে অনুপ্রবেশের ইস্যুটিকে দুটি দলই ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে– এটা জলের মতো পরিষ্কার। কিন্তূ শুধুই কি ক্ষমতা দখল? না আরও কিছু?
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একদিকে বিজেপি এবং অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস-দু’দলই একে অপরের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলে। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যেমন শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, সারদা-নারদা কেলেঙ্কারির মতো নানা ‘দুর্নীতি এবং কেলেঙ্কারি’র অভিযোগ রয়েছে, তেমনই কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের মুখে পড়েছে বিজেপি’র একাধিক নেতা-মন্ত্রীও। কিন্তু এই গুরুতর অভিযোগগুলোর পরেও রাজনীতিতে দুর্নীতির বিষয়টি গৌণ হয়ে যায়, যখন অনুপ্রবেশ বা ধর্ম সংক্রান্ত বিতর্ক সামনে আসে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি একটি সুপরিকল্পিত কৌশল। তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়েই ভোটের জন্য তোষণের রাজনীতি করছে। এক পক্ষ মুসলিম তোষণ করলে, অন্য পক্ষ হিন্দু তোষণ করছে। আর এই তোষণে তারা অনুপ্রবেশকে কাজে লাগাচ্ছে । রাজ্যের প্রকৃত অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোতে কোনও দলই গুরুত্ব দিচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে, এই অনুপ্রবেশ এবং ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি হলো মূল অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলো থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা।
অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোর প্রধান দায়িত্ব বিএসএফ’র উপর থাকলেও, এই কাজে তাদের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অনেকটাই অরক্ষিত, কারণ নদী-সীমান্ত এবং জমি-জটের কারণে অনেক জায়গায় ফেন্সিং নেই। ফলে, প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ এই সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করে। এই অনুপ্রবেশ দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় বিপদ ডেকে আনছে, কারণ জঙ্গিরাও এই সুযোগে প্রবেশ করে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে চাপান-উতোর চলতে থাকে। বিএসএফ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্ত হওয়ায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ একাধিক রাজনীতিবিদ অনুপ্রবেশের দায় কেন্দ্রের ওপর চাপিয়ে দেন। অন্যদিকে, রাজ্যের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা ‘সমান্তরাল প্রশাসন’, যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার, আধার কার্ড সহ বিভিন্ন বৈধ নথি তৈরি করে দেয়-তার দায় তো রাজ্যের? এই ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড রুখতে রাজ্য সরকারের বড় ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণে তারা কঠোর পদক্ষেপ নেয় না।
এই অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ থেকেই জন্ম নেয় ‘এসআইআর’ সংক্রান্ত রাজনৈতিক বিতর্ক।
বিহারে সম্প্রতি ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (এসআইআর) অব ইলেক্টোরাল রোলস প্রক্রিয়াটি তাড়াহুড়ো করে শুরু করা হয়েছে। যদিও এটি ভোটার তালিকা সংশোধনের একটি নিয়মিত অংশ, তবে নির্বাচনের ঠিক আগে এর সূচনা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আসামে এনআরসি প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার পরও একই ধরনের পদক্ষেপ বিহারে নেওয়ায় অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, এটি বিজেপি’র একটি রাজনৈতিক চাল। এর মাধ্যমে ‘অনুপ্রবেশকারী’ সংক্রান্ত ভয় জাগিয়ে তুলে ধর্মীয় মেরুকরণকে আরও তীব্র করা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দু ভোটকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা।
পশ্চিমবঙ্গেও ‘এসআইআর’ নিয়ে চাপান-উতোর চলছে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই রাজ্যে এই কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে এবং অনিয়মের অভিযোগে কয়েকজন নির্বাচনী কর্মকর্তাকে বরখাস্তও করেছে। এই রাজ্যে বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করছে যে ভোটার তালিকায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের দাবি, এই নামগুলো বাদ দেওয়ার জন্য একটি কঠোর ‘এসআইআর’ প্রক্রিয়া অপরিহার্য। এর মাধ্যমে তারা দেশভাগের স্মৃতি উসকে দিয়ে হিন্দু ভোটারদের মধ্যে সমর্থন বাড়াতে চায়। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই ‘এসআইআর’-র বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, এটি এনআরসি’র মতো একটি প্রক্রিয়া, যা পিছনের দরজা দিয়ে আনা হচ্ছে এবং এর মূল লক্ষ্য হলো বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের, বিশেষ করে সংখ্যালঘু এবং দরিদ্রদের, ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ‘এসআইআর’ ইস্যুটি এখন অনুপ্রবেশ, হিন্দু-মুসলিম বিভাজন এবং রোহিঙ্গা বিতর্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, যাকে নিয়ে উভয় দলই রাজনীতি করছে।
অনুপ্রবেশের মতো একটি জটিল বিষয়কে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে নিজেদের সঙ্কীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করছে, তা দেশের জন্য এক গভীর সঙ্কট তৈরি করছে। দারিদ্র, বেকারত্ব এবং দুর্নীতির মতো প্রকৃত সমস্যাগুলো সমাধানের পরিবর্তে, অনুপ্রবেশকে কাজে লাগিয়ে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন এবং ভোট বাড়ানোর খেলায় মেতেছে। এই রাজনৈতিক খেলা একদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধানকে আরও কঠিন করে তুলছে।
এই সমস্যার সমাধান কোনও একটি দলের পক্ষে সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কঠোর সীমান্ত সুরক্ষা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং অবৈধভাবে আসা অভিবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রবণতা বন্ধ করা জরুরি। এর পাশাপাশি, স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু তৃণমূল বা বিজেপি’র তা লক্ষ্য নয়। ফলে এর সুদূরপ্রসারী ক্ষতি দেশের জনগণকে বহন করতে হবে। তাই, এখন সময় জনগণের আসল ছবিটা বুঝে নেবার।
Comments :0