ভাস্করানন্দ রায়
নদীমাতৃক দেশে ৭৮ বছর পরেও স্বাধীন ভারতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদীভাঙন রোধ, নিকাশি ব্যবস্থা আজও হলো না। ফলে মানুষের দুঃখ-দুর্দশার অবসানের পরিবর্তে উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। দুই সরকারের কোনও হেলদোল নেই। মন্ত্রী পারিষদরা গাড়ির কনভয় হাঁকিয়ে এখন বন্যা দেখতে যাচ্ছেন। কোথাও কোথাও প্রবল বিক্ষোভের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তিন দিনের ভারী বর্ষণে সমগ্র রাজ্যের সাথে আরামবাগ ও ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ আজ বিপন্ন। কৃষকের তিল, বাদাম,পাট, সবজি সব নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকদের আক্ষেপ, এখনই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে ভরপুর বর্ষায় কি হবে!!কৃষকের সোনালি স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার দু'বছর পর চিন স্বাধীন হলো। যে হোয়াং-হো নদী চীনের মানুষের কাছে হাড় হিম করা দুঃখ, বেদনা ছিল, সেই নদীকে চীনের সরকার মানুষের স্বার্থে কাজে লাগিয়ে বহুমুখী প্রকল্প, সেচের সম্প্রসারণ, নিকাশি ব্যবস্থা, নদী ভাঙন রোধের স্থায়ী ব্যবস্থা করে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চীনের সরকার সাফল্যের শীর্ষে উঠতে পেরেছে। আর ছিল বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা, যথেষ্ট পরিমাণ টাকা বরাদ্দ, মানুষকে যুক্ত করে স্বচ্ছতার সাথে কাজ। যা আমাদের দেশের সরকারের নেই। সেই জন্যই তো ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান ও নিম্নদামোদর পরিকল্পনা আজও সঠিকভাবে রূপায়ণ হল না। দীর্ঘসূত্রিতার জেরে আর পুঁজিবাদী রাষ্ট্রযন্ত্রের লাল ফিতার বাঁধনে দুটি পরিকল্পনাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ঘাটালের সাংসদ মহাশয় ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শুরু হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই মাস্টারপ্ল্যান এখন বন্যায় হাবুডুবু খেতে খেতে জলের তোড়ে ভেসে গেল।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান এখন যা রূপায়িত হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। মিডিয়াকূলের একটি অংশ এ বিষয়ে বিরাট হই চই করল, কিন্তু কাজ হলো কি? না, হলো না। বহুচর্চিত ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ, চুরি বাটপারি করে যেটা হচ্ছিল সেটাও রসাতলে চলে গেল। বানভাসি ঘাটালের মানুষ কয়েক দশক ধরে আন্দোলন করছেন, ফি বছর বন্যার করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে। কিন্তু সেই প্রকল্প শুরু হতেই সেই মানুষরাই বিক্ষোভ আন্দোলন করছেন প্রকল্প বন্ধ করার জন্য। কারণ অবৈজ্ঞানিক, অবাস্তব পরিকল্পনা, বরাদ্দ কম হওয়া, কাজের মান নিম্নমানের হওয়া বা মাটি চুরি ইত্যাদির জন্য। বাস্তবে হলো তাই। শীলাবতী নদীতে ঘাটাল ও দাসপুরে ছ'টি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। ছয় মাসে কাজ নামমাত্র হয়েছে। সরকারি বরাদ্দও যথেষ্ট নয়। বিক্ষোভের আরও একটি কারণ হলো সরকারি যে পরিকল্পনা সেটাও মান্যতা দিয়ে হচ্ছে না। এককথায় যা খুশি তাই হচ্ছে। আনাড়িপনা করে এই রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা রূপায়ণ করা যায় না। অতীতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি, তথ্য ও সত্য সকলের জানা দরকার। বিশেষ করে এই প্রজন্মের মানুষদের। সেই জন্যই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান-এর অতীত কিছুটা আলোকপাত করার চেষ্টা করলাম।
