মোদী সরকারের নিয়োগ করা নির্বাচন কমিশনাররা কেমন দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন তার নমুনা প্রতিদিনই প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। বিহারে ভোটার তালিকা বিশেষ পরিমার্জনের ক্ষেত্রে দিন দিন স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে কমিশনের অগ্রাধিকার নির্ভুল ও সঠিক ভোটার তালিকা তৈরি নয়, বরং প্রকৃত ভোটারদের যথাসম্ভব ছেঁটে ফেলা। তাই তালিকা সংশোধনে যেসব বিধি আরোপ হয়েছে এবং যেসব নথি প্রমাণ চাওয়া হয়েছে সেগুলি সাধারণ গরিব-প্রান্তিক মানুষের কাছে শুধু দুর্লভ নয়, অসম্ভবও। অতি অল্প সময়ে সেই নথি জোগাড় করতে না পারলে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ। বাস্তবে সেটাই ঘটেছে। ১ আগস্ট যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বাদ পড়েছে ৬৫ লক্ষ ভোটার। কমিশন দাবি করেছে মৃত এবং যারা স্থায়ীভাবে অন্যত্র চলে গেছে কেবল তাদের নামই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তালিকায় নাম থাকা মৃত ও অন্যত্র চলে যাওয়া ভোটার ৬৪ লক্ষ।
এই খসড়া তালিকা অনুযায়ী বহু মানুষের খোঁজ ইতিমধ্যে মিলেছে যাদের নাম দু’বার তালিকায় নথিভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে উপমুখ্যমন্ত্রীর নামও। সবচেয়ে তাজ্জব ঘটনা ঘটেছে সুপ্রিম কোর্টে এসআইআর’র বিরুদ্ধে মামলার শুনানি চলার সময়। মৃত বলে তালিকা থেকে বাদ যাওয়া দু’জন বিহারবাসী হাজির হয়েছেন বিচারপতিদের সামনে। আবার খোদ বিরোধী দলনেতার বাড়িতে হাজির হয়ে সাত জন মৃত ভোটার রাহুল গান্ধীর সঙ্গে খেয়ে কথাবার্তা বলে গেছে। এমন জীবিত মৃত ভোটার যে আরও কত আছে বলা মুশকিল। কমিশন যেহেতু বাদ দেওয়া ভোটারদের তালিকা প্রকাশ করছে না তাই ৬৫ লক্ষের মধ্যে কত জন মৃত এবং কত জন স্থায়ীভাবে অন্যত্র চলে গেছে জানার কোনও উপায় নেই। তবে এইটুকু বোঝা যাচ্ছে কমিশন মুখে যা বলছে আসলে তা করছে না। নির্ভুল তালিকা তৈরির নামে আসলে ন্যায্য ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে। জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে অথবা অন্যত্র চলে চলে গেছে দেখিয়ে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ভোটার তালিকা নিয়মিত সংশোধন করা কমিশনের কাজ। প্রতি বছরই অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। আবার অনেক মানুষ ১৮বছর পূর্ণ করে। তাই প্রতি বছরই বাদ যাবার কথা মৃত ভোটারদের নাম। আবার যোগ হবার কথা নতুন ভোটার। যেহেতু মৃত্যুর তুলনায় জন্মের হার বেশি তাই জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ে। তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভোটার সংখ্যাও বাড়ার কথা। কিন্তু বিহারে বিশেষ পরিমার্জনে দেখা যাচ্ছে ৬৫ লক্ষ ভোটার কমে গেছে। নতুন ভোটারের কোনও তথ্য নেই। তাই প্রশ্ন উঠছে, বিহারে বিশেষ পরিমার্জনের নামে নির্ভুল তালিকা তৈরিই কি কমিশনের লক্ষ্য নাকি সচেতনভাবে নাম বাদ দেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল। ন্যূনতম বোধবুদ্ধি আছে এমন যে কোনও মানুষই বোঝেন নিবিড় সংশোধনের কাজ তাড়াহুড়ো করে হয় না। অনেক সময় দিয়ে নিখুঁতভাবে যাচাই করে একাজ করতে হয়। ভোটের আগে তড়িঘড়ি এমন কাজ নির্ভুল তালিকা তৈরির জন্য হতে পারে না। কমিশন যদি সত্যি সত্যি নির্ভুল তালিকা তৈরি করতে চাইত তাহলে ভোটের পরে একাজে হাত দিত। তা না করে শাসকের পরামর্শে তড়িঘড়ি একাজে হাত দিয়েছে ভোটে বিজেপি’কে বাড়তি সুবিধা করে দেবার জন্য। সত্যিকারের গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার সকল নাগরিকের নাম ভোটার তালিকায় তোলা। একাজে মানুষের অনীহা থাকলে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগ নিতে হবে তাদের উৎসাহিত করার। তেমনি ভোটার তালিকায় যাদের নাম আছে তারা সকলেই যাতে ভোট দেয় সেই প্রয়াসও নিরন্তর চালাতে হয় কমিশনকে। সব নাগরিক যদি ভোটার না হয়, বেশির ভাগ ভোটার যদি ভোট না দেয় তাহলে গণতন্ত্র অর্থহীন হয়ে পড়ে।
SIR
মৃত ভোটাররা জীবিত মানুষ

×
Comments :0