সুদীপ্ত বসু
প্রায় একবছর হতে চলেছে। ৩৬৩ বার সুর্যোদয় আর সুর্যাস্তের সাক্ষী থেকেছি আমরা। বদলেছে অনেক কিছুই।
মিছিলে, স্লোগানে, প্রতিবাদে, কংক্রিটের রাস্তাকেই ক্যানভাসে পরিণত করে দ্রোহের অক্ষরমালা আঁকার বিনিদ্র রাত কাটানোর অভ্যাস খানিকটা স্তিমিত হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে ধামাচাপা দেওয়ার প্রয়াসও অনেকটাই ‘সফল’ হয়েছে বলে মনে করেই স্বস্তিতে শাসক। শুধু বদলায়নি, নিজেদের একমাত্র চিকিৎসক কন্যার ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় ন্যায় বিচার পাওয়ার জেদ, বদলায়নি অসহায় বাবা-মা’র আকাঙ্ক্ষাকেই বাস্তবে চেহারা দিতে এই শহর, অলি-গলি, জেলা মফঃস্বলে সোচ্চার সমষ্টির সঙ্ঘবদ্ধতার ছবি।
তাই প্রশ্ন তুলতেই হবে— বিচারের কী হলো? ন্যায় বিচার কী মিলেছে? প্রকৃত সব অপরাধীরাই কী ধরা পড়েছে? আরজি করের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের হাল কী? কতদূর এগলো? না এগলে, কেন তা হলো না? কোথায় বাধা, কোথায় বোঝাপড়া? কেনই বা এক বছরের মাথায় মমতা ব্যানার্জির পুলিশ আর প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকা কেন্দ্রীয় কর্মীবর্গ, জন-অভিযোগের অধীনে থাকা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার বয়ান একই বিন্দুতে এসে মিশলো?
ধাঁধার থেকেও জটিল...
উত্তর খোঁজার আগে এক বছরের মাথায় আরজি করের ঘটনা নিয়ে চুম্বকে কয়েকটি মন্তব্য একবার দেখে নেওয়া যাক। স্থুল, কদাকার, কুৎসিত বোঝাপড়ার রাজনীতির ছবি খানিকটা স্পষ্ট করার জন্যই।
ক) ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর। ততক্ষণে আরজি কর ধর্ষণ-খুনের তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে এসেছে, সামনে আসে সরকারি হাসপাতালের ভিতরে দুর্নীতির ভয়াবহ ছবি। গোটা রাজ্য জুড়ে তখন দাবানলের ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবাদের স্বর। সেই সময়তেই মমতা ব্যানার্জির সামনে, যেন মরুভূমিতে জলের সন্ধান নিয়ে এলেন মোহন ভাগবত, আরএসএস’র প্রধান। জানিয়ে দিলেন— আরজি করকাণ্ড মোকাবিলায় সরকার যা পদক্ষেপ নেবে তাতে সমর্থন!
খ) একবছরের মাথায় আদালতে এসে সিবিআই’র সওয়াল— বাবা, মায়ের কথায় তো আর তদন্তের অভিমুখ ঠিক হবে না।
গ) একবছরের মাথায় এসে আদালতে সিবিআই-রাজ্য সরকার আর সন্দীপ ঘোষের অভিন্ন সুর।
ঘ) একবছরের মাথায় এসে শাসক তৃণমূলের হুঁশিয়ারি— সিবিআই তদন্তকেও মানতে চাইছে না বাবা,মা। পিছনে অন্য খেলা!
সিবিআই-পুলিশ, বিজেপি-তৃণমূলের খোলাখুলি বোঝাপড়ার ছবিকে আরও তীব্রভাবে স্পষ্ট করেছে আরজি করের ঘটনা, নাগরিক আর শাসকের ব্যবধানও আরও চওড়া হয়েছে।
হিজ মাস্টার্স ভয়েস...
