ভারতে বিমান দুর্ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দেশ। ১৯৫৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশে ১৪টি বড় মাপের বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এদিনের দুর্ঘটনার কবলে পড়া এআই ১৭১ বিমানটি ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে এয়ার ইন্ডিয়ার বহরে যোগ দেয়। ৬২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেই সিগন্যাল হারিয়ে ফেলে বিমানটি এবং দ্রুত নিচে নেমে আসে। উড়ানের প্রায় ৯ মিনিটের মাথায় মেঘানি নগরের রেসিডেনশিয়াল এরিয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে। টেক অফের পর প্রয়োজনীয় গতি তুলতে পারেনি বিমানটি। আর তার জেরেই টেক অফের কিছুক্ষণের মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। বিমানে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন, যার মধ্যে ছিলেন ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ নাগরিক, ১ জন কানাডিয়ান এবং ৭ জন পর্তুগিজ নাগরিক।
বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাস
১৯৭৭ সালের ২৭ মার্চ। দুটি বিমানের সংঘর্ষে ৫৮৩ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। প্রাণে বাঁচেন ৬১ জন। সেদিন কেএলএম রয়্যাল ডাচ এয়ারলাইনসের বিমান ৪৮০৫ এবং প্যান অ্যামেরিকান ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজের বিমান ১৭৩৬ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। দুটি বিমানে সরাসরি ধাক্কা লাগে। কেএলএম বিমানের ২৩৪ জন যাত্রীর মধ্যে ৫৩টি শিশু ছিল সকলের মৃত্যু হয়। প্যান এম বিমানে ৩৮০ যাত্রী ও ১১ ক্রু ছিলেন। ৬১ যাত্রী বেঁচে ছিলেন।
ভারতে বিমান দুর্ঘটনার সাম্প্রতিক ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে প্রথমেই চলে আসে
২৫ বছর আগে ম্যাঙ্গালোর বিমান দুর্ঘটনার কথা। এয়ার ইন্ডিয়ারই বিমানটি দুবাই থেকে ম্যাঙ্গালোর আসছিল। ম্যাঙ্গালোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বোয়িং ৭৩৭-৮০০ যাত্রীবাহী বিমানটি অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে বেরিয়ে পাহাড়ের গায়ে খাদে গড়িয়ে পড়ে। বিধ্বংসী আগুনে বিমানে থাকা ১৬৬ জন যাত্রীর মধ্যে ১৫৮ জনেরই মৃত্যু হয়।
১৯৫৩ সালের ২৫ জুলাই নাগপুরে খারাপ আবহাওয়া কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার আরও একটি বিমান। প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৪ জন যাত্রী।
১৯৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান দিল্লিতে বায়ু সেনার একটি বিমানের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে ৪৬ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়।
১৯৭১ সালে ফের বিমান দুর্ঘটনা হয়েছিল দিল্লিতে। দৃশ্যমানতা কম থাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানটি। মৃত্যু হয়েছিল ২৩ জন যাত্রীর।
মুম্বাইয়ে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৬ সালের জুন মাসে। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি রানওয়েতে নামার সময় দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল। ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৪৭-২০০ মুম্বাইয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। প্রাণ হারিয়েছিলেন ২১৩ জন।
১৯৮৫ সালের ২৩ জুন আয়ারল্যান্ডের উপকূলে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই ১৮২ বিমানে বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩২৯ জন যাত্রী। কানাডা থেকে লন্ডন হয়ে ভারতে যাওয়া একটি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি আয়ারল্যান্ডের উপকূলে বিস্ফোরণ হয়। যার ফলে ৩২৯ জন আরোহীর সকলেই নিহত হন। একটি স্যুটকেসে বোমা ভরে বিমানে রাখা হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে আহমেদাবাদে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-২০০। ১৩০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
১৯৯০ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গালুরুতে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস এ৩২০-২০০। বিমান দুর্ঘটনায় ৯২ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর হরিয়ানায় দুর্ঘটনার করলে পড়ে সৌদি আরবিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৪-১০০ বিমান। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। মৃত্যু হয়েছিল ৩৪৯ জন যাত্রীর।
১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের এবার বাস এ-৩০০ বিমান অপহরণ হয় কান্দাহারে। ঘটনায় ১ জন যাত্রীকে হত্যা করেছিল দুষ্কৃতীরা। বিমানটি অমৃতসর, লাহোর এবং দুবাইতে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দুবাইতে থাকাকালীন, অপহরণকারীরা ২৭ জন যাত্রী এবং একাধিকবার ছুরিকাঘাত করা একজন পুরুষ যাত্রীর মৃতদেহ ছেড়ে দেয়। পরে, ২৫ ডিসেম্বর, ছিনতাইকারীরা বিমানটিকে আফগানিস্তানের কান্দাহারে অবতরণ করতে বাধ্য করে।
২০০০ সালে বিহারের পাটনায় ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভেঙে পড়েছিল যাত্রীবাহী বিমান। ৫৫ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছিলেন।
২০১০ সালের ২২ মে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বিমান কর্ণাটকে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। ১৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
২০২০ সালে কেরালায় প্রবল বর্ষণের মধ্যে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার মুখোমুখী হয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বিমান। ২১ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল।
Plane Crashes In India
ফিরল একাধিক বিমান দুর্ঘটনার ভয়ঙ্কর স্মৃতি

×
Comments :0