গল্প — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
রিয়া আর সাদু
সৌরীশ মিশ্র
মামাতো দিদি মামের সাথে রথের মেলা ঘুরতে এসেছে বাবাই। মামদের বাড়ির একেবারে কাছেই বড় একটা রথের মেলা বসে। ওখানেই এসছে ওরা।
গতকালই মামার বাড়িতে এসেছে বাবাই। আজ থাকবে। কাল চলে যাবে বাড়ি। স্কুল আছে না ওর পরশু!
আজ বিকেলে মাম কলেজ থেকে ফিরেই বাবাইকে বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে ঘুমোতে দেখে ঠেলা দিয়ে প্রথমে ডেকে তুলল ওকে। তারপর সে বলে চলল টানা বাবাইকে, "সকালে কলেজে যখন যাচ্ছিলাম, দেখে গেলাম, তুই ঘুমোচ্ছিস। এখন ফিরলাম, দেখছি, এখনও ঘুমোচ্ছিস। কাল এখানে তোর আসা ইস্তক দেখে যাচ্ছি, শুধু ঘুমোচ্ছিস আর ঘুমোচ্ছিস। আর, কোনো সময় নেই, অসময় নেই, যখন তখন। যেখানে সেখানে, কখনো বিছানায়, তো কখনো সোফাতেই। কি ঘুমোতে পারিস রে! ঘুমের যদি কোথাও কোনো কম্পিটিশন হয় শুনতে পাই, দেখিস, আমি ঠিক তোর নাম দিয়ে দেব। আর, সেখানে যদি কুম্ভকর্ণ-ও কম্পিটিটর থাকে, আমি একেবারে সেন্ট পার সেন্ট সিওর, তুই কুম্ভকর্ণকেও হারিয়ে উইনার্স ট্রফিটা নিয়ে আসবি। চল্ চল্ উঠে পড় এবার। বেরোবো।"
মামদিদির কথা কখনো গায়ে মাখে না বাবাই। বড়রা ছোটোদের এইরকম একটু-আধটু বলেই থাকে। তাই অতো সিরিয়াসলি সব কিছু নিলে চলে না। বাবাই বিছানায় উঠে বসল। চোখ কচলাতে কচলাতে সে বলল, "কোথায় যাবে?"
"চল্ না, দেখবি কেমন মজা লাগে তোর সেখানে।"
মামদিদি মোটেই ভুল কিছুই বলেনি। ঘন্টা খানেক হোলো ওরা এসেছে এই রথের মেলায়। সত্যিই খুব মজা হচ্ছে বাবাই-এর মেলাটায় এসে।
জীবনে এই প্রথমবার কোনো রথের মেলায় এলো সে। বাবাইরা যেখানে থাকে সেখানে আশেপাশে কোথাও রথের মেলা হয় না। আর, রথের সময়ে আগে কখনও ওর আসা হয়নি মামার বাড়ি। তাই এই রথের মেলাটাতেও আসা হয়নি ওর কখনও।
ও হ্যাঁ, যা বলছিলাম, বাবাই-এর এই মেলায় এখনো অবধি মজা করার কথা, না? এই ঘন্টা খানেকের মধ্যেই ওর মামদিদি বাবাই-কে নাগরদোলা চড়িয়েছে। যা জিনিস চেয়েছে, তাই কিনে দিয়েছে। আবার, পাঁপড় ভাজা, জিলিপি তো খাইয়েইছে, এই একটু আগে পপকর্নও কিনে দিয়েছে। সেটাই মামদিদির সাথে ভাগ করে খেতে খেতে মেলার যেদিকটা এখনও দেখা হয়নি সেইদিকটায় ঘুরছে এখন ওরা দু'জন।
হঠাৎই ঘুরতে ঘুরতে একটা দোকানে চোখ আটকে যায় বাবাই-এর। সে কি একটা যেন ভাবে কয়েকক্ষণ। তারপর, মামকে বলে, "মামদিদি, দ্যাখো, কি সুন্দর সুন্দর সব ব্যাগগুলো ঐ দোকানে!"
মাম তাকায় দোকানটার দিকে। তারপর হেসে উঠে বলে, "ওরে বুদ্ধু, তোর ঐ ব্যাগ লাগবে! ওগুলো তো সব লেডিস পার্স!"
"আমি আমার জন্য বলছি নাকি!" সাথে সাথেই বলে ওঠে বাবাই। "আমি তো বলছি তোমার জন্য। আমি তো দেখেছি, তুমি ঐ ধরনের ব্যাগ খুব পছন্দ করো। তুমি তো আমাকে মেলায় এতো জিনিস কিনে দিলে, নাগরদোলা চড়ালে, যা চাইলাম তাই খাওয়ালে, আমি তোমাকে তো কিছুই দিলাম না। এখন ঐ দোকানটা থেকে একটা ব্যাগ গিফ্ট করি তোমায়, তুমি প্লিজ নাও।"
ছোটোভাইটার কথাগুলো শুনে পুরো যেন স্তম্ভিত হয়ে যায় মাম। এমন প্রস্তাব যে আশাতীত ছিল ওর একেবারেই। তার চোখের কোণে জল চিকচিক করে ওঠে মুহূর্তে। বাবাইকে টেনে নেয় নিজের কাছে সে। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেয় একটু। তারপর বাবাইকে বলে, "তুই আমায় ব্যাগ গিফ্ট করবি, দারুণ ব্যাপার। আমি নেব। কিন্তু, তুই কিনে যে দিবি বলছিস, তোর কাছে টাকা আছে নাকি!"
"মামিমা যে দিয়ে দিল এখানে আসার আগে এই দু'শো টাকার নোটটা আমায়।" প্যান্টের পকেট থেকে নোটটা বের করে মামকে দেখায় বাবাই। তারপর ফের বলতে থাকে, "বলেছিল, মেলায় আমার কিছু পছন্দ হলে কিনে নিতে। কিন্তু আমাকে তো তুমিই সব কিনে দিলে..."
মামের পরিস্কার হয় সবটা এবার। সে হাসি হাসি মুখে বলে বাবাইকে, "তাহলে, আর কি! চল্ তবে, কিনে দে আমায় একটা ব্যাগ।"
"হ্যাঁ, হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি চলো। সব ব্যাগ বোধহয় সবাই নিয়েই নিল। দেখেছো, কি ভিড় দোকানটায়! চলো চলো। ফাস্ট ফাস্ট।"
ভাই-এর কথা শুনে হেসে ফেলে মাম।
বাবাই মামের হাতটা ধরে একরকম টানতে টানতেই ওর মামদিদিকে নিয়ে চলে হাত ব্যাগের দোকানটার দিকে।
Comments :0