সারদা-নারদের তদন্তের মতই আরজি করে পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের মামলার তদন্তেও কার্যত শীতঘুমে সিবিআই। আগাম উপসংহার ঠিক করে কলকাতা পুলিশের তদন্তকেই শিলমোহর দিয়ে প্রথম দফার চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই। তার নয়মাস পরেও দ্বিতীয় দফার চার্জশিট পর্যন্ত দাখিল করতে পারেনি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
‘আরজি করের মামলায় কলকাতা পুলিশের তদন্তকেই কেবল অন্ধভাবে অনুসরণ করে গেছে সিবিআই’। সিবিআই’র চার্জশিটের ভিত্তিতে বিচারপর্ব শেষে আদালতের রায়ের কপিতেই এমন পর্যবেক্ষণ রয়েছে।
আদালতে ৫০ নম্বর সাক্ষী হিসাবে সিবিআই’র তদন্তকারী আধিকারিক সীমা পাহাজা জেরার মুখে তদন্তের উপসংহার টেনে জানিয়েছিলেন যে কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ই একমাত্র অভিযুক্ত ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায়। লালবাজারের সুরেই ‘চারতলার সেমিনার রুম ঘটনাস্থল নয়’ বলে যে দাবি তা নিয়েও আপত্তি জানান।
আরজি কর তদন্তের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় ঘটনাস্থল কী চারতলার সেমিনার রুম এবং গোটা ঘটনায় কী কেবল একজনই যুক্ত? এই দুটি বিষয়ই নির্দিষ্টভাবে আলোকপাত করেছিল সিএফএসএলের রিপোর্ট। যদিও সিবিআই’র চার্জশিটে বা তদন্তের গতিপথে তার কোনও প্রতিফলন দেখা যায়নি। সিএফএসএল রিপোর্ট স্পষ্ট ভাবে গত সেপ্টেম্বরে জানিয়েছিল- সেমিনার রুমে এবং পোডিয়ামে সেদিন আরজি করের পড়ুয়া চিকিৎসকের সঙ্গে ধর্ষকের ধস্তাধস্তির কোনও প্রমাণ মেলেনি। ‘সামনেই নার্সিং স্টেশন রয়েছে যেখানে ২৪ x ৭ নার্স কিংবা হাসপাতালের স্টাফরা থাকেন, তা পেরিয়েই সেমিনার রুমে ঢুকে এত বড় অপরাধ সংগঠিত করল সকলের অগোচরে তার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে’— তাও বলেছিল সিএফএসএল।
আশ্চর্যজনকভাবে ওই সিবিআই আধিকারিক আদালতে জানিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের থেকে পাওয়া তথ্য, নথির ভিত্তিতই তিনি তদন্ত চালিয়েছেন। তিনি কোনও অভিযুক্তের আঙুলের ছাপ নেননি, এমনকি উদ্ধার হওয়া সঞ্জয় রায়ের ছেঁড়া ব্লুটুথ হেডফোনেও আঙুল ছাপ মিলিয়ে দেখেননি। এমনকি তদন্তকারী আধিকারিক হিসাবে তিনি হাসপাতালের কোনও নার্সিং স্টাফ,গ্রুপ ডি স্টাফ, আয়াকেও জেরা পর্যন্ত করেননি। যে পেন ড্রাইভে ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের চারতলার সেমিনার রুমে ৮ আগস্ট রাত দশটা থেকে ৯ আগস্ট সকাল দশটা পর্যন্ত সমস্ত গতিবিধি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা ছিল সেই পেন ড্রাইভ পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করার বা সংগ্রহ করার কোনও তৎপরতা দেখাননি। কেন? কীসের বাধা, কোথায় সেটিং?
ধামাচাপায় সাবলীল, তদন্তে অস্বস্তি...
