Editorial

অনুপ্রবেশ ইস্যুই প্রধান ভরসা

সম্পাদকীয় বিভাগ

রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকেই যে বিজেপি তাদের নির্বাচনী প্রচারের প্রধান ইস্যু করতে চলেছে রাজ্য সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেটা এক রকম নি‍‌শ্চিত করে দিলেন। ১১ বছর দেশ শাসনের পর এবং পর পর লোকসভা নির্বাচনে তিনবার জয়ী হবার পরও উন্নয়নের প্রশ্নে মানুষের জীবন জীবিকার অগ্রগ‍‌তির প্রশ্নে, কৃষকের সঙ্কটের প্রশ্নে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয় বৃদ্ধির  প্রশ্নে সাফল্যে দাবি করে নির্বাচনে বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ করার মতো সামর্থ্য আজও মোদী-শাহ’রা অর্জন করতে পারেনি। দেশের ও দেশের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নে গত ১৩ বছর ধরে যত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল একটিও রক্ষা করতে পারেনি মোদী সরকার। তাই ভাঁওতাবাজ ও প্রতারকের কুখ্যাতি নিত্যদিনই তাদের উপর বর্ষিত হচ্ছে। এই অবস্থায় ভোটে জেতা এবং ক্ষমতা ধরে রাখার বাসনায় তাদের চিরাচরিত ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক ও জাতপাতের বিভাজনের রাজনীতিকে আশ্রয় করা ছাড়া গত্যান্তরই নেই। বস্তুত বিজেপি’র পক্ষে ভারতের  রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকার একমাত্র শর্তই হলো তাদের উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিদ্বেষমূলক  সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি। এটা বাদ দিলে ভারতের বিজ্ঞান প্রগতির বৌদ্ধিক বিকাশ, জনগণের বৈষয়িক ও দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ এবং সর্বোপরি মানবিকতার বিকাশের ক্ষেত্রে বিজেপি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। তাই বারে বারে আরএসএস-বিজেপি নেতাদের  সেই ধর্মীয় বিদ্বেষ-ঘৃণার বিভাজনের রাজনীতির কূপমণ্ডুকতায় ডুবে থাকতে হয়।
রামমন্দির নিয়ে বহু বছর ধরে ঘৃণার ও বিদ্বেষের রাজনীতি তারা করেছে। মন্দিরও হয়েছে। তাতে দেশের ও মানুষের সামান্যতম অগ্রগতিও হয়নি। কাশ্মীর নিয়ে দেশজুড়ে হিংসা আর ধর্মীয় মেরুকরণের বিষ ছড়ানো হয়েছে। তাতেও দেশেরও ভালো হয়নি, মানুষেরও ভালো হয়নি। মসজিদের নিচে মন্দির খোঁজার রাজনী‍তি, গোরক্ষার রাজনীতি, ধর্মান্তরকরণের রাজনীতি, ভিন্ন ধর্মে বিয়ের রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানো হলেও কারো কোনও ভালো হয়নি। লাভ যেটুকু হয়েছে সেটা আরএসএস-বি‍‌জেপি’র তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়েছে। কেন্দ্রে ও রাজ্যে রাজ্যে শাসন ক্ষমতা দখলের সহায়ক হয়েছে।
রামমন্দির এখন বিজেপি’র রাজনীতিতে কোনও ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না। তাই খুঁজতে হচ্ছে নতুন নতুন ইস্যু। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী তেমনই নতুন ইস্যু। এই ইস্যু বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী  রাজ্যগুলিতে কার্যকরী হলেও বাংলাভাষী এরাজ্যের মানুষ যেহেতু সারা দেশে পেটের দায়ে পরিযায়ী  তাই ইস্যুটিকে বিজেপি সর্বভারতীয় করে পশ্চিমবঙ্গের ওপর চাপ বাড়াতে তৎপর। মোদী-শাহ’রা বলতে চাইছেন বাংলাদেশি মুসলিমরা বানের জলের মতো ভারতে  ঢু‍কে  মুসলিমদের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। এদেশের যুবকদের কাজ নিয়ে নিচ্ছে। আদিবাসীদের বোকা বানিয়ে তাদের জমি কেড়ে নিচ্ছে। এদেশের মেয়েদের বিয়ে করছে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ঝাড়খণ্ড, বিহার সহ গোটা দেশটাই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশে বিপন্ন। ‍কিন্তু গত ১১ বছরে কতজন অনুপ্রবেশ করেছে সরকার জানে না। তথ্য নেই। সীমান্ত পাহারা দেয় বিএসএফ। তারা অনুপ্রবেশ আটকাতে চূড়ান্ত ব্যর্থ। অবশ্য বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা চ‍‌লে আসছে তাতে সমস্যা নেই। তারা যতই আসুক  কাজের, বিয়ের, জমির কোনো সমস্যা নেই। হিন্দুরা স্বাগত। মুসলিমরা না। গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচার কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।  পরিকল্পিত কর্মসূচি  পশ্চিমবঙ্গ, আসামের ভোট মাথায় রেখে। ঝাড়খণ্ডেও এই কৌশল নিয়েছিল সফল হয়নি। তাই বাংলা, আসামে সর্বশক্তি নিয়ে নতুন করে ঝাঁপাতে চাইছে।

Comments :0

Login to leave a comment