kaliganj

তামান্না খুনের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল

রাজ্য জেলা

বুধবার বিকেলে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী জগন্নাথের রথের দড়ি টানতে দীঘার দিকে রওনা হচ্ছেন কাঁথিতে তার ভক্তবৃন্দ তাকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য কাঁথি সেন্টাল বাসস্ট্যান্ডে উদগ্রীব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, ঠিক তারই বিপরীতে ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন কালীগঞ্জের ফুটফুটে ছোট্ট স্কুল ছাত্রী তামান্নার হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে কাঁথি শহরে মিছিল এবং পথসভা করছে। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে যুবসমাজ উত্তাল। তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী নৃশংসভাবে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে ছোট্ট তামান্নার দেহ। মুখ্যমন্ত্রী চুপ। সরকার চুপ। তামান্নার অপরাধ ছিল তার বাবা সিপিআই(এম) সমর্থক। কাঁথি পোস্ট অফিস মোড়ে দোষীদের শাস্তি এবং সরকারের ও প্রশাসনের সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন, ডিওয়াইএফআই লোকাল কমিটির সম্পাদক অর্ণব মাইতি, সৈকত পণ্ডা, সেলিম ইউসুফ ও ছাত্র নেতা জগৎ প্রামাণিক ও বাপী প্রামাণিক।
কালীগঞ্জে নিহত ছাত্রী তামান্না খাতুনের হত্যার প্রতিবাদে বুধবার জলপাইগুড়ি শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এসএফআই ডিওয়াইএফআই জেলা দপ্তর সুবোধ সেন ভবন থেকে এদিন মিছিল শুরু করে ডিবিসি রোড থেকে কামারপাড়া ঢোকার মুখে কিছুক্ষণ পথ আটকে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র যুবরা। এরপর শহর কদমতলা ডিবিসি রোড দিনবাজার ঘুরে জেলা পার্টি দপ্তরে মিছিল শেষ করেন নেতৃবৃন্দ। ছিলেন ডিওয়াইএফআই জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি অর্পণ পাল, এসএফআই জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক অরিন্দম ঘোষ, যুবনেতা দেবরাজ বর্মন, বেদব্রত ঘোষ, অহিদুল ইসলাম, ছাত্রনেতা পাপাই মোহাম্মদ অর্ণব সরকার, যুবনেত্রী রুবিনা মুন্ডা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এদিন তামান্নার খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ও পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবীতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও পথ অবরোধ হয়। কোলাঘাট ১ এরিয়া কমিটির ডাকে কোলাঘাট বাজারে মিছিল হয়। অন্যদিকে খেজুরীর বিদ্যাপীঠে মিছিল শেষে অবরোধে সামিল হন সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থক ও সাধারণ মানুষও। পাশাপাশি মংলামাড়ো বাজার, ভগবানপুর বাজার, হলদিয়া, পাঁশকুড়া, মুগবেড়িয়া, মহিষাদলেও এদিন প্রতিবাদ মিছিল হয়।
তামান্না খাতুনের হত্যার প্রতিবাদে বুধবার আলিপুরে সোচ্চার হলেন আইনজীবীরাও। এদিন অল ইন্ডিয়া লইয়ার্স ইউনিয়ন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির আহ্বানে আলিপুর জজ কোর্ট চত্বরে জেলার কেন্দ্রীয় ধিক্কার মিছিল ও প্রতিবাদ সভা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক গৌতম চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রজিৎ চ্যাটার্জি, মননকর রায়, শেখ ওমিসহ অন্যান্য আইনজীবীরা। সভা পরিচালনা করেন ইউনিয়নের জেলা সভাপতি ইন্দুভূষণ দাশ। নৃশংস এই হত্যার ঘটনায় হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান আইনজীবীরা।
বুধবার সিপিআই(এম) খণ্ডঘোষ-১ এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে এদিন খণ্ডঘোষ থানা ঘেরাও হয়। প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও কালীগঞ্জে উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের বোমা হামলায় তামান্না খুনের বিচারের দাবীতে থানা ঘেরাও হয়। থানার বাহিরে ডেপুটেশনে বিক্ষোভ মিছিলে পর সভায় বক্তব্য রাখেন, কৃষক নেতা বিনোদ ঘোষ, এরিয়া সম্পাদক বিশ্বরূপ হাজরা প্রমুখ।
বুধবার সিপিআই(এম) রায়না -১ পূর্ব ও পশ্চিম এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে রায়না থানায় বিক্ষোভ দেখান হয় এবং শেষে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। এই ডেপুটেশনে ছাত্র যুব মহিলা ও ক্ষেতমজুর নেতৃত্ব অংশগ্রহণ করেন। বাহিরে ছাত্র যুব ও শ্রমিক ও পার্টি নেতৃত্ব বক্তব্য রাখেন। দীর্ঘসময় পথসভা ও বিক্ষোভ চলে।  পথ অবরোধ করে মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানো হয়। বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে মানুষ ধিক্কার  জানিয়েছেন তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাজ ও পুলিশের দলদাসত্বকে।
