Pahalgam Military Conflict

যুদ্ধ ছেলে খেলা নয়

সম্পাদকীয় বিভাগ

পহেলগামে জঙ্গি হানার পর থেকে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সংঘাতের পরিসর বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে যেকোনও সময় দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। দু’দেশেই বেড়েছে সামরিক তৎপরতা ও যুদ্ধ সংক্রান্ত আগাম প্রস্তুতি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে বারবার বৈঠক করে পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রস্তুতি ঝালিয়ে নিচ্ছেন। আরএসএস-বিজেপি’র ছত্রছায়ায় হিন্দুত্ববাদী ও উগ্রজাতীয়তাবাদীরা দেশময় যুদ্ধের উন্মাদনা ছড়িয়ে দিয়ে এমন এক আবহ তৈরি করেছেন যে দেশের একটা বড় অংশের মানুষ অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে চোখ বুজে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার জন্য পা বাড়িয়ে আছেন। আসলে উগ্রজাতীয়তাবাদ মানুষের মনে এক অহংবোধের জন্ম নয়। নিজেদের সর্বশক্তিমান ভাবতে শেখায়। এই অন্ধ হিন্দুত্ববাদী মোদীভক্তরা ভাবছেন বিশ্বগুরু ৫৬ ইঞ্চির মোদী চাইলেই নিমেষে পাকিস্তানকে ধুলায় মিশিয়ে দিতে পারেন। তাই তারা উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছেন কখন মোদী পাকিস্তান অক্রমণ করবেন।
অনুগত নেতা-মন্ত্রী এবং আইটি সেলকে মাঠে নামিয়ে সহজেই যুদ্ধোন্মাদনা তৈরি করা যায়, মোদীকে সর্বশক্তিমান নেতা ভাবানো যায় কিন্তু মোদী চাইলেই যুদ্ধ শুরু করে দেওয়া যায় না। তেমন হলে তো জঙ্গি হামলার দু’-এক দিনের মধ্যেই যুদ্ধ শুরু করে দেওয়া যেত। কিন্তু তা হয়নি। শুধু মুখে হুঙ্কার দেওয়া হয়েছে আর সামরিক বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার তৎপরতা চলেছে। এটাও ঠিক বর্তমান বিশ্বে কোনও দেশ চাইলেই যুদ্ধ শুরু করে দিতে পারে না। যুদ্ধ দু’দেশের মধ্যে হলেও তার প্রভাব হয় আন্তর্জাতিক। তাই যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায় করার কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন যুদ্ধের আগে জরুরি। বিদেশ মন্ত্রী ২৪ ঘণ্টা চোখের পাতা এক না করে সব দেশের সঙ্গে যোগা‍যোগ করেও এখনো পর্যন্ত একটা দেশের কাছ থেকে সমর্থন আদায় করতে পারেননি। প্রায় প্রতিটি দেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব নিলেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সায় দেয়নি। আমেরিকা থেকে শুরু করে রাশিয়া, ইরান, সৌদি আরব ইত্যা‍‌দি সব দেশই আলোচনার মধ্যে সমস্যার সমাধানের রাস্তা খুঁজতে বলেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব একাধিকবার বলেছেন যুদ্ধ কখনোই সমাধানের রাস্তা নয়। রাষ্ট্রসঙ্ঘর নিরাপত্তা পরিষদও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে যুদ্ধের পথ পরিহার করে আলোচনার টেবিলে বসার কথা বলেছে। নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য এবং দশ অস্থায়ী সদস্যের কেউই যুদ্ধের পক্ষে সায় দেয়নি। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক মতামতকে উপেক্ষা করে মোদীর পক্ষে যুদ্ধে নামা সহজ কাজ নয়। সর্বোপরি খোদ আমেরিকাই যুদ্ধে যেতে মানা করে দিয়েছে মোদীকে।
এই অবস্থায় যুদ্ধের সময় বিপদ থেকে রক্ষার জন্য রাজ্যে রাজ্যে সুরক্ষার মহড়া করা নির্দেশ জারিতে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তবে কি মোদীরা সত্যি সত্যি যুদ্ধে যাচ্ছেন। বস্তুত ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে এবং ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের আগে এমন মহড়ার নির্দেশ এসেছিল। তারপর কারগিল যুদ্ধ, উরি হামলা, পুলওয়ামা হামলার পর যুদ্ধ প্রস্তুতি হলেও এমন মহড়ার নির্দেশ আসেনি। তবে কি মোদী সত্যি যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন!
মনে রাখতে হবে যুদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি বা মৃত্যুর মিছিল শুধু পাকিস্তানে হবে না। ভারতেও হবে। বিশেষ করে সীমান্তের রাজ্যগুলির মানুষই যন্ত্রণা ভোগ করবেন, সর্বস্ব হারাবেন। আর যদি কোনোভাবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার হয়ে যায় তাহলে দু’টো দেশই ধ্বংস হয়ে যাবে। অন্ধভক্তরা ফড়িংয়ের মতো যতই লাফালাফি করুন মোদীকে এমন অনেক ‍‌কিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যুদ্ধ চালাতে গেলেও অন্য রাষ্ট্রের সাহায্য প্রয়োজন। যুদ্ধ হলে অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় আসবে তার মোকাবিলা করার সামর্থ্যও থাকতে হবে। যুদ্ধ ছেলেখেলা নয়। মোদীরা নিশ্চয়ই সেটা টের পাচ্ছেন।

Comments :0

Login to leave a comment