ঘাটাল মহকুমার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় 'একাশি মৌজা'র বাঁধের নাম। শীলাবতী, রূপনারায়ণ, দ্বারকেশ্বর, কেঠে, কানানদী, ঝুমি, কংসাবতী নদীসহ আরও কয়েকটি নদী-উপনদী বেষ্টিত এই 'একাশি মৌজা'। ব্রিটিশ আমলে ৮১টি মৌজাকে ঘিরে বাঁধ তৈরি হয়েছিল, মূলত বানভাসি ঘাটালের মানুষকে রক্ষা করার জন্যই, যা সার্কিট বাঁধ নামেও পরিচিত। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফলে দেশ স্বাধীন হলো। কিন্তু কৃষক সহ সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পেল না। বন্যা,খরা, বেকারত্ব,রয়েই গেল। ফলে দেশবাসীর যা হবার তাই হচ্ছে। বিশেষ করে নদীমাতৃক দেশে ভয়াবহ বন্যা থেকেই গেল। পাঁচের দশকে ভয়াবহ বন্যায় ,রাজ্যের অন্যান্য এলাকার সাথে ঘাটাল মহকুমাবাসীও বিপর্যস্ত হয়ে গেল। ঐ সময়েই সংসদে ঘাটালের এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সহ তার প্রতিকারের বিষয়টি তোলেন বাম সাংসদ নিকুঞ্জ বিহারী চৌধুরি। নিকুঞ্জবাবুর ধারালো যুক্তিপূর্ণ বক্তৃতায়, সরকার ঘাটালের বন্যা পরিস্থিত খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। সেই কমিটিই প্রথম ঘাটালে বন্যা প্রতিরোধ কিভাবে সম্ভব তার জন্য একটা সুসংহত পরিকল্পনার কথা বলেন। ১৯৫৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত মানসিংহ কমিটি বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে। মানসিংহ কমিটিই এই পরিকল্পনার নাম দেয় 'ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান'। আমাদের দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা এমনই, এই প্রকল্পটি প্রায় কুড়ি বছর পর ১৯৮০ সালে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন লাভ করে। ১৯৮৩ সালে প্রকল্পের শিলান্যাস করেন রাজ্যের তৎকালীন সেচমন্ত্রী প্রভাস রায়। সেই সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সীমাহীন বঞ্চনা, ঔদাসীন্য ও অবিচারে থমকে যায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ। এলাকার মানুষজন তৈরি করেন 'ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান সংগ্রাম কমিটি'। এই আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে চলতেই থাকে। ২০০১ সালে প্রকল্প পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের পশ্চিমবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের টেকনিক্যাল অ্যা ডভাইসারি কমিটি এই প্রকল্প অনুমোদন করে। এই কমিটিই ২০১০ সালের ১৪ জানুয়ারি গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশনে প্রকল্পের ডিপিআর জমা দেয়। ২০১৫ সালে প্রকল্প রিপোর্ট অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রকল্পের মোট এস্টিমেট মূল্য ১৭৪০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে প্রকল্প অনুমোদনের পর দশ বছর ধরে দুটি সরকার কি করছিল!! এলাকায় বিক্ষোভ তো হবেই। বন্যা দুর্গত মানুষজন মন্ত্রী, এমএলএ, এমপিদের, এলাকায় যদি ঢুকতে না দেয়,তা ভালোই তো। ঠিকই তো করছেন তাঁরা। দু’-তিন বছরে রাম মন্দির, জগন্নাথ দেবের মন্দির হয়ে যায়, সরকারি টাকাও বরাদ্দ হয়,যা সংবিধান বিরোধী। আর বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জন্য দ্রুত কাজ করা যায় না। আর টাকাও বরাদ্দ হয় না। এই হচ্ছে দুটি সরকারের ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি। অনুমোদিত প্রকল্প এলাকা হলো পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মোট ১৩টি ব্লক। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না, পাঁশকুড়া, কোলাঘাট ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দাশপুর-১ ও ২, খড়গপুর -১ (মার্জিনালী), খড়্গপুর-২, ডেবরা, মেদিনীপুর, চন্দ্রকোনা-১ ও ২, কেশপুর ও ঘাটাল। এই প্রকল্পের নির্বাহী সারাংশ হচ্ছে - প্রকল্পভুক্ত এলাকা ১৬৫৯ বর্গকিমি। রাজ্য সরকারের সুপারিশ অনুযায়ী পূর্বে রূপনারায়ণ নদী, পশ্চিমে চন্দ্রকোনা মেদিনীপুর রোড, উত্তরে শীলাবতী ও দ্বারকেশ্বরের অববাহিকার মধ্যভাগ এবং ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রোড, দক্ষিণে মেদিনীপুর হাই লেভেল ক্যানেল এ ৬ নং জাতীয় সড়ক। প্রকল্প ভুক্ত এলাকায় একাধিক নদী তাদের শাখা নদী, উপনদী এবং কৃত্রিম খাল কাটা হবে এবং দুটি প্রধান নদীর অববাহিকা কংসাবতী ১০৯৮ বর্গ কিলোমিটার এবং শিলাবতী ৫৬৮ বর্গ কিলোমিটার সংস্কার করা হবে। ক্ষীরাই বক্সী ড্রেনেজ স্কিম সম্পূর্ণ করা হবে। কলাইচণ্ডী খালের মিলনস্থলে স্লুইস গেট বসানো হবে। পুনর্বাসনের জন্য সাত হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। কিন্তু কোথায় হবে তা বলা নেই। নতুন কাঁসাই নদী কাপাসটিকরী থেকে ঢেউডাঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সংস্কার করে উভয় দিকের বাঁধ বেঁধে গোবিন্দনগরে লক গেট বসানো হবে।
প্রকল্পের রূপায়ণ যেভাবে হচ্ছে, তাতে স্থানীয় মানুষের ব্যাপক বিক্ষোভের সম্মুখীন হতে হচ্ছে নির্মাণকারীদের। ফলে কোথাও কোথাও কাজ বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। কাজের ধরন, নদীপথ সংস্কার, সাঁকো বা ব্রিজ তৈরি, ড্রেনেজ স্কিম, শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ ও নিকাশির জন্য জমি-বাড়ি অধিগ্রহণ করে খাল কাটা ইত্যাদি। খাল কেটে কুমির আনা হচ্ছে ঘাটালবাসীর অভিমত এখন এটাই।
এ প্রসঙ্গে জানাই, গত বছর (২০২৪) বন্যার করাল গ্রাসে ভেঙে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘাটাল-আরামবাগ-খানাকুলের নদীবাঁধগুলি বিগত এক বছরেও নতুন করে বাঁধা বা মেরামত করা পুরোপুরি সম্ভব হয়ে উঠলো না সেচ দপ্তরের উদাসীনতায়। সেই সেচ দপ্তরের অপরিকল্পিত কাজের খেসারত দিয়ে চলেছেন বন্যা এলাকার বিধ্বস্ত মানুষজন।
কবে তাঁদের এই যন্ত্রণার প্রতিবিধান হবে তা কেউ জানে না। এই অংশের সমস্যার সমাধান সম্ভব ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান ও নিম্নদামোদর পরিকল্পনা এক সুতোয় গেঁথে নদী বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদদের দ্বারা নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ। আশ্চর্যের বিষয় হলো যা পরিকল্পনার মধ্যে নেই সেটা হলো:-
ঘাটালের বিখ্যাত কুঠিবাজার অধিগ্রহণ করে ৩৫ কিমি খাল কাটা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এটা জানার পর ঘাটাল শহরের মানুষ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। এটা তো পাগলদের পরিকল্পনা!! এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে, ঘাটাল শহরের অবলুপ্তি ঘটবে বলে প্রতিবাদী শহরবাসীর অভিমত। প্রকল্পে রূপনারায়ণ নদী ড্রেজিং-এর কথা বলা নেই। বিপদ বাড়বে আরামবাগ মহকুমা সহ হাওড়ার একটা অংশের মানুষের। আবার এটাও শোনা যাচ্ছে অনুমোদিত প্রকল্প ধরেও কাজ হচ্ছে না। ফলে ঘাটালের ঐতিহ্যবাহী কুঠিবাজার তুলে দেবার চক্রান্ত করা হচ্ছে। শীলাবতী ও কংসাবতী ড্রেজিং হলে তার জল তো রূপনারায়ণ নদী দিয়েই যাবে। রূপনারায়ণ নদী কোলাঘাট হয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার গেঁওখালিতে হুগলী নদীতে মিলিত হচ্ছে। হুগলী নদী সহ এই গেঁয়োখালি থেকে ড্রেজিং করে উপর দিয়ে উঠে শিলাবতী, দ্বারকেশ্বর,ঝুমা ,মুন্ডেশ্বরী, দামোদর নদীর জলধারণ ক্ষমতা যদি বাড়ানো না যায়, তাহলে কোলাঘাট, আরামবাগ, হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ বিপদে পড়বে। এমনকি ঘাটাল বাদ যাবে না।
