দীপশুভ্র সান্যাল
লাদাখ সহ হিমাচলের বিস্তীর্ণ এলাকা গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড বৃষ্টি এবং তুষারপাতের ফলে বিপর্যস্ত। এই অবস্থায় উত্তরবঙ্গ থেকে আয়োজিত পোলোগংঙ্কা পর্বত শৃঙ্গ অভিযানের অভিযাত্রীরা এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও লড়াই চালিয়ে পোলোগংঙ্কা শৃঙ্গের কুড়ি হাজার ফুট উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম হলেও আবহাওয়া আরও খারাপ হওয়াতে সেই উচ্চতা থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হন। তবে অভিযাত্রীরা সকলেই বর্তমানে সুস্থ আছেন এবং মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৫ জুলাই বেস ক্যাম্প থেকে মানালির দিকে তাঁরা রওনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই অভিযাত্রীরা প্রায় ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় বেস ক্যাম্প বা মূল শিবির স্থাপন করেন। পরের দুই দিন ১১ জনের সকলেই দুই নম্বর ক্যাম্প এ লোড ফেরি করেন। ১০ই জুলাই ক্যাম্প ওয়ান স্থাপন করা হয় প্রায় ১৭ হাজার পাঁচশো ফুট উচ্চতায়। দলের সদস্য হীরক ব্রহ্ম অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ড: স্বরূপ খান এবং সুস্মিতা সরকার বেস ক্যাম্পে তাঁকে নিয়ে থেকে যান।
দলের বাকি সদস্যরা ১১ জুলাই এক নম্বর থেকে দুই নম্বর শিবিরে প্রায় ১৯ হাজার পাঁচশো ফুট উচ্চতায় লোড ফেরি করেন। এই দিন পর্যন্ত আবহাওয়া মোটামুটি ঠিকই ছিল। পরদিন ক্যাম্প টু স্থাপন করা হয়। দলের আট জন সদস্যই এই ক্যাম্পে পৌঁছাতে সক্ষম হন। ১৩ তারিখ ভোর রাতে শৃঙ্গ আরোহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও ১২ তারিখ সন্ধ্যে থেকেই তুষারপাত শুরু হয়ে যায়, সঙ্গে শুরু হয় প্রচন্ড হাওয়া। খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেই ১৩ই জুলাই ভোর সাড়ে চারটায় দলের আট অভিযাত্রী এবং দুই জন গাইড সৃঙ্গের পথে কঠিন পাথর এবং বরফের দেয়াল ভেঙে আরোহন শুরু করেন। আবহাওয়া আরও খারাপ হওয়া শুরু হয়, তবে অভিযাত্রীরা এর মধ্যেও এগিয়ে চলেন। প্রায় ২০হাজায় উচ্চতায় তুষারপাত ও হাওয়ার পরিমান অত্যাধিক বেড়ে যায়। অভিযাত্রীরা সেখান থেকে আর এগোতে সক্ষম হননি। প্রায় ৩০ মিনিটের বেশি সময় সেই পাহাড়ের ঢালে তারা দাঁড়িয়ে থাকেন, তবে কোনো ভাবেই আবহাওয়ার কোনো উন্নতি হয় না। দলনেতা ভাস্কর দাস ও দুই জন গাইড আলোচনা করে নিচে ক্যাম্প টু তে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
ক্যাম্প টু বা দ্বিতীয় শিবিরে অনবরত তুষারপাত চলতে থাকে। বেলা ১১টায় আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হলে আবার শৃঙ্গ আরোহনের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তবে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় না। ৩০ মিনিটের মধ্যেই আবার প্রচন্ড বেগে তুষার পাত শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি খারাপ হওয়া শুরু হয়। আবহাওয়ার কোনো উন্নতি না হওয়ায় বিকেল ৪ টায় ক্যাম্প ওয়ানে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে উত্তরবঙ্গের ছয়টি অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের যৌথ এই প্রচেষ্টা এক নতুন দিক খুলে দিলো। একসাথে হাতে হাত মিলিয়ে পথ চলা, একসঙ্গে তাঁবু শেয়ার করা, একে অপর কে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া এ এক অনন্য শুভ রঙিন পথের সৃষ্টি। হয়েছে আগামীতে এই ধরণের যৌথ প্রচেষ্টা যে বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হবে সেটা আশা করাই যায় আর সেই শুরুর পতাকা উত্তোলন উত্তরবঙ্গই করে দেখালোবলে অভিমত পর্বত আরোহীদের। ।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সুরক্ষিত উত্তরের অভিযাত্রীরা আর ঝুঁকি না নিয়ে ফিরছেন মানালির দিকে।
Comments :0