STORY — SOURISH MISHRA — FLAG — NATUNPATA | 23 AUGHST 2025, 3rd YEAR

গল্প — সৌরীশ মিশ্র — ফ্ল্যাগ — নতুনপাতা, ২৩ আগস্ট ২০২৫, বর্ষ ৩

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURISH MISHRA  FLAG  NATUNPATA  23 AUGHST 2025 3rd YEAR

গল্পনতুনপাতা

ফ্ল্যাগ
সৌরীশ মিশ্র


"দ্যাখো, তোমার মেয়ে তোমার জন্য কি কিনেছে?" 
রোববারের বিকেলবেলা। নিজের ঘরে বসে লিখছি। দরজার পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকে, ঠোঁটের কোনে আলতো হাসি ঝুলিয়ে কথাটা বলল আমার স্ত্রী।
দেখি, ওর মায়ের পিছন পিছনই ঘরে ঢুকল আমার মেয়েও। ওর ডানহাত পিছনে। বোঝাই যাচ্ছে, কিছু একটা আছে ওর ঐ হাতে ধরা, যেটা ও এখনই আমায় দেখাতে চাইছে না।
"কি এনেছিস মা আমার জন্য?" জিজ্ঞেস করি আমি।
কুঁড়ি পায়ে পায়ে এগিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। পিছন থেকে ডানহাতটা সামনে আনে। দেখি, মেয়ের ঐ হাতে ধরা একটা স্ট্যান্ডে বসানো ছোটো সাইজ়ের ভারতের জাতীয় পতাকা।
"বাবা, এটা তোমার জন্য। তুমি এই ফ্ল্যাগটা তোমার এই লেখার টেবিলে রাখো।" ফ্ল্যাগটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে আমার মেয়ে।
হাতের কলমটা রেখে আমি হাতে নিই ফ্ল্যাগটা।
"কোথায় পেলি এটা?" জিজ্ঞেস করি।
মেয়ে উত্তর দেওয়ার আগে মেয়ের মা-ই বলে ওঠে, "সামনের রাস্তা দিয়ে একটু আগে যাচ্ছিল একজন, নানান সাইজ়ের, নানান রকমের ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ নিয়ে। তোমার মেয়ে বারান্দায় ছিল। ঠিক দেখেছে। আমি টিভি দেখছিলাম। টানতে টানতে আমায় নিয়ে গেল, এটা কিনে দেওয়ার জন্য।"
ফ্ল্যাগটা একটু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখে টেবিলের ঠিক মাঝখানটায় যত্ন করে রেখে মেয়ের মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে বলি, "খুব ভাল হয়েছে রে মা ফ্ল্যাগটা। থ্যাংক ইউ।"
কুঁড়ি আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবে একটু। তারপর বলে ওঠে, "বাবা, একটা কথা বলবো?"
"হ্যাঁ, বল্ না।" 
"বাবা, তোমার মনে আছে, আগের বছর আমরা মামাবাড়ি থেকে ট্রেনে ফিরছিলাম একদিন বিকেলে, একজন কাকু উঠেছিল ঐ ট্রেনটায়, এই রকম ফ্ল্যাগই বিক্রি করছিল ঐ কাকুটা, আমি তোমাকে বললাম আমাকে একটা কিনে দিতে আমার পড়ার টেবিলের জন্য, তুমি কিনে দিলে, মনে আছে বাবা?"
"হ্যাঁ, মনে আছে তো।" বলি আমি।
"সেদিন ট্রেনে তোমার এই লেখার টেবিলটার কথা মনেই ছিল না আমার, বাবা। বাড়ি ফিরে তোমার ঘরে এসে মনে পড়েছিল আমার। সেদিন খুব ভুল হয়ে গেছিল তাই না বাবা আমার? তুমি তখন ভেবেছিলে না, কুঁড়ি নিজের টেবিলের জন্য একটা ফ্ল্যাগ কিনল, কই আমার টেবিলের জন্য তো কিনল না! আমি স্যরি বাবা। আমি সত্যিই ভুলে গেছিলাম এই টেবিলটার কথা। সত্যি বলছি, বিলিভ করো।" বলেই ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলে কুঁড়ি।
আমি পুরো স্তম্ভিত হয়ে যাই মেয়ের কথাগুলো শুনে। তাড়াতাড়ি ওকে নিজের কাছে টেনে নিই। দু'হাতে চোখের জল মোছাতে থাকি ওর। কুঁড়ির মাও এসে গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে মেয়েকে।
তবু, কুঁড়ির কান্না থামে না। আমাদের দু'জনকেই ছোট্ট ছোট্ট তার দুটো হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে শুধু কাঁদতেই থাকে সে।
মেয়েকে এত কষ্ট পেতে দেখে, কুঁড়ির মা তো কেঁদে ফেলেছিল আগেই, আমারও চোখে জল চলে আসে এবার। এইরকম পরিস্থিতিতে কোনো বাবা কান্না চেপে রাখতে পারে, বলুন?


 

Comments :0

Login to leave a comment