Kolkata Slum Movement

বস্তিতে মিটার দিয়েছিল বামফ্রন্ট, তৃণমূল দিয়েছে স্মার্ট মিটার

কলকাতা

কলেজ স্ট্রিটে বৃষ্টির মধ্যেই হয়েছে জনসভা। ছবি ও ভিডিও প্রীতম ঘোষ

অরিজিৎ মণ্ডল

পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি কলকাতা জেলা দ্বাদশ সম্মেলন উপলক্ষে কলকাতার কলেজ স্ট্রিট বাটার কাছে প্রকাশ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের মূল স্লোগান, ‘রুটি রুজি ছাদের লড়াই তীব্র করো, বিভেদ ভুলে ঐক্য গড়ো।’ 
লক্ষ্মীমণি ব্যানার্জি নগর আশিস দাস মঞ্চে আগামী ২-৩ আগস্ট সম্মেলন। এদিনের প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি কলকাতা জেলা সম্পাদক শিবেন্দু ঘোষ পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি রাজ্য সম্পাদক সুখরঞ্জন দে, বিশিষ্ট সমাজকর্মী সায়রা শাহ হালিম সহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।  (দেখুন ভিডিও) 
শিবেন্দু ঘোষ বলেন বস্তি মানুষের লড়াই হয়েছিল ষাটের দশক থেকে। কলকাতার এক-তৃতীয়াংশ গরিব মানুষের জীবনের উন্নতির জন্য প্রথম ভেবেছিল বামফ্রন্ট সরকার। ১৯৭৭ সালের পরবর্তী সময়ে তাদের প্রভূত উন্নতির জন্য একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল বামফ্রন্ট। তৎকালীন রাজ্য সরকার প্রজাস্বত্ব আইন লাগু করে বস্তিবাসী মানুষের মাথার ছাদ নিশ্চিত করেছিল। বর্তমানে সেই মাথার ছাদ কেড়ে নিতে চাইছে রাজ্যের সরকার। একদিকে নগরায়নের নামে উচ্ছেদ অন্যদিকে বস্তিবাসী মানুষকে বিভিন্নভাবে ঋণের জালে আটকে দিতে চাইছে। প্রমোটারি রাজ চালানোর জন্য চলছে উচ্ছেদের পরিকল্পনা, তার বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই। বামফ্রন্ট প্রতিটি বস্তিতে প্রতি ঘরে ইলেকট্রিকের মিটারের ব্যবস্থা করেছিল। কলকাতা জুড়ে দু'লক্ষ বস্তির ঘরে লেগেছিল এই মিটার। আজ সেই মিটারকে প্রিপেইড মিটার রূপান্তরিত করতে চাইছে রাজ্যের সরকার। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। 
তিনি আরো বলেন করোনার সময় আমরা বলেছিলাম ৬ মাস বিদ্যুতের বিল মকুব করতে হবে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দিতে হবে। রাজ্য সরকার বিভিন্ন খাতে অযথা পয়সা নষ্ট করছে কিন্তু গরিব প্রান্তিক অংশের মানুষকে বিনামূল্যে দিতে পারছি না কেন? দিল্লির সরকার, তামিলনাড়ুর সরকার যদি বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দিতে পারে আমাদের রাজ্যের সরকারকেও বস্তিবাসীদের বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দিতে হবে। ভবিষ্যতে এই নিয়ে আমরা লড়াই তীব্র করব। ২০ এপ্রিলের ব্রিগেড সমাবেশ থেকে রসদ সংগ্রহ করেই আমরা বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এরই রূপরেখা তৈরি হবে আগামী দুদিন। 
পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি রাজ্য সম্পাদক সুখরঞ্জন দে এদিন বলেন, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করেও কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাঁরা এসেছেন প্রত্যেককে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এত মানুষ এখানে এসেছেন আমরা সবাইকে বসার জায়গাও দিতে পারছি না। তাঁর কথায়, শ্রমজীবী মানুষ প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষ আমাদের সংগঠনের সাথে যুক্ত। আমাদের সংগঠনের গড়ে ওঠার সময় মূল দাবি ছিল স্থায়ী বাসস্থান চাই। বাসস্থানের অধিকার সুনিশ্চিত করতেই আমাদের লড়াই এখনো সেই লড়াই চলছে। অধিকার বামফ্রন্ট সরকার আমাদের দিয়