Md Salim Jalpaiguri

ভাগাভাগি রুখে জীবনের পক্ষে একজোটে লড়াইয়ের আহ্বান সেলিমের

রাজ্য

শুক্রবার জলপাইড়িতে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির বিশেষ অধিবেশনের সমাবেশে মহম্মদ সেলিম। ছবি: প্রবীর দাশগুপ্ত

দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি

আজকে বিপদের সময়ে আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবন-জীবিকা, মূল্যবৃদ্ধি, আবাস, একশো দিনের কাজের প্রশ্ন নিয়ে লড়াই করতে হবে। খেতমজুরের মজুরি, বেকারের কাজ, কৃষকের ফসলের দামের জন্য লড়াই করতে হবে। ভাগাভাগির ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। 
শুক্রবার জলপাইগুড়িতে জনসভায় এই মর্মে আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ অধিবেশনকে কেন্দ্র করে হয়েছে এই জনসভা। বক্তব্য রেখেছেন মহিলা সমিতির সভাপতি পিকে শ্রীমতী, রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ, রাজ্য সভাপতি জাহানারা খান, মহিলা নেত্রী সুভাষিণী আলি, দেবলীনা হেমব্রম সিআইটিইউ নেতা জিয়াউল আলমও। 
সদ্য উত্তরবঙ্গে সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি’র প্রচার করেছেন সরকারি অনুষ্ঠান থেকে। 
সেলিম বলেন, মোদী আবার বলছেন দুর্নীতিগ্রস্তরা কেউ বাইরে থাকবে না। ২০১৯’র আগে বলেছিলেন একই কথা। আর যেই ভাইপোর কাকুর গলার স্বর পাওয়া গেল, যেই বোঝা গেল দুর্নীতির সঙ্গে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’র যোগ আছে, যেই বোঝা গেল দুর্নীতির টাকা কালীঘাট থেকে জমা হয়েছে, এখন আর বিজেপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও কথা বলে না। তা’হলে মোদীর কথা বিশ্বাস করবেন? ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর বলেছিল সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। আর পর্যটকরা খুন হলেন, তার দায় বিজেপি সরকার নেবে না? মুর্শিদাবাদে দাঙ্গার সময় আমরা যেমন বলেছি দায় নিতে হবে রাজ্য সরকারকে তেমনি পহেলগাম হামলার দায়ও বিজেপি সরকারকে নিতে হবে। 
তৃণমূল যা কিছুর দায় ‘বাংলাদেশী’ বলে এড়াতে চাইছে। আর বিজেপি বলছে ৩-৪ কোটি বাংলাদেশী রব তুলছে। অথচ এরাই জনগণনা করল না। তা’হলে বুঝলে কী করে কারা বাংলাদেশী। আসলে লক্ষ্য করা হচ্ছে বাংলাভাষী গরিব শ্রমজীবী মানুষকে। অন্য রাজ্যে বাংলার থেকে কাজ করতে যাওয়া মানুষকে আক্রমণের লক্ষ্য বানানো হচ্ছে। কারও ধর্ম, ভাষা দেখে নাগরিকত্ব ঠিক করতে পারো না।  
সেলিম বলেন, মমতা ব্যানর্জি সরকারে এসেই বলেছিলেন মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রাখো। বলেছিলেন কারণ তিনি জানতেন চুরি-জোচ্চুরি, লুট হবে। কেউ প্রতিবাদ না করতে পারে তার জন্য হক কথা বলার অধিকার, সংগঠিত প্রতিবাদ করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। বললেন মিটিং-মিছিল, সভা, ধর্মঘট করা যাবে না। কিন্তু লাল ঝান্ডা দমে যায়নি। জেল-জরিমানা, মিথ্যা মামলাতেও মুখ বন্ধ করতে পারেনি। কেবল আমরা নই, রাজ্যের সব মানুষ আক্রমণের শিকার। তাঁরা অন্যায় অত্যাচারের