EDITORIAL

বিরোধী ঐক্যের বড় এক ধাপ

সম্পাদকীয় বিভাগ

editorial bengali news

নিজের এক্তিয়ার এবং অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিপত্যের যে নির্লজ্জ প্রদর্শনী করতে চলেছেন তাতে দেশময় ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। তার আঁচে অনেকটাই উর্বর হয়েছে বিরোধী ঐক্যের জমি। ২৮‍‌ মে মোদী উদ্বোধন করতে চলেছেন নব নির্মিত সংসদ ভবন। তার জন্য লোকসভার অধ্যক্ষের তরফ থেকে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছেছে রাজনৈতিক দলগুলির দপ্তরে। 

লোকসভার অধ্যক্ষ নাকি সংসদ ভবন উদ্বোধনের জন্য মোদীকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মোদী সেই আমন্ত্রণ সানন্দে গ্রহণ করে ভবন উদ্বোধনে উন্মুখ হয়ে থাকলেও প্রায় সমস্ত বিরোধী দল সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে। ১৯টি বিরোধী দল যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠান বয়কট করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। অন্য দুই-একটি দল যৌথভাবে ঘোষণা না করলেও স্বতন্ত্রভাবে বয়কটের কথা জানিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ মোদী কর্তৃক সংসদ ভবন উদ্বোধনকে ঘিরে বিরোধী ঐক্যের একটা সার্বিক চেহারা ফুটে উঠেছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনা অত্যন্ত তাৎপর্যবাহী।

নতুন সংসদ ভবন নির্মাণকে ঘিরে বিতর্ক গোড়া থেকে আছে। এবার তার উদ্বোধনকে ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে পৌঁছে গেছে। সংসদ ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী, সেখানে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কেই-ই আমন্ত্রিত নন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের পীঠস্থান সংসদ, সাংবিধানিকভাবে যে সংসদের প্রধান রাষ্ট্রপতি তাকে বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন কোনও অবস্থাতেই বিরোধীরা মেনে নিতে রাজি নন। তাদের স্পষ্ট অভিমত এই উদ্বোধন রাষ্ট্রপতি ছাড়া অন্য কারোর হাতে নিতান্তই অশোভন।


লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে সংসদ এবং সংসদ ভবন। তার সাংবিধানিক প্রধান রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতিই সংসদের অধিবেশন ডাকেন এবং তাঁর ভাষণের মধ্য দিয়েই শুরু হয় অধিবেশন। অধিবেশনের সমাপ্তিও করেন রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রী সরকার পক্ষের নেতা এবং সরকারের প্রধান। রাজ্যসভার প্রধান উপ-রাষ্ট্রপতি। যিনি নতুন ভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করছেন সেই ওমপ্রকাশ বিড়লা কেবলমাত্র লোকসভার অধ্যক্ষ। এই অবস্থায় কোন যুক্তিতে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন এবং ওমপ্রকাশ আমন্ত্রণপত্র পাঠাচ্ছেন। গ্রহণযোগ্য কোনও জবাব সরকারের কাছে নেই।

সংকীর্ণ ভোটের স্বার্থে উগ্র হিন্দুত্বের মনুবাদী দল বিজেপি দলিত, আদিবাসী নিয়ে কাঁদুনি গায়। আগের রাষ্ট্রপতি দলিত রামনাথ কোবিন্দকে নিয়ে মোদীদের আদিখ্যেতার অন্ত ছিল না। তখন দলিতদের জন্য কত ভাষণ, কত ভালো ভালো কথা। যেন মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে একজন দলিতকে রাষ্ট্রপতি করে দলিত সমাজকে উদ্ধার করে দিয়েছে। বস্তুত রাষ্ট্রপতি হলেও দলিতরা সম্মান ও মর্যাদা পাননি। 

পদে পদে উচ্চবর্ণের হিন্দুত্ববাদী গেরুয়াবাহিনীর কাছে অপমানিত, লাঞ্ছিত ও প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছে। স্বয়ং দলিত রাষ্ট্রপতিকে যোগ্য সম্মান দেননি নরেন্দ্র মোদীরা। এই নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাসের সময় কোবিন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। রাষ্ট্রপতিকে না ডেকে নিজে শিলান্যাস করে মোদী দলিতকে অসম্মান করেছেন।
এখন উদ্বোধনের সময় একই মানসিকতার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। ঘটা করে দেশময় সাড়া জাগিয়ে একজন আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে। 

প্রচারের জৌলুশে এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছে আদিবাসীদের হিন্দুত্ববাদীরা সম্মান করে। কিন্তু ওটা যে ভোটের লক্ষ্যে নাটুকেপনা সেটা প্রতিদিনই প্রমাণিত হচ্ছে দেশের কোনও না কোনও জায়গায়। সেই মহিলা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনে ব্রাত্য। প্রচারে সব আলো, ভাবমূর্তির সব জৌলুশ, খ্যাতির সব অংশীদার, কীর্তির সব ধ্বজা একা মোদীই গ্রোগ্রাসে গিলতে চান। 

আদিবাসী রাষ্ট্রপতি যাতে ত্রিসীমানায় আসতে না পারে তার ব্যবস্থা হয়েছে।


যাইহোক গণতন্ত্র নিধনের হিন্দুত্ববাদী কাজ নির্লজ্জভাবে মোদীরা করেছে। এখন বিরোধীদের কাজ সমুচিত জবাব দেওয়া। অনুষ্ঠান বয়কট তার প্রথম পদক্ষেপ। সমাপ্তি পদক্ষেপ হবে আগামী লোকসভা নির্বাচনে এই হিন্দুত্ববাদী স্বৈরাচারী দলকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

আর সেটা সম্ভব বিরোধী দলগুলির সার্বিক ঐক্যের মধ্য দিয়ে। নির্বাচনে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ বিজেপি’র বিরুদ্ধে ভোট দেয়। এই ভোট ভাগ হয়ে যায় বিভিন্ন দলের মধ্যে। মাঝখান থেকে অল্প ভোট পেয়ে জিতে যায় বিজেপি। যদি বিরোধীরা জোটবদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই করে তাহলে খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে মোদীর দল। বিরোধীরা যদি নিজেদের মধ্যেকার মতবিরোধগুলি সাময়িকভাবে দূরে রেখে বিজেপি’কে হারানোর লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে বিজেপি’র শাসনের এখানেই ইতি।


 

Comments :0

Login to leave a comment