তদন্তভার পাঁচদিন ছিল কলকাতা পুলিশের হাতে। পুলিশের দাবি, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই ‘মূল’ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত শুরুর আগেই মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছিলেন তার অর্থ গোটা ঘটনা একজনই ঘটিয়েছে এবং সেই সিভিক ভলান্টিয়ারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ফলে মিটে গেল তদন্ত।
আসলে মিটলো না কিছুই। পুলিশের তদন্ত এমন প্রশ্ন উঠেছে যার জন্য নিয়ম করে লালবাজারে সাংবাদিক বৈঠক করে সাফাই দিতে হয়েছে আর তা করতে গিয়ে আরও নতুন প্রশ্ন, সন্দেহ উসকে দিয়েছে পুলিশই! রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার— প্রথম দিন থেকেই এই নৃশংস ও ধর্ষণের খুনের ঘটনায় ‘একজনই অভিযুক্ত’র তত্ত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে। সে একা সেদিন ওই ঘটনা ঘটালো, সে একা হাসপাতালে রাতে তিনবার ঢুকলো বেরোলো তারপর ধর্ষণ ও খুনের পরে সল্টলেকে চতুর্থ ব্যাটেলিয়নের ব্যারাকে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল এবং পরের দিন ফের সে হাসপাতাল চত্বরেই এসে ঘোরাঘুরি করতে শুরু করল। এবং একটা হেডফোন সহ রহস্য সমাধান করে দিল!
তারপরেও প্রশ্ন, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার কীভাবে পুলিশ না হয়েও রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের চতুর্থ ব্যাটেলিয়নের সল্টলেকের ব্যারাকে থাকতো? কিভাবে পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্য বনে গেছিলে? এরকম আর কত ধর্ষক বা পোটেনশিয়াল রেপিস্ট পুলিশের ব্যারাকে আছে?
আরজি করের ঘটনায় প্রতিবাদ তখন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে, আর সেই সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তৎকালীন ধিক্কৃত অধ্যক্ষকে প্রাইজ পোস্টিং দেওয়ার কথা জানাচ্ছেন মিডিয়ায়! শুধু তাই নয়, মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে সেই রাতেই সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি পর্যন্ত হয়ে যায়। আরজি কর থেকে সামান্য দূরের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে! এমনকি ‘ইস্তফার’ আগেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের বদলির ব্যাকডেটেড বিজ্ঞপ্তি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল!
তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই উঠছে। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছিল ক্রাইম স্পটে অর্থাৎ চারতলার সেই সেমিনার রুমে একাধিক বহিরাগতের ভিড় ছিল । ঘটনাস্থলে ঘিরে রাখাও ছিল না। কীভাবে তা হতে পারে? লালবাজারের দাবি, ৫১ ফুটের সেমিনার রুম, ৪০ ফিট পর্যন্ত কর্ডন করা ছিল। ৪০ ফিটের বাইরে ১১ ফিট এলাকায় অনেক মানুষ ছিলেন! অপরাধ বিজ্ঞানের স্বাভাবিক নিয়মে গোটা ঘরটাই তো ক্রাইম স্পট। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায় ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পুলিশ’ কলকাতা পুলিশের এমন আচরণ আদৌ তাঁদের দক্ষতার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ? সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি চলার সময়ে প্রধান বিচারপতি রাজ্যকে প্রশ্ন করেছিল, ৯ তারিখ সকাল ১০টা ১০-এ ঘটনার জেনারেল ডায়েরি করা হয়েছে। এর পরে ক্রাইম সিন সিল করা হয়েছে রাত ১১টার পরে, এতক্ষণ কী হচ্ছিল?
কেন কলকাতা পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিক ঘটনার পরে বাড়িতে গিয়ে মৃতার বাবা-মাকে টাকার বিনিময়ে গোটা ঘটনা মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল? এমনকি যখন পরিবারের সদস্যদের কাছে টাকার ‘অফার’ দিয়েছে পুলিশ সেই সময় তাঁদের মেয়ের শেষকৃত্য পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি! এবং তারপরেও বাবা-মাকে চাপ দিয়ে পুলিশ ভিডিওতে বলতে বাধ্য করেছিল টাকা দেওয়া হয়নি! সেই কৌশলও ধরা পড়ে যায়! আর জি কর থেকে শিক্ষা নেয়নি সরকার, তাই দলীয় বাহিনীর হাতে খুন হওয়া ছোট্ট তামান্নার পরিবারকেও টাকা দিয়ে কিনতে হাজির হয়েছিল শাসক,সেখানেও প্রত্যাখ্যাত।
প্রশ্ন, সংশয়, সন্দেহ...