সোমবার বিকেল থেকেই টেলিভিশন এবং সোশাল মিডিয়াতে নৃশংস খুনের ঘটনাটি জানা মাত্র রাজ্যবাসী শিউরে উঠেছিলেন। ফুলের মতো ফুটফুটে তামান্নার খুনের ঘটনায়, তার মা বাবার কান্নায় ভেঙে পড়ার দৃশ্য দেখে মানুষ নীরব থাকতে পারেননি। বাসে ট্রেনে, চায়ের দোকানে, অফিসে সারা দিন মানুষ মুখর থেকেছেন, সোশাল মিডিয়াতে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের দুস্কৃতিকারীদের ছোঁড়া বোমার আঘাতে নিহত ১০ বছরের তামান্না খাতুনের মৃত্যুর প্রতিবাদে বুধবার হাওড়া জেলার সর্বত্র বিক্ষোভে সামিল হন সাধারণ মানুষ। কোথাও বিক্ষোভ মিছিল আবার কোথাও পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পাটির পাঁচলা এরিয়া কমিটির উদ্যোগে জয়নগর পুরাতন বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে হাওড়া আমতা রোডে মিছিল শেষে হাওড়া আমতা রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এছাড়াও লিলুয়া ভট্ট নগর থেকে বেলতলা, বেলগাছিয়া পার্টি অফিস থেকে কাজি পাড়া, বালি খাল থেকে বেলুড় বাজার, সাঁকরাইল দরগা তলা থেকে চাঁপাতলা মোড পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বহু সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন।
তামান্না খাতুন কে নৃশংস ভাবে খুনের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি ও পুলিশ মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবীতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়  ১১টি স্থানে বিক্ষোভ মিছিল সহ প্রতিবাদ সভা হয়। বিক্ষোভ মিছিলে ওঠে স্লোগান, দাবি ওঠে ’‘রক্ত খেকো তৃণমূল কংগ্রেস বাংলা থেকে হাত গুটাও’’।
তামান্না খাতুনের খুন হওয়ার প্রতিবাদে ও দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে ধিক্কার সভা হয় সিপিআই(এম) বসিরহাট দক্ষিণ -১এরিয়া কমিটির উদ্যোগে। বসিরহাট শহরের প্রাণকেন্দ্র টাউনহল সংলগ্ন স্থানের সভায় সভাপতিত্ব করেন কিঙ্করকান্তি রায়। বক্তব্য রাখেন পার্টি নেতা রাজু আহমেদ,দীপেশ চৌধুরী, আনারুল ইসলাম, শুভঙ্কর সাহা, অরিত্র বিশ্বাস,অধ্যাপক হীরণ মুখার্জি, যুবনেতা সুমিত ঘোষ, সরকারি কর্মচারী আন্দোলনের নেতা সুশান্ত মুখার্জি, শিক্ষক নেতা রঞ্জিত মুখার্জি। 
নেতৃবৃন্দ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষকে পথে নেমে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। অভিযোগ করে বলেন, এই খুন পরিকল্পিত।বাবা পরিযায়ী শ্রমিক। বামপন্থায় বিশ্বাসী। সেই কারণে তার মেয়ে তামান্নাকে জীবন দিতে হলো।এ লজ্জা বাংলার। রুটি রুজির লড়াইকে দুর্বল করে দিতে বিভাজন তৈরি হিন্দু মুসলিমদের ভাগ করার চক্রান্ত চলছে। আসুন এলড়াই আমাদের সবার। সবাই এক হয়ে একসাথে গলা মিলিয়ে বলি বিভাজন চাই না।
অন্যদিকে এদিন বামপন্থী গণসংগঠনগুলির ডাকে সন্দেশখালি ১নং ব্লকের কালিনগরে প্রতিবাদ মিছিল হয়। মিছিল কালিনগর বাজার, ফেরিঘাট পরিক্রমা করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন কৃষক নেতা রঞ্জিত নাথ, ভক্ত দাস,ধনঞ্জয় মাহাতো যুবনেতা অমর মাহাতো, মহিলা নেত্রী রেখা মৃধা,আদিবাসী অধিকার মঞ্চের রবীন মাহতো, প্রদ্যুৎ দাস প্রমুখ।
দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার সিপিআই( এম) দাদপুর এরিয়া কমিটির উদ্যোগে মিছিল ও সভা  হয়। পুইনান হাটতলা থেকে মিছিল বিভিন্ন পথ ঘুরে শেষে পুইনান সিনেমাতলায় প্রতিবাদ সভা হয়।  
বুধবার গলসী ২ এরিয়া কমিটির ডাকে তামান্না খুনের প্রতিবাদে ধিক্কার মিছিল ও পথসভা সংগঠিত হয়। মিছিল থেকে দাবি উঠে অবিলম্বে তামান্নার খুনিদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে হবে। পথ চলতি মানুষের বিশেষ আকর্ষণ দৃষ্টিগোচর হয় ও নিজেদের মোবাইলে এই মিছিলের ছবি ও পথসভা ক্যামেরা বন্দী করে। 
তামান্নাকে পরিকল্পিত খুনের প্রতিবাদে বুধবার বিকাল দমদমের গরুহাটা মোড়ে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, মহিলা সমিতির উদ্যোগে পথসভা ও রাস্তা অবরোধ হয়। ছিলেন যুবনেতা সফিজুল আলি, কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী, মহিলা নেত্রী অর্পিতা চক্রবর্তী, ছাত্র নেতা শেখ সাহিদ প্রমুখ।

