ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস (এনএসও)। প্রতি মাসেই এই রিপোর্ট সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে জুলাই (২০২৫) মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার কমতে কমতে ১.৬ শতাংশে এসে ঠেকেছে। জুন (২০২৫) মাসে এই হার ছিল ২.১ শতাংশ আর গত বছর জুলাই মাসে ছিল ৩.৬ শতাংশ। ৮ বছর আগে ২০১৭ সালের জুন মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ১.৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ গত ৮ বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে কম মূল্যবৃদ্ধির হার। খাতায় কলমে সরকার দেখাতে চাইছে জিনিসপত্রের দাম এখন আর বাড়ছে না। সামান্য যেটা হিসাবের মধ্যেই আসে না। প্রকাশিত পরিসংখ্যানের মধ্যে সবচেয়ে নজর কাড়া বিষয় হলো খাদ্য সামগ্রীর দাম। সরকার যে তথ্য হাজির করেছে তাতে চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবার জোগাড়। মোদী ম্যাজিকে এখন আর দেশে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ে না, উলটে কমে যাচ্ছে। জুলাই মাসে খাদ্যসামগ্রীর দাম ১.৮ শতাংশ কমে গেছে বলে জানানো হয়েছে। জুন মাসে কমেছিল ১ শতাংশ। খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রেও গত ৬বছরের মধ্যে সর্বাধিক মূল্যপতন ঘটেছে জুলাই মাসে। ২০১৯ সালের জুন মাসে খাদ্যের মূল্য হ্রাস পেয়েছিল ২.২ শতাংশ।
গত কয়েক বছর ধরে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে জিনিসপত্রের অতি উচ্চ মূল্যই ছিল অন্যতম প্রধান সমস্যা। দেশজুড়ে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন নতুন মাত্রা যুক্ত করেছিল। এখন সরকার তার হিসাবের খাতায় অঙ্ক কষে সাধারণভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়া আটকে দিয়েছে। খাদ্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ এগিয়ে দাম কমিয়ে দিয়েছে। সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখন আগের থেকে অনেক সস্তায় খাদ্যদ্রব্য কিনতে পারছেন। সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হলো জুলাই মাসে নাকি সবজির দাম ২১ শতাংশ কমে গেছে। ডাল ও ডালজাত দ্রব্য কমেছে ১৪ শতাংশ, মশলার দাম কমেছে ৩ শতাংশ। এমনকি মাছ-মাংস-ডিমের দামও নাকি কমে গেছে।
যারা সরকার চালান তারা কেউ কোনোদিন বাজারে যান কিনা বলা মুশকিল। কিন্তু যে কোটি কোটি ভারতবাসী নিত্যদিন বাজারে যান, অত্যাবশ্যকীয় জিনিস কেনেন তাদের একজনও (অন্ধভক্ত না হলে) সম্ভবত বলবেন না জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে না অথবা সবজি সহ সব খাদ্যসামগ্রীর দাম কমে গেছে। সরকারের হিসাব আর মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা আকাশ-পাতাল ফারাক। বাজারে প্রায় প্রতিটি সবজিই দেড় থেকে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। চাল, ডালের দামও যথেষ্ট বেশি। আর অন্যান্য কোনও ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে বা একই আছে মানুষ বুঝতে পারছেন না। খাতায় কলমে মূল্য কম দেখিয়ে সরকার বাহবা কুড়াচ্ছে। কিন্তু তাতে মানুষের যন্ত্রণার কোনও সুরাহা হচ্ছে না। আসলে মূল্যসূচক গণনার ক্ষেত্রে পণ্যের সংখ্যা ও ধরনের অদলবদল করে গড় মূল্য অনেকটা কম দেখানো যায়। তাই এই সরকারি পরিসংখ্যানে সাধারণ মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটে না। অনেক ক্ষেত্রে বাজারে চাহিদা কমলে পণ্যের দাম স্থির থাকে বা কমে যায়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না থাকলে কেনার চাহিদা কমে। তেমনি কাজ না থাকলে, আয় না বাড়লে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বা ক্রয় চাহিদা বাড়ে না। মূল্যবৃদ্ধি কম থাকার এটাও একটা অন্যতম কারণ।
Price Index
খাদ্যের দাম নাকি কমে যাচ্ছে

×
Comments :0