Bhima Koregaon case

ভীমা-কোরেগাঁও সাজানো মামলা, অবশেষে জামিন মিলল গঞ্জালভেস, ফেরেইরার

জাতীয়

সাজানো মামলায় টানা পাঁচ বছরের বন্দিদশার পরে অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট থেকে শর্তাধীন জামিন পেলেন দুই সমাজকর্মী ভারনন গঞ্জালভেস এবং অরুণ ফেরেইরা। কুখ্যাত ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় ধৃত এই দু’জনকে শুক্রবার জামিন মঞ্জুর করেছে বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোস এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার ডিভিসন বেঞ্চ।
বম্বে হাইকোর্টের রায় খারিজ করে এই দু’জনের জামিনের আদেশ দিতে গিয়ে বিচারপতিরা এদিন বলেন, ‘‘প্রায় পাঁচ বছর হলো এঁরা জেলবন্দি রয়েছেন। আমাদের বিবেচনায় এই দু’জনই এবার জামিন পেতে পারেন। অভিযোগ যে গুরুতর তা নিয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু শুধু এই একটিমাত্র কারণেই এঁদের জামিনের আবেদন অগ্রাহ্য করা যায় না।’’
তবে জামিনের শর্ত হিসাবে ডিভিসন বেঞ্চ বলেছে, গঞ্জালভেস এবং ফেরেইরাকে নিজেদের পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। নিম্ন আদালতের অনুমতি ছাড়া এঁরা মহারাষ্ট্র ছাড়তে পারবেন না। এঁরা প্রত্যেকেই একটি করে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। চব্বিশ ঘণ্টা তাঁদের মোবাইল ফোন চালু অবস্থায় রাখতে হবে। তাঁরা কোথায় থাকছেন তার ঠিকানা তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ’র সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে সবসময় জানিয়ে রাখতে হবে। চব্বিশ ঘণ্টাই যাতে তাঁদের অবস্থান জানা যায় সেজন্য এই দুই মোবাইল ফোনের সঙ্গে  তদন্তকারী আধিকারিকের ফোনের প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। সপ্তাহে একদিন তদন্তকারী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করতে হবে দুই অভিযুক্তকে। একইসঙ্গে আদালত বলেছে, জামিনপ্রাপ্তরা এসব শর্ত ভাঙলে তাঁদের জামিন খারিজের জন্য আবেদন জানাতে পারবে এনআইএ।
এর আগে বম্বে হাইকোর্ট গঞ্জালভেস এবং ফেরেইরার জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করেই গত ৩১ ডিসেম্বর তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। 
প্রসঙ্গত, দেশের বেশ কয়েকজন সুপরিচিত প্রতিবাদী সমাজকর্মী এবং শিক্ষাবিদকে বেছে বেছে গ্রেপ্তার করানো হয়েছিল কুখ্যাত ভীমা-কোরেগাঁও হিংসা মামলায়। দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এই মামলার সাজানো অভিযোগে পুনে পুলিশ বলে, ২০১৭সালের ৩১ডিসেম্বর পুনেতে মাওবাদীদের অর্থানুকূল্যে দলিত সংগঠন এলগার পরিষদের এক সভায় এঁরা প্ররোচনামূলক ও উত্তেজক বক্তৃতা করেছিলেন। তাঁদের ভাষণের কারণেই পরদিন অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি কোরেগাঁও ভীমা যুদ্ধ স্মারকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান থেকে হিংসাত্মক হাঙ্গামা ছড়িয়েছিল।
ভারাভারা রাওয়ের মতো সুপরিচিত কবি, ফাদার স্ট্যান স্বামীর মতো অশীতিপর মানবাধিকার কর্মী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুধা ভরদ্বাজ, আনন্দ তেলতুম্বে, ভারনন গঞ্জালভেস, অরুণ ফেরেইরা, সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, গৌতম নওলাখার মতো ১৬ জন সমাজকর্মী ও বুদ্ধিজীবীকে একে একে গ্রেপ্তার করে পুলিশ দাবি জানায়, এঁরা নাকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খুনের ছক কষছিলেন! নানান জালিয়াতি করেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথ্যনিষ্ঠ প্রমাণ পেশে ব্যর্থ হয় এনআইএ। তবুও মাসের পর মাস তাঁদের গ্রেপ্তার করে রাখা হয়। 
তবে ভীমা কোরেগাঁও সাজানো মামলায় সবচেয়ে কলঙ্কজনক ঘটনাটি হলো তদন্তসংস্থা এনআইএ’র হেপাজতে বিনা বিচারে ৮৪ বছর বয়সি মানবাধিকার ও আদিবাসী অধিকার কর্মী ফাদার স্ট্যান স্বামীর মর্মন্তুদ মৃত্যু। গুরুতর অসুস্থ অবস্থাতেই কুখ্যাত ইউএপিএ সহ বিভিন্ন ধারায় গ্রেপ্তার করে তালোজা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁকে বন্দি রাখা হয়। পার্কিনসনের যন্ত্রণা, লাম্বার স্পনডিলাইসিসের ব্যথা সহ নানান শারীরিক কষ্ট, এমনকি কোভিড সংক্রমিত হওয়া সত্ত্বেও বিনা চিকিৎসায় এই অশীতিপর ফাদারকে ফেলে রাখা হয়েছিল প্রায় অন্ধকার কুঠরিতে। তিনি মৃত্যুমুখে পৌঁছালে বাধ্য হয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেষপর্যন্ত ২০২১ সালের জুলাইয়ে এনআইএ হেপাজতে হাসপাতালেই তাঁর জীবনাবসান হয়। স্ট্যান স্বামীর অসুস্থতার কারণে বারবার তাঁর জামিনের আবেদন জানানো হলেও প্রতিবারই তা প্রত্যাখ্যাত হয়। মোদী-আমলে সরাসরি রাষ্ট্রের পরিকল্পনায় এই হেপাজত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ধিক্কার ধ্বনিত হয়েছে সর্বত্র।
 

Comments :0

Login to leave a comment