কালীগঞ্জে উন্মত্ত তৃণমূল বাহিনীর ছোঁড়া বোমায় খুন হওয়া তামান্না খাতুনের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবী ও শিলিগুড়ি শহরের আইনশৃঙ্খলার ভেঙে পড়ার বিরুদ্ধে বুধবার শিলিগুড়ির অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে সিপিআইএম দার্জিলিং জেলা কমিটির ডাকে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। 
তামান্না খুনের প্রতিবাদে এবং দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার মধ্যমগ্রাম সিপিআই(এম)’র উদ্যোগে মধ্যমগ্রাম আরতি সিনেমা হল থেকে মধ্যমগ্রাম চৌমাথা পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল হয়। 
ধিক্কার মিছিল হয় বীরভূম জেলার মল্লারপুরেও। এদিন বৃষ্টি ও প্রকৃতিক দূর্যোগকে উপেক্ষা করে সিপিআই(এম) এর মিছিল সারা মল্লারপুর বাজার পরিক্রমা করে। পরে বাহিনা মোড়ে পথসভায় বক্তব্য রাখেন, পার্টি নেতা তমালচন্দ্র দে, অরূপ বাগ প্রমূখ। নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, বিজয় উল্লাসের নামে বামপন্থীদের উপর বোমা মারা। এ কেমন বিজয় মিছিল?এতটুকু শিশুকে সকেট বোমা মেরে খুন করতে তাদের হাতটা এতটুকু কাঁপনি? এর আমরা তীব্র ধিক্কার জানাই। এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করে কঠোর সাজা দিতে হবে পুলিশকে।
তামান্না খাতুনের খুনিদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছে সারা কয়লাঞ্চলও। তামান্ন খাতুনের খুনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখালো সিপিআই(এম) রানিগঞ্জ এরিয়া কমিটি। নেতাজি মূর্তির সামনে এই বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে পার্টি নেতৃবৃন্দ বলেন, তৃণমূল বিজেপির সেটিংয়ের ফলে নির্বাচন কমিশনের অপদার্থতায় পশ্চিমবঙ্গে প্রতি নির্বাচনে খুন হয়। এবারের একটি উপনির্বাচনেও তামান্না খাতুনকে খুন হতে হল। পুলিশমন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনকে এর দায় নিতে হবে। তাদের দাবি, সমস্ত তৃণমূলের গুণ্ডাদের জমা করা আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা উদ্ধার করে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। এদিন বল্লভপুরে ও জেকে নগর বাজারেও অনুরূপ প্রতিবাদ সভা হয়। তৃণমূলের অপশাসন ও দুষ্কৃতীরাজের বিরুদ্ধে সভা থেকে ধিক্কার জানানো হয়।সভাগুলি থেকে  তৃণমূলের গুণ্ডাদের বিরুদ্ধে বাম আন্দোলন তীব্র করার ডাক দেওয়া হয়।

Comments :0

Login to leave a comment