শিকার। সে কারণেই এককাট্টা হয়ে লড়তে হবে। দুর্নীতি স্কুল বা মাদ্রাসা দু’ক্ষেত্রেই হয়েছে। বিজেপি বলল স্কুল আলাদা, মাদ্রাসা আলাদা। হিন্দু আলাদা, মুসলিম আলাদা। ভাগাভাগি করে আন্দোলনের শক্তি কমিয়ে দিতে চাইছে। আসলে তৃণমূল সরকারের হাত শক্ত করছে বিজেপি’র বিভাজনের রাজনীতি। কখনও উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ, কখনও রাজবংশী-মতুয়া, কখনও তপশিলি, কখনও মুসলিম- নানাভাবে ভাগ করছে। আমরা বলছি, প্রতিটি জনগোষ্ঠীর আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য আছে। আমরা সব বৈচিত্রকে রক্ষার পক্ষে। তিনি বলেন যে বামপন্থীরা সংবিধানের মর্মবস্তু বহুত্বের মধ্যে ঐক্যকে রক্ষার পক্ষে।
বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিদিন উন্মাদনা ছড়ানো হয়েছে। পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরও এই উন্মাদনা ছড়ানো হলো। সেলিম মনে করিয়ে দেন যে বামপন্থীরা সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু সন্ত্রাসবাদকে দমনের নামে, পাকিস্তানে তাদের ঘাঁটিতে আক্রমণের পরে, যুদ্ধ উন্মাদনা জারি রাখা হলো। 
তিনি বলেন, ‘‘বামপন্থীদের পাশাপাশি বিরোধী সব দল মোদীকে বলেছিল যে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদে মদতের বিরুদ্ধে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য যা করবেন আমরা সমর্থন করব। কিন্তু বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী কী করছেন. ওরা দলের রাজনীতি করতে ব্যস্ত। আমরা বলেছি সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ হলে, অন্য দেশের থেকে বিপদ হলে দেশের মধ্যে ঐক্যকে নিশ্চিত করতে হয়, দেশকে ভাগাভাগি করতে নেই। 
তিনি বলেন, দেশপ্রেম মানে দেশের মানুষের মধ্যে ভালবাসা, সম্প্রীতি। আজকে বিজেপি-আরএসএস নতুন দেশপ্রেম শেখাচ্ছে। ধর্মের নামে, ভাষার নামে, প্রদেশের নামে একের বিরুদ্ধে অন্যকে লড়িয়ে দিচ্ছে। 
মুর্শিদাবাদে বিজেপি এবং তৃণমূলের মদতে দাঙ্গার উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিযায়ী শ্রমিক, ছোট ব্যবসা করতেন, তাঁরা নিহত হয়েছে। তখন বিজেপি-তৃণমূল বা পুলিশের দেখা মেলেনি। আমরা ছুটে গিয়েছিলাম। যে পুলিশ আরজি কর আন্দোলনে জুলুম করেছে, শিক্ষকদের ওপর জুলুম করছে, মুর্শিদাবাদে গঠনার পাঁচ-ছয় ঘন্টা পরেও দেখা মেলেনি পুলিশের। দাঙ্গার আগুন নেভাতে দমকল যায়নি। এজন্যই জ্যোতি বসু বলেছিলেন যে সরকার না চাইলে দাঙ্গা হয় না। ঘৃণা মানুষের মগজে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য দাঙ্গা করা হয়। 
কোচবিহারে বাঁধের নামে উৎখাত করা হচ্ছে মানুষকে। চা-বাগানের জমি, তিস্তার জমি, জঙ্গলের জমি সেগুলি কর্পোরেটকে দেওয়া হচ্ছে। আর মানুষকে উৎখাত করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। মাটিগাড়ায় মাংস নিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ তুলে বিজেপি হুজ্জুতি করেছে। আমরা থানায় যাচ্ছি। নিরাপত্তার পক্ষে লড়াই করতে হবে। 
 

Comments :0

Login to leave a comment