উত্তর মিলছেনা অসংখ্য প্রশ্নের। এদের কাছ থেকে সহজেই উত্তর মিলবে সেই আশা বাতুলতা, তবুও ভাবীকালের জন্য তুলে যেতেই হবে।
১) ২০২৪’র ৯ আগস্ট সকালে সেমিনার রুমে অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে থাকা পড়ুয়া-চিকিৎসকের দেহের কয়েক ফুট দূরত্বে বহিরাগতদের প্রায় মেলার মতো ভিড় করে থাকার যে ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছিল, তাকে ধরে কেন তদন্তই করল না? সাতসকালেই মালদহ থেকে বর্ধমান হয়ে এসএসকেএম’র তৃণমূল ঘনিষ্ঠ দাপুটে সব চিকিৎসকরা চলে এসেছিলেন চার তলার সেমিনার রুমে। পরিকল্পিতভাবে ক্রাইম সিন নষ্ট করা হলো। ফুটেজে লাল জামা পরা এক ব্যক্তিকে দেখা যায়। কলকাতা পুলিশ তাঁকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ বলে চালিয়ে দিয়েছিল। পরে জানা যায়, লালা জামা পরা ব্যক্তির নাম অভীক দে, তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা, তিনি এসএসকেএম হাসপাতালের পিজিটি। কেন লালাবাজারে বসে মিথ্যাচার?
২) সেই রাতে কেন অতি তৎপর হয়ে পুলিশ দেহ দখল করে বাবা-মায়ের অনুমতি ছাড়াই সোদপুরের বাড়িতে নিয়ে যায়, বাবা-মা’র সম্মতি ছাড়াও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের কোনও সুযোগ না রেখেই তৎপর হয়ে শাসক তৃণমূলের নেতাদের উদ্যোগে দ্রুত সৎকার করা হলো, তাও ‘তথ্য প্রমাণ লোপাট’ হিসাবেও কেন গণ্য করল না সিবিআই?
৩) আদালতে সিবিআই অন্তপক্ষে পাঁচটি শুনানিতে লিখিতভাবে জানিয়েছিল তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের ফোন কলরেকর্ড থেকে জানা গেছে সেদিন সকালে তারা দু’জন মিলে গোটা ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। তারা একাধিকজন ফোন করেছিল, প্রভাবশালীদের কাছ থেকেও ফোন এসেছিল। কারা তাঁরা, চেপে গেলো কেন সিবিআই?
৪) দিল্লি এইমসের ফরেন্সিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ডাঃ আদর্শ কুমারের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল তৈরি হয়েছিল। সেই বোর্ড জানিয়েছিল নির্যাতিতার শরীরে যে সমস্ত আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে, মৃত্যুর আগেই সেই আঘাত করা হয়েছে। সিভিকের দেহে যে ক্ষত চিহ্ন দেখা গিয়েছিল তা নির্যাতিতার প্রতিরোধেরই চিহ্ন। পড়ুয়া চিকিৎসকের সঙ্গে অভিযুক্তের শারীরিক ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। আর সিএফএসএলের রিপোর্ট বলছে চারতলার সেমিনার রুমে এমন ঘটনা ঘটার কোনও প্রমাণ বা চিহ্ন মেলেনি। তাহলে কোথায় হলো? কেন চার্জশিটে তা এড়িয়ে যাওয়া হলো?
