JOURNEY — MONGPUTE RABINDRANATH — MUKTADHARA — 10 MAY 2025, 3rd YEAR

ভ্রমণ — মংপুতে রবীন্দ্রনাথ — মুক্তধারা — ১০ মে ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

JOURNEY  MONGPUTE RABINDRANATH  MUKTADHARA  10 MAY 2025 3rd YEAR

ভ্রমণ মুক্তধারা, বর্ষ ৩

মংপুতে রবীন্দ্রনাথ

দার্জিলিং বেড়াতে গিয়ে, মৈত্রেয়ী দেবীর অতি-সুখপাঠ্য মংপুতে রবীন্দ্রনাথ পড়ার কারণেই সম্ভবত, মংপু দেখার আকর্ষণ রোধ করা গেল না। পাঠ্যবই সূত্রে আমাদের জানা আছে যে সিঙ্কোনাগাছের ছাল থেকে ম্যালেরিয়ার ওষুধ কুইনাইন পাওয়া যায়। ভারতে প্রথম কুইনাইন বড়ি তৈরির কারখানা স্থাপিত হয় মংপুতে ১৮৬৪ সালে, কারণ সিঙ্কোনাগাছ এ অঞ্চলেই বিশেষভাবে পাওয়া যায়। মৈত্রেয়ী দেবীর স্বামী মনমোহন সেন ছিলেন এখানে কর্মকর্তা এবং কারখানার প্রবেশপথের উল্টো দিকেই ছিল তাঁর বাংলো। রবীন্দ্রনাথ ১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে চারবার এ বাংলোতে এসে বাস করেছেন। ১৯৪০ সালে শেষবারের মতো জন্মদিন উপলক্ষে এখানে বসেই তিনি রচনা করেন ‘জন্মদিন’ নামের কবিতাটি এবং এটি কলকাতা রেডিওতে সরাসরি প্রচারের জন্য তিনি কালিম্পং থেকে টেলিফোনে কবিতাটি আবৃত্তিও করেন।পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার মংপুতে আছেন এক রবীন্দ্রনাথ। জীবনের একেবারে শেষবেলায় তিনি এখানে কয়েক দফা এসে বাস করে গেছেন। রেখে গেছেন এমন অমূল্য কিছু স্মারক, যার খোঁজ হয়তো রবীন্দ্র-অনুরাগীদেরও অনেকের অগোচর রয়ে গেছে। ২০১৬ সালে মংপু গিয়ে ‘রবীন্দ্র ভবন’ নামের সংগ্রহশালাটিতে এমন অদৃষ্টপূর্ব কিছু সংগ্রহ আর তাদের অনাদর–অবহেলা দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। এরপর যথারীতি বিস্মৃতও হয়েছিলাম। সম্প্রতি মংপুর স্মৃতি ফিরে এল দুটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে। এক. এ বছর জুলাই মাসে জানা গেল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হেরিটেজ কমিশন ভবনটির সংস্কার করে যথাযথ সংরক্ষণ এবং একে রবীন্দ্র গবেষণার একটি কেন্দ্রে পরিণত করার সংকল্প ঘোষণা করেছেন। তবে চোরের দল সম্ভবত ওই সংকল্পটি আগেই করে ফেলেছিল। ফলে, দুই নম্বর তথ্য—দিনকয়েক আগে কাগজে দেখলাম মংপুর সংগ্রহশালা থেকে চুরি হয়ে গেছে রবীন্দ্রনাথের আঁকা আসল ছবি, ছবি আঁকার রং-তুলি-কালি, পাণ্ডুলিপি, তাঁর শখের হোমিওপ্যাথির সরঞ্জাম, দুর্লভ আলোকচিত্রসহ নানা কিছু। রবীন্দ্রনাথ গত হওয়ার ৭৫ বছর পর অযত্নে–অবহেলায় এ পারের রবীন্দ্র কুটিরটিও দীনহীন ভগ্ননীড়। ভবনটি তালাবদ্ধ, বিস্তর হাঁকডাকের পর এক নেপালি দারোয়ান গোছের মানুষ জানালেন ভবনের তত্ত্বাবধায়ক বাসায় আছেন। তবে তিনি তালা খুলে দেখাতে পারেন। সেটি ভালোই হলো। কারণ সংগ্রহশালায় রক্ষিত প্রতিটি বস্তু বিষয়ে এ নিতান্ত স্বল্পশিক্ষিত মানুষটির জ্ঞানের বহর দেখে আমাদের তাক লেগে গেল। রাখা আছে রবীন্দ্রনাথের ছবি আঁকার রঙ-তুলি-কালি, আঁকা ছবি, হোমিওপ্যাথির নানা আকারের শিশি, পাণ্ডুলিপি আর আমাদের অদেখা অসংখ্য আলোকচিত্র। রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে মোটামুটি জানা-দেখা থাকা সত্ত্বেও এসব আলোকচিত্র আমি আগে দেখিনি। রয়েছে তাঁর নিজের নকশা করা আসবাবপত্র। স্নানের সুবিধার জন্য স্নানঘরে নিজের নকশায় ঠান্ডা ও গরম পানি সরবরাহের কৌতূহলোদ্দীপক ব্যবস্থাটি কবির সৃজনশীল মানসের আরেকটি পরিচয়। তুলি রাখার একটি বাঁশের দানি দেখলাম, যার গায়ে খোদাই করে এবং তার কালি ঘষে ছবি ফুটিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর এমন সৃষ্টির কথা জানাই ছিল না। কিন্তু ভবনটির অবস্থা করুণ, ছাদের কোণ দিয়ে জল পড়ছে, মোটামুটি ভেঙে পড়ার দশা। আসবাবপত্র ও আলোকচিত্রগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়।

Comments :0

Login to leave a comment