‘সাধারণ মানুষকে বলবো যখন ২০০২ সালের ভোটার তালিকা সাইট থেকে নামবেন তখন সেই সময়ের পরিবেশ পরিস্থিতিকে মাথায় রাখবেন। তখন মানুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ ছিল না। সেই সময় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মহিলাদের নিরাপত্তা কী অবস্থায় ছিল সেই গুলোকেও মাথায় আপনাদের ডাউনলোড করতে হবে।’ সিইও দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ সভা থেকে বললেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
তিনি বলেন, ‘যেই মানুষরা আতঙ্কে আছেন তাদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। বিজেপি আরএসএসের ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে। প্রতিদিন মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে বিজেপি এবং তৃণমূল। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। মানুষ যাতে আতঙ্কিত না হয় সেই দিকে নজর রাখতে হবে।’
সেলিম বলেন, ‘আমরা বামপন্থী দলগুলো পরিষ্কার করে কমিশনকে কটা কথা বলতে চাই। তার সাথে পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষ এবং রাজ্যের মানুষের কাছে এসআইআর নিয়ে বামপন্থীদের চিন্তা, ভাবনা, দায়, দায়িত্ব স্পষ্ট করে রাখতে চাই। আমাদের দেশ স্বাধীনতার আগে থেকে এই কলকাতার বুকে সাম্রাজঙবাদের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই হয়েছে। মহাকরণে বিনয় বাদল দীনেশ যুদ্ধ করেছিলেন দেশের মানুষের অধিকার সার্বভৈমত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আমাদের দেশ সংসদীয় গণন্ত্রের কথা বলে। সংবিধানে বিধানসভা লোকসভার জন্য তৈরি হয়েছে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন। সুষ্টু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার দায়িত্ব কমিশনের। তাদের যেই নিরপেক্ষ নির্বাচন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা তারা করতে পারেনি। নির্বাচন নিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, ভোট লুঠ হচ্ছে। যারা নির্বাচন পরিচালন করছে তারা নিরপেক্ষ নয়।’
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের দেশে এমন অবস্থা হয়েছে যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর সাংবিধানিক সংস্থা গুলো শাসকের অনুগত হয়েছে। কমিশন যাতে নিরপেক্ষ হয় তার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল সংবিধানে। কিন্তু মোদী সরকার হাত তোলা আধিকারিকদের সাংবিধানিক পদে বসিয়েছে। নির্বাচন কমিশন তার থেকে আলাদা নয়। কমিশনের দায়িত্ব নিজেদের সম্মান রক্ষা করার তারা তা পারেনি। আমরা দেখলাম এসআইআর করে কমিশন মানুষের মনে আরও সন্দেহ তৈরি করলো তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে। বিহারে যখন এসআইআর হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টে বার বার বুঝিয়েছে কমিশনের দায়িত্ব কিন্তু তারা নাগপুর, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং স্বরাষ্ট্রদপ্তরের বাইরে যেতে পারেনি কমিশন।’
সেলিম বলেন, প্রয়োজনে সাংবিধানিক সংস্থার মুখে লাগাম পড়াতে হয়, সেই কাজ জনগনের। শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্ট সেই কাজ করবে তা হবে না। বামপন্থীরা লড়াই করে শাসক শ্রেণির জনবিরোধী এবং আইন বিরোধী রাজনীতি, কাজের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, এসআইআর নিয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। ভোটার তালিকা ঠিক করার কাজ কমিশনের, এতো দিন কেন করেনি? সিইও, নির্বাচন কমিশনের কান ধরে মানুষের কাছে বলা উচিত তারা ভুল লিস্ট করেছে বলে আজ ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন করা হচ্ছে। আমাদের দেশে কোন মানুষ মারা গেলে তার রেশন কার্ড বাতিল করে দেয়। সরকার কে কী করছে তার ওপর নজর রাখে কিন্তু একজন মানুষ মারা গেলে তার নাম কী ভাবে তালিকায় থেকে যায়?
বিজেপিকে আক্রমণ করে সেলিম বলেন, ‘এরা এসআইআর করছে না যাতে মতুয়া, উদ্বাস্তু মানুষদের সুবিধা হয়। যারা বিজেপিকে এরাজ্যে খাল কেটে বিজেপিকে নিয়ে এসেছে তাদের এই আতঙ্কের দায় নিতে হবে। ২০০২ সালে তো কোন আতঙ্ক ছিল না। কেন ছিল না তখন সরকার, কমিশনে নিজেদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করেছিলেন। আমরা বামপন্থীরা ১৮ বছরে ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছি। এর রাজ্যে বামপন্থীরা প্রথম পৌরসভা পঞ্চায়েতে ১৮ বছরের ভোটাধিকার দিয়ে ছিলাম। সুতরাং বিজেপি ভোটাধিকার দেবে এটা ভাবা ভুল। ওরা ভোটাধিকার কেড়ে নিতে এসেছে। ইংরেজ আমলে সবাই ভোট দিতে পারতো না যারা খাজনা দিত তারা ভোট দিতে পারতো। এখন বিজেপি সেই কায়দায় জমির কাগজ দেখতে চাইছে।’
তিনি বলেন, ভোটারের থেকে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না। ওরা প্রথমে গুন্ডা ব্যবহার করে যাতে কেউ ভোট দিতে না পারে। তারপর পুলিশকে ব্যবহার করে।
SALIM SIR PROTEST
শুধু ভোটার তালিকা নয়, ডাউনলোড করতে হবে ২০০২ সালে রাজ্যের সম্প্রীতির পরিবেশকেও : সেলিম
×
Comments :0