Messi Huna Bjarati

লজ্জায় অবনত বাংলা নির্লজ্জরা দিব্যি বহাল

সম্পাদকীয় বিভাগ

বি‍‌শ্বের দরবারে লজ্জায় মাটিতে মিশে যাবার অবস্থা গোটা বাংলার। কিন্তু নির্লজ্জরা দিব্যি বহাল যে যার ক্ষমতায়। পদত্যাগ করে লজ্জা কিছুটা লাঘব করার কথা ভুল করেও ভাবেনি কোনও নির্লজ্জ। কেউ তাদের বরখাস্তও করেনি। মাঝখান থেকে মেশি আবেগের সুনামিতে ঝাঁপিয়ে পড়া ভক্তদের মাথায় টুপি পরিয়ে ঠকিয়ে কয়েক কোটি টাকা কামিয়ে নিল গোটা ইভেন্টের নেপথ্য কারিগররা। আর মেসির সঙ্গে এঁটুলির মতো সেঁটে থাকা নেতা-মন্ত্রী ও তাদের পরিবারের লোকজন তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ঘরে ফিরলেন যারা টিকিট কেটে মেসিকে দেখতে এসেছিলেন তাদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে। বাদ যাননি পিসি-র পেছনে ঘুরঘুর করা টলিউডের বাবুবিবিরাও। শুধু হাজার হাজার টাকার টিকিট কেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে মেসিকে এক পলক চোখের দেখা না দেখে ক্ষোভে, দুঃখে, হতাশায় ফেটে পড়লেন হাজার হাজার মেসিভক্ত। পরিণতি নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা। নিমেষে লন্ডভন্ড গোটা যুবভারতী স্টেডিয়াম।
কেন এমন নৈরাজ্য, এই চরম বিশৃঙ্খলা? রাজ্যে সরকার আছে। দলদাস পুলিশ আছে। কিন্তু জবাব দেবার কেউ নেই। চরম অপদার্থতা আর কদর্য আদেখলাপনা আড়াল করতে একদিকে ক্ষণিক বিলম্ব না করেই তদন্ত কমিটি তৈ‍রি হয়ে গেল। অন্যদিকে বলির পাঁঠা করা হলো তথাকথিত সংগঠক শতদ্রু দত্তকে। তদন্ত কমিটি আসলে কোনও সত্য প্রকাশ করতে পারবে না। আরজি করের মতো প্রমাণ লোপাটের মাধ্যমে সত্য অদৃশ্য হয়ে যাওয়া একরকম নিশ্চিত। এরাজ্যে কোনও ঘটনায় এমন কোনও তদন্ত কমিটি সত্য উদ্‌ঘাটন করেনি বা করতে পারেনি।
মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন। ব্যস, এ পর্যন্তই। তাৎক্ষণিকভাবে কোনও পদক্ষেপ নেননি। গোটা ইভেন্টকে ঘিরে দৃষ্টির আড়ালে যে দুর্নীতি, অনিয়ম, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ছড়িয়ে আছে মুখ্যমন্ত্রীর তা অজানা নয়। তাঁর সম্মতিতেই ভোটের আগে মেসি উন্মাদনাকে কাজে লাগিয়ে, দলের পালে হাওয়া দেবার প্রয়াস তাঁর অনুপ্রেরণা ছাড়া হয়নি। কাগজে কলমে ইভেন্টের উদ্যোগ যারই হোক না কেন হোটেলে ও স্টেডিয়ামে দুনিয়া দেখেছে সরকার ও তৃণমূলকে। মেসিকে ঘিরে যে শ’দেড়েক মানুষ সেঁটে ছিল তারা সকলেই তৃণমূলেরই লোক। সরকারি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান হলে সমস্ত পরিকল্পনা এবং সূচি জানাতে হয়। কত টিকিট বিক্রি হয়েছে, কত লোক ঢুকবে সবটাই বলতে হয় পুলিশকে। সেই মতো সরকার ও পুলিশ যাবতীয় নিরাপত্তার আয়োজন করে।
অভিযোগ গোটা ইভেন্টজুড়ে মেসিকে দেখিয়ে দু’হাতে টাকা কামানোর ব্যবসা হয়েছে। মেসির সঙ্গে ছবি তুলতে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। মেসির কাছে যেতে, হাত মেলাতেও মোটা টাকা দিতে হয়েছে। তেমনি স্টেডিয়ামে আসনের থেকে অনেক বেশি টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। বিনা পয়সায় নেতা-মন্ত্রীদের ধরে ঢুকেছে আরও কয়েকশো। বাজার গরম করার জন্য নাকি মেসির ম্যাচ খেলা, পেনাল্টিতে বল মারা ইত্যাদি আরও অনেক প্রচার হয়েছে। প্রকৃত সূচিতে নাকি সেসব কিছুই ছিল না। এইভাবে লোভ দেখিয়ে অতি উচ্চ মূল্যে টিকিট বিক্রি হয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের টাকা কার ঘরে কতটা গেছে কোনও তদন্ত কমিটি সেটা জানাবে না।
মনে রাখা দরকার, কোনও এক শতদ্রু চেয়েছে অমনি মেসি চলে এসেছে ব্যাপারটা মোটেই তেমন নয়। মেসির মতো এক ব্যক্তির সফরে অনিবার্যভাবে যুক্ত থাকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। ভারত সরকার নিরাপত্তা দায়িত্ব নিয়েছে বলেই মেসি ভারতে এসেছে। তেমনি রাজ্য সরকার নিরাপদ সফরের দায়িত্ব নিয়েছে বলেই মেসি কলকাতায় আসতে পেরেছে। তাই শতদ্রু উপলক্ষ মাত্র। দায় আসলে পুলিশের এবং রাজ্য সরকারের।

Comments :0

Login to leave a comment