৫) সেদিন সিসিটিভি ক্যামেরায় রাতে হাসপাতালের চারতলায় ৬৮ জনের যাতায়াত দেখা গেছে। এদের চিহ্নিত করা হয়েছিল কী? ডিএনএ’তে একাধিক জনের নমুনা মিলেছিল, তা কি বিকৃত করা হয়েছিল? যদি না হয় তাহলে সেদিন সেখানে উপস্থিত সবার ডিএনএ’ পরীক্ষা করা হয়েছিল কী?
৬) সিফএসএলের রিপোর্ট এমনকি জানিয়েছিল শুধুমাত্র কাঠের স্টেজ (পোডিয়াম) যেখানে ম্যাট্রেস পাতা ছিল সেখানে মাথা এবং তলপেটের নিচের জায়গায় রক্তের দাগ মিলেছে। সেখানে ধর্ষণ বা খুনের ঘটনা ঘটলে যে চিহ্ন মেলার কথা বা জিনিসপত্রের যে ছাপ থাকার কথা তার কিছুই মেলেনি। তাহলে কি হাসপাতালেরই অন্য কোথাও ধর্ষণ, খুন করে মৃতদেহটি এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল?
৭) পুলিশের দেওয়া ফুটেজ অনুযায়ী ভোর ৪টে ৩ মিনিট নাগাদ চারতলার সেমিনার রুম সংলগ্ন করিডরে দেখা যায় ধৃত সিভিককে। ৪টা ৩২ মিনিট নাগাদ তাকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। ২৯ মিনিটের মধ্যে কীভাবে এক মদ্যপ অবস্থায় থাকা ব্যক্তি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটিয়ে, দেহ পরিপাটি করে রেখে নিশ্চিন্তে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে গেলো?
৮)গত ১৪ সেপ্টেম্বর সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। শিয়ালদহ আদালতেই সিবিআই’র তরফে টালা থানার ওসিকে গ্রেপ্তারের পরে ১২দফা অভিযোগ এনে বলা হয়েছিল কীভাবে গোটা ঘটনায় তথ্য প্রমাণ লোপাটে যুক্ত ছিল অভিজিৎ মণ্ডল। তাহলে এজলাসে যা জানিয়েছে তা চার্জশিটে উল্লেখ করা হলো না কেন?
৯) হাসপাতাল থেকে বাবা-মাকে কেন প্রথমে আত্মহত্যার কথা জানানো হয়েছিল? কেন মেয়ের শেষকৃত্যের আগেই ডিসি(নর্থ) নগদ টাকা নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিল? বাবা-মা’কে কিনে নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল কে?
১০) গত ৪ নভেম্বর সিবিআই আদালতে জানায়-‘সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে বায়োলজিক্যাল তথ্য প্রমাণ মিলেছে তাই প্রথম দফার চার্জশিট নাম যুক্ত করা হয়েছিল। তার অর্থ এই নয় যে আর কেউ যুক্ত নয়।’ আবার সেই সিবিআই ১৩ ডিসেম্বরে আদালতে ৯০ দিন পেরিয়ে গেলেও ‘যথেষ্ট প্রমাণ’ না থাকায় দ্বিতীয় চার্জশিট দিতে না পারার কথা অবলীলায় জানিয়েছেন। কেন?
চোখ রাঙানিকে করি না গণ্য...
উত্তর চাইছে বেঁচে থাকা সব মূল্যবোধ, বিবেক। উত্তর চাইছি আমরাও। সব উত্তর নিছক প্রশ্নেই মেলে না। লড়াই করে ছিনিয়ে আনতে হয়। পুলিশ দিয়ে হেনস্তা, তথ্য প্রমাণ লোপাট, শাসকের আগ্রাসী হুমকি,সেটিংয়ের রাজনীতি— এসবের মিলিত যোগফলের থেকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা, উত্তর ছিনিয়ে আনার জেদের শক্তি বেশি, অনেক বেশি। ‘হাত দিয়ে বলো সূর্যের আলো রুধিতে পারে কি কেউ?...’
Comments :0