Trade War

ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের ঘোড়া থেমেছে চীনে

সম্পাদকীয় বিভাগ

 আপাদমস্তক একজন ঝানু ব্যবসায়ী আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হয়ে ক্রমশ মুষড়ে পড়া মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য প্রবল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধে। মার্কিন শ্রেষ্ঠত্ব এবং অহমিকাকে রাষ্ট্রপতির সীমাহীন কর্তৃত্বকে জাহির করতে ট্রাম্প এই যুদ্ধে আমেরিকাকে রেখেছেন একদিকে আর অপরদিকে রেখেছেন অবশিষ্ট বিশ্বকে। অবশ্য তাঁর প্রধান টার্গেট চীন।
ব্যবসায়ী ট্রাম্পের অর্থনৈতিক জ্ঞান এই সিদ্ধান্তে তাকে উপনীত করেছিল যে মার্কিন অর্থনীতি দুর্বলতার প্রধান কারণ তাদের বাণিজ্য ঘাটতি। চীন সহ বিদেশিরা তাদের সস্তার পণ্য আমেরিকায় বিক্রি করে নিজেদের অর্থনীতিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলছে। অথচ দেশের বাজার বিদেশি পণ্য দখল করে নেবার ফলে মার্কিন উৎপাদন শিল্প মার খাচ্ছে। বস্তুত বিদেশে রপ্তানি করার মতো তেমন কোনও পণ্যই এখন আর আমেরিকায় তৈরি হয় না। এমনকি মার্কিন নাগরিকদের প্রয়োজনীয় পণ্যও আমেরিকায় তৈরি হয় না। ফলে আমেরিকা হয়ে উঠেছে ভীষণভাবে আমদানি নির্ভর দেশ। আমদানির থেকে রপ্তানির পরিমাণ অনেক কম হওয়ায় এবং দিন দিন বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে থাকায় আমেরিকার বাজেট ঘাটতি এবং ঋণের পরিমাণ হুহু করে বাড়ছে। আমেরিকার মাথায় বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির শিরোপা থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত দেশও আমেরিকা। মার্কিন ডলার যদি দেশে দেশে বিদেশি মুদ্রার মজুত ভাণ্ডার হিসাবে ব্যবহার না হতো তাহলে বহু আগেই মার্কিন অর্থনীতি ধসে যেত। তাই আন্তর্জাতিক বিনিময় মুদ্রা হিসাবে ডলারের একচেটিয়া আধিপত্য খর্ব হবার আশঙ্কা দেখা দিলেই আমেরিকা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এমন এক ভাবনা ব্রিকসভুক্ত দেশগুলিতে সামনে আসার পর ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে রীতিমতো হুমকি দিতে শুরু করেন।
মার্কিন অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করতে ট্রাম্প চান মার্কিন পুঁজি এবং অন্যান্য দেশের পুঁজি বেশি বেশি করে বিনিয়োগ হোক। অনেক অনেক কল-কারখানা গড়ে উঠুক আমেরিকায়। বিপুল কর্মসংস্থান তৈরি হোক আমেরিকানদের জন্য। মার্কিন বাজারে বিক্রির পণ্য তৈরি হোক আমেরিকাতেই। এমন মনোবাসনা পূরণ করতে ট্রাম্প বেছে নিলেন সবদেশের বিরুদ্ধে শুল্ক যুদ্ধকে। একতরফাভাবে তিনি ৭০-৮০টা দেশের পণ্যের উপর আমেরিকার আমদানি শুল্ক এক ধাক্কায় ১০০ শতাংশের কাছাকাছি বাড়িয়ে দিলেন। চীনের ক্ষেত্রে সেটা ১৪৫ শতাংশ। গত ২ এপ্রিল এমন অভাবনীয় পদক্ষেপ নিয়েই দু’দিন পর ৯০ দিনের জন্য শুল্ক  বৃদ্ধি স্থগিত রাখলেন এবং প্রবল চাপ সৃষ্টি করলেন দেশগুলি যেন আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বসে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করে। অর্থাৎ চুক্তির মাধ্যমে ট্রাম্পকে খুশি করতে পারলে মার্কিন কোপ থেকে তারা মুক্ত হবে। আসলে চাপ দিয়ে অন্য দেশের বাজার আমেরিকার জন্য অবাধ এবং আমেরিকার বাজার অন্যদের জন্য খানিকটা নিয়ন্ত্রিত করার এটা একটা কৌশল মাত্র। সব দেশ এমন কি ইউরোপও ট্রাম্পের ভয়ে মাথা নিচু করে আলোচনা শুরু করে। কেউ ট্রাম্পের এমন একতরফা আগ্রাসী পদক্ষেপের বিরোধিতা করেনি বা পালটা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। একমাত্র চীন পালটা মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করে। চীনে পালটা শুল্ক চাপানোয় বেকায়দায় পড়ে আমেরিকা। তাদের বাণিজ্য ঘাটতি আগের থেকেও বেড়ে যায়। দে‍‌শের মধ্যে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ বাড়তে থাকে। সমস্যায় পড়ে মার্কিন কর্পোরেটগুলিও। এই অবস্থায় বিপদ বুঝে একরকম নতিস্বীকার করে চীনের সঙ্গে আলোচনার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে ওঠেন। চীন শর্ত চাপায় বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার না হলে তারা আলোচনায় আগ্রহী নয়। অবশেষে জেনেভায় দু’দিনের আলোচনায় দু’দেশই শুল্ক কমিয়ে বাণিজ্য স্বাভাবিক করার চুক্তি করেছে। শেষ পর্যন্ত আগ্রাসী মনোভাব ত্যাগ করে হুমকি ছেড়ে আলোচনার সোজা পথে আসতে বাধ্য হয়েছে আমেরিকা। ভারত সহ সব দেশই প্রায় নতজানু হলেও চীন বুঝিয়ে দিয়েছে আমেরিকা বুনো ওল হলে চীন বাঘা তেঁতুল।

Comments :0

Login to leave a comment