এই মাস্টার প্ল্যানের বিপদ কি—
এমনিতেই ঘাটালবাসী এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। আরামবাগ মহকুমা সহ হাওড়ার বিস্তীর্ণ অংশের মানুষজন বিপদগ্রস্ত হবেন বলে বিভিন্ন ভাবে আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন। দ্বারকেশ্বর নদী আরামবাগের সালেপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তেমোহানি থেকে চলে যাচ্ছে খানাকুল ১ নং ব্লকের ঠাকুরানিচক পঞ্চায়েতের টুঙ্গির ঘাট পর্যন্ত। এটাকে সেখপুর সার্কিট বলা হয়। ঝুমি নদী তেমোহানির পূর্বপাড় হয়ে বাঁধ বরাবর পশ্চিম মেদিনীপুর ও হুগলীর কয়েকটি গ্রামের পাশ দিয়ে ঠাকুরানিচক পঞ্চায়েতের বলরামপুর টুঙ্গির ঘাটে দ্বারকেশ্বরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে বন্দরের কাছে। শীলাবতীও এদের সঙ্গে মিলিত হয়ে এখান থেকেই রূপনারায়ণ নদীর নামকরণ হয়েছে।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান এটাকে বাদ দিয়েই কার্যকরী হচ্ছে। ফলে সমগ্র সেখপুর সার্কিটভুক্ত গ্রামগুলি জলের তলায় যেমন চলে যাবে তেমনি মুণ্ডেশ্বরী ও দামোদরের সাথে সব সংযোগ হয়ে যাবে। ফলে চরম বিপদের সম্মুখীন হতে হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষদের। আবার "দলকার জলা"হুগলী জেলার গোঘাট ও ঘাটালের কিয়দংশ নিয়ে বিস্তৃত। গোঘাট দিয়ে বহমান আমোদর ও তারাজুলি নদী মিলিত হচ্ছে ঘাটালের মনসুকার কাছে হুরহুরে খালে। এই হুরহুরে খাল সংস্কার হচ্ছে। এই খালে একটি সঙ্কীর্ণ সেতু নির্মাণ হয়েছে। ফলে যে পরিমাণ জল যাবার কথা তা যাচ্ছে না। বাড়তি জল দলকার জলায় থেকে গিয়ে ব্যাক প্রেসারে গোঘাটের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত প্লাবিত হয়ে গেছে। প্রতি বছরই হয়। এই বৎসর বেশি। সমুদ্র হয়ে আছে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, নিম্ন-দামোদর পরিকল্পনাকে বাদ দিয়ে সুসংহতভাবে রূপায়িত হওয়া কার্যত অসম্ভব ও অবাস্তব। প্রয়োজন, কংসাবতীর ব্যারেজ ও ডিভিসি’র ব্যারেজের জমে থাকা হাজার হাজার কোটি টন পলি সরিয়ে এগুলির জলধারণ ক্ষমতা বাড়ানো। দুটি পরিকল্পনারই নদীর উৎসস্থল থেকে ড্রেজিং করে আসতে হবে, যাতে তাদের নাব্যতা বৃদ্ধি পায়। তবেই সম্ভব বন্যা প্রতিরোধ সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষদের উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ। যাতে চীনের মতোই দুঃখের দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী দ্বারকেশ্বর,শিলাবতী, ঝুমি ,রূপনারায়ণের ভয়াবহতা বন্ধ করে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক পরিকল্পনা করলে এলাকায় উন্নয়নের বন্যা বয়ে যাবে এবং সব কূল বাঁচবে। তাই এই সরকারের ঘুম ভাঙানোর জন্য, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য চাই তীব্র গণআন্দোলন ও অকুতোভয় মানসিকতা। শিলাবতী, রূপনারায়ণ,দামোদর মুণ্ডেশ্বরী, ঝুমি নদীর দু’পারের মানুষজনের বুকে জগদ্দল পাথরের মতন ফি বছর বন্যা চেপে বসেছে। এই পাথর একমাত্র সরাতে পারে এবং মানুষের দুঃখ ঘোচাতে পারে তীব্র শ্রেণি আন্দোলন। এই নদীগুলির তীরে যাঁরা বসবাস করেন তাঁরাই বোঝেন জলযন্ত্রণার জ্বালা। সেই জ্বালার অংশীদার হয়েই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। হয় এসপার নয় ওসপার। ওসপার করেই ছাড়তে হবে। এই হোক অঙ্গীকার।
Comments :0