— তৃণমূল-বিজেপি’র দুর্গন্ধময় কর্মকান্ডকে ভাগাড়ে পাঠিয়ে লাল ঝাণ্ডার রাজনীতিকে সামনে নিয়ে আসার আহ্বান জানালেন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখার্জি। বুধবার কলকাতায় ভবানীপুর পাঠাগারের সামনে নভেম্বর বিপ্লব বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত একটি সভায় তিনি বলেছেন, তৃণমূলকে শায়েস্তা করার কথা বলেছিল বিজেপি। অথচ চাল চুরি, কয়লা চুরি, চাকরি চুরি করা তৃণমূলের সব নেতারা জামিনে মুক্ত হয়ে গেল। এই ভাগাড়ের রাজনীতিকে ভাগাড়ে পাঠিয়ে লাল ঝাণ্ডার রাজনীতিকে সামনে নিয়ে আসতে না পারলে মানুষের কোন সমস্যার সমাধান করা যাবে না।
এদিনের সভায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, বেঁচে থাকতে একমুঠো খাবার জোগাড়ের চেষ্টায় সবাই যখন সারাদিন খাটছে, স্কুল হাসপাতাল সব লাটে উঠে যাচ্ছে, তখন এর জন্য দায়ী রাজনীতি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। চাল চুরি করা খাদ্যমন্ত্রী এখন জেলের বাইরে, গোরু চুরি করা অনুব্রত জেলের বাইরে, শিক্ষকের চাকরি চুরি করা শিক্ষামন্ত্রীও জেল থেকে বেরিয়ে এলেন এবং বলছেন, ‘অন্যের যদি দু’জন থাকে, আমার তাহলে একজন থাকলে দোষ কি’! ছিঃ ছিঃ। মানুষকে বুঝতে হবে, এটা মজার বিষয় নয়। মানুষের দুর্দশার পরিস্থিতি পালটানো সম্ভব, কিন্তু সেটা পালটাতে হলে আগে এই ভাগাড়ের রাজনীতিকে ভাগাড়েই পাঠাতে হবে। যে লাল ঝাণ্ডা সব মানুষকে কাজ শিক্ষা স্বাস্থ্য সহ সমস্ত অধিকার দেয়, সংখ্যালঘুদের অধিকার দেয়, মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, সেই লাল ঝাণ্ডার রাজনীতিকে সামনের সারিতে নিয়ে আসতে হবে। নভেম্বর মাসে, লেনিনের মাসে সেই লড়াইয়ের শপথ নিতে হবে।
তিনি একথাও বলেন, তৃণমূল থেকে একদল নেতা বেরিয়ে বিজেপি’তে গিয়ে বলেছিলেন, চুরি দুর্নীতি বন্ধ করবে, তৃণমূলকে শায়েস্তা করবে। উলটে যেভাবে সবাই জেল থেকে বেরিয়ে এলো, তাতে স্পষ্ট, চুরি দুর্নীতির রাস্তাটা দুই দল মিলে আরও চওড়া করছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সেই সুযোগ ওদের দেওয়া চলবে না।
শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা উল্লেখ করে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেছেন, জেলাগুলিতে সরকারি স্কুলগুলির দিকে তাকান, ছেলেমেয়েদের জামাকাপড়, পায়ের জুতো, চুলের ফিতে, পিঠের ব্যাগ দেখুন, বুঝতে পারবেন এরা কোন ঘর থেকে আসছে। মুখ্যমন্ত্রী যে প্রাইভেট স্কুল কলেজের কথা বলছেন লাখ লাখ টাকা দিয়ে ওরা সেখানে পড়তে যাবে? গরিবের শিক্ষাব্যবস্থাটা পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। লেখাপড়ার ওপর মানুষের আস্থা চলে যাচ্ছে, স্কুল ছেড়ে বাইরের রাজ্যে কাজের জন্য চলে যাচ্ছে। এরাজ্যে কাজ কোথায়? আমরা বামপন্থীরা কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারকে চাপ দিয়ে গ্রামে একশো দিনের কাজের আইন তৈরি করিয়েছিলাম, সেটাও তৃণমূল বিজেপি মিলে বন্ধ করে রেখেছে। এই রাস্তার ধারে ধারে শপিং মল আর এটিএম কাউন্টারে যাঁরা সিকিওরিটি গার্ডের কাজ করছেন, কিংবা রাস্তা নালা সাফ করছেন তাঁরা কত বেতন পাচ্ছেন? বাংলার নতুন প্রজন্মের সামনে ভবিষ্যৎ কি? পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ কি বসে বসে শুধু মোবাইলে রিল দেখবে? মদের দোকানে লাইন দেবে?
তিনি বলেন, এসব প্রশ্নই মানুষের মনে আছে, তাঁরাও পরিস্থিতি পালটাতে চান, সাহস পাচ্ছেন না। গুণ্ডাদের ভয় পাচ্ছেন। কোন গুণ্ডা? দুই ধরনের গুণ্ডা আছে। এক, যারা তামান্নাকে খুন করে, অভয়াকে ধর্ষণ করে খুন করে। এরা হলো বেসরকারি গুণ্ডা। রাজ্যের সবচেয়ে বড় এমপ্লয়ার তৃণমূল এদের নিয়োগ করে নিজেদের লুটের রাজত্ব চালানোর জন্য। আরেক ধরনের গুণ্ডা প্রশাসনে বসানো আছে, এরা সরকারি গুণ্ডা। তারা মানুষের কথা শোনে না, মানুষ প্রতিবাদ করলে মানুষের বিরুদ্ধেই মামলা করে।
এই গুণ্ডাদের জোরেই নির্বাচনী প্রক্রিয়াতেও তৃণমূল লুট চালায় বলে অভিযোগ করেছেন মীনাক্ষী মুখার্জি। তিনি বলেছেন, এসআইআর নিয়ে বিডিও অফিসে তৃণমূলের কর্মীরা বসে মিটিং করে কি করে? প্রমাণিত হলো, বিডিও অফিসগুলি তৃণমূল চালাচ্ছে আরএসএস’কে সন্তুষ্ট করার জন্য। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা হতো না, এমনকি বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে কিংবা শিখ বিরোধী দাঙ্গার সময়েও এখানে দাঙ্গা হয়নি। এখন নাগপুরকে সন্তুষ্ট করতে তৃণমূল সাম্প্রদায়িক বিভাজনের উত্তেজনাকেও নিয়ে এসেছে। নইলে যে ভবানীপুরে রাজ্য সরকারের মাথারা থাকে সেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা হয় কি করে?
এদিন সিপিআই(এম) ভবানীপুর-১ এরিয়া কমিটির উদ্যোগে এই জনসভা হয়। সভায় এসআইআর’র নামে বিদ্বেষ বিভাজন রুখে রুটি-রুজির লড়াইয়ে মেহনতী মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্টিনেতা রাজেন্দ্র প্রসাদ। সভা পরিচালনা করেন সৌম্যজিৎ রজক।
Minakhshi Bhawanipur
রাজ্য লাটে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে আনুন লাল ঝাণ্ডাকেcই: : মীনাক্ষী
×
Comments :0