ডিওয়াইএফআই মানে স্থায়ী কাজের দাবিতে লড়াই। বামপন্থী যুব সমাজ লড়াই করেছে ভবিষ্যতের কাজের নিরাপত্তার দাবিতে। অন্যদিকে তৃণমূল আর বিজেপি ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে বিভাজনের রাজনীতিতে সক্রিয়। সর্বস্তরের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ন্যায্য দাবি আদায়ের আগামী দিনের লড়াই আন্দোলনকে আরও জোরদার করার আহ্বান জানানো হলো ডিওয়াইএফআই দার্জিলিঙ জেলার ২০তম সম্মেলন থেকে। রবিবার কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নগর খড়িবাড়ি ও কমরেড নির্মল সরকার মঞ্চে এই সম্মেলন হয়।
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি। খড়িবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জেলা সম্মেলনের প্রকাশ্য সভা হয়। সভায় ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, শিলিগুড়ি ইস্টার্ন বাইপাসে মা-বোনেদের দোকান থেকে উচ্ছেদ করে তাঁদের রুজি রুটি কেড়ে নিয়েছিল শিলিগুড়ি কর্পোরেশনের নেতা মন্ত্রীরা। দিনের পর দিন রাস্তার ধারে বসে রাস্তার আন্দোলনে থেকে লড়াই করে অন্যায় ভাবে কেড়ে নেওয়া দোকান ঘর আদায় করেছে শিলিগুড়ি ইস্টার্ন বাইপাসের মা-বোনেরা। এটাই হল যুবদের লড়াইয়ের পরিণতি। সঠিকটা আদায় করতে পেরেছে। চা বাগানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের লড়াইয়ে দাবিতে আমাদের আন্দোলন। চোর দুর্নীতিবাজ নেতা মন্ত্রীদের পেছনে দৌড়ানোর জন্য আমরা লড়াই করি না। বেকারের হাতে কাজ নেই। অনেক পড়াশোনা শেখার পরেও ছেলেমেয়েরা বেকার হয়ে ঘরে বসে রয়েছে। যোগ্য ছেলেমেয়েদের চাকরি চুরি হয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোন উদ্যোগ নেই সরকারের। ধর্ম নিয়ে চারিদিকে মাতামাতি চলছে। ধর্মের নামে অত্যন্ত সুকৌশলে বিভেদের রাজনীতির বীজ বপন করা হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। প্রতিদিন সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রতি পদে পদে বাধা তৈরি করছে। জমির অধিকার সুনিশ্চিত করার দাবি রয়েছে আমাদের।"
রাজ্য সম্পাদক আরও বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি শিক্ষা স্বাস্থ্য বাসস্থান কর্মসংস্থান এই সমস্ত জ্বলন্ত সমস্যাগুলি থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছে রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকার। একটা বিশৃঙ্খল ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে দেশ ও রাজ্যজুড়ে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসবাদ মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে। বিভেদের রাজনীতি করে দুই সরকার নির্বাচনী ফায়দা লুটতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের টাকা বন্ধ করে রেখেছে। ১০০ দিনের কাজের টাকা আবাস যোজনা টাকা সমস্ত কিছু লুট হয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন তোলেন উত্তরবঙ্গের যুবক যুবতীদের স্বার্থে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের ভূমিকা কি জানতে চাওয়াটা কি অপরাধ? রাজ্যসহ দার্জিলিঙ জেলা জুড়ে সমস্ত সরকারি স্কুল গুলি শিক্ষক শিক্ষিকার অভাবে ধুঁকছে। সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা লাটে উঠেছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা না থাকায় হাজার হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পড়ুয়ারা স্কুল ছাড়ছেন। ড্রপ আউটের সংখ্যা বাড়ছে। এত কিছু সত্বেও সরকার নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে। অপদার্থ বর্তমান রাজ্য সরকারের সময়ে আরজি করের মূল অপরাধীরা আজও অধরা। যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকারা রাস্তায় আন্দোলনে থেকে পুলিশের হাতে মার খাচ্ছেন। রাজ্য ও কেন্দ্র দুই শাসক দলের রাজত্বে দেশ ও রাজ্য জুড়ে সমস্ত অরাজক অবস্থার অবসানে ডিওয়াইএফআই রাস্তার লড়াইতে ছিল আছে ও আগামী দিনেও থাকবে।"
সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা বলেন, "জনজীবনে জ্বলন্ত সমস্যা, সাধারণের প্রতি দিনের জীবন যন্ত্রণার কথা, বেকার যুবক যুবতিদের হাতে স্থায়ী কাজের দাবিতে, শ্রমিকের জীবনের সুরক্ষা, চা বাগানের শ্রমিকদের জমির অধিকার নূন্যতম মজুরি দাবি, কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য সহ মা বোনেদের নিরাপত্তার প্রশ্নে ডিওয়াইএফআই'র জান কবুল লড়াই আন্দোলন জারি থাকবে।"
সম্মেলন উপলক্ষে পতাকা উত্তোলন করেন যুব নেতা শচিন খাতি। শহীদ বেদীতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ডিওয়াইএফআই দার্জিলিঙ জেলা সম্মেলনকে সামনে রেখে সম্মেলন উদ্বোধনের আগে শুরুতেই জেলার যুবক যুবতীদের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য পদযাত্রা হয়। খড়িবাড়ি বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে এলাকার বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে ফের পদযাত্রার সমাপ্তি হয় খড়িবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। সকল বেকারের হাতে স্থায়ী কাজের দাবিতে, রুটি রুজির প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার পক্ষে সোচ্চার হয়েছিলেন এদিনের পদযাত্রায় শামিল জেলার অসংখ্য যুবক-যুবতীরা। সম্মেলনে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২২০জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত প্রতিনিধিদের মধ্যে ১৭ জন প্রতিনিধি প্রতিবেদনের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলন থেকে ডিওয়াইএফআই দার্জিলিঙ জেলা সভাপতি পদে নান্টু কুন্ডু, জেলা সম্পাদক হিসেবে সাগর শর্মা ও কোষাধ্যক্ষ পদে শাশ্বতী সাহাকে মনোনীত করে ৪৬জনের সংগঠনের নতুন দার্জিলিং জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা পত্রিকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গোপাল পালকে।
Comments :0