Rajganj Disease

রাজগঞ্জের ৯ গ্রামে ছড়াচ্ছে পেটের রোগ, হ্যাচারি ঘিরে ক্ষোভ

জেলা

রাজগঞ্জের গ্রামে আক্রান্ত এলাকায় পীযূষ মিশ্র সহ প্রতিনিধি দল। ছবি: প্রবীর দাশগুপ্ত

দীপশুভ্র সান্যাল

গ্রামকে গ্রাম বাসিন্দারা আক্রান্ত হচ্ছেন রোগে। গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন বহু মানুষ। রাজগঞ্জের চেকরমারি ও আশপাশের পাঁচটি গ্রামের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। আক্রান্ত প্রায় নয় গ্রামের মানুষ। হেপাটাইটিসের মতো রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি। লোক দেখানো এক দিনের মেডিক্যাল ক্যাম্প ও রক্ত পরীক্ষা শিবির হয়েছে কেবল। অসুস্থ রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে রোগ ছড়ানোর কারণ খোঁজা এবং ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ করেনি। 
আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে এই গ্রামগুলির মানুষের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করছেন অন্য গ্রামের বাসিন্দারা। দিনমজুরি করতে গেলেও কাজে নিতে চাইছেন না। 
চেকরমারি গ্রামের ১২৭ নম্বর বুথে এক মাস আগে জন্ডিসে মারা গেছেন গণেশ দাসের স্ত্রী শেফালী দাস। শুধু চেকরমারি গ্রাম নয় গিরানগছ, পেল্কুগছ সহ আশপাশের পাঁচটি গ্রামের ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন বহু মানুষ। রাজগঞ্জের সন্ন্যাসীকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের এই গ্রামগুলিতে হেপাটাইটিস ও ল্যাপ্টোস্পাইরা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।  
হাসপাতালে জায়গা নেই। অন্য রোগীদের ভর্তি করা বন্ধ করেছে রাজগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতাল। 
শোনা যাচ্ছে, এই রোগের জন্য বাইরে থেকে চিকিৎসককে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। কিন্তু রোগীদের জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে না। খুব বাড়াবাড়ি হলে শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। স্থানীয়দের বক্তব্য, বিষয়টি চেপে দেওয়ার চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য দপ্তর ও জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। 
বর্তমানে রাজগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে  মহিলা শিশু মিলিয়ে ভর্তি রয়েছেন কমকরে ৩০ রোগী। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও বেসরকারি হাসপাতালে ১০জন ভর্তি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সন্ন্যাসীকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের চেরকমারি গ্রামে রয়েছে একটি মুরগীর হ্যাচারি। সেখান থেকে গত চার মাস আগে মাছির উপদ্রব ছড়ায় গ্রামে। গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় কিছু ব্যবস্থা নিতে হয় প্রশাসনকে।  সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক পীযূষ মিশ্র, রাজগঞ্জ এরিয়া কমিটির সম্পাদক রতন রায়, সিপিআই(এম) নেতা অশোক রায়, ডিওয়াইএফআই রাজ্য কমিটির সদস্য দেবরাজ বর্মন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের একটি দল রাজগঞ্জ গ্রামীণ হসপিটাল যা মগরাডাঙ্গি হসপিটাল নামে পরিচিত, সেখানে রোগী পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন। 
পীযূষ মিশ্রের অভিযোগ, এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল নেই। অবিলম্বে নল বাহিত পানীয় জল চালু করতে হবে। এলাকায় স্বাস্থ্য শিবির চালু করে সমস্ত আতঙ্কিত মানুষের রক্ত পরীক্ষা বন্দোবস্ত করতে হবে। যে হ্যাচারির বিরুদ্ধে অভিযোগ সেটি অবিলম্বে বন্ধ করে শ্রমিকদের আপাতত ভাতা দিতে হবে সংসার প্রতিপালনের জন্য। আক্রান্ত সকলের চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করতে হবে। 
এর পাশাপাশি জল ফুটিয়ে খাওয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি প্রচারের দাবি তোলা হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে। 
গত মে মাসে প্রথম শুরু হয়েছিল মাছির উপদ্রব। পাঁচটি গ্রামের মানুষ মাছির যন্ত্রণায় অস্থির ছিলেন। ছড়াচ্ছিল পেটের রোগ। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের উদ্যোগে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন আধিকারিক, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ব্যবস্থা নিতে অস্বীকার করেন। বিজ্ঞান মঞ্চের বক্তব্য, সে সময়ে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে আজকে রোগ এত ছড়াতো না।
শোনা যাচ্ছে, পরিবেশগত নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চলছে ওই হ্যাচারি।

Comments :0

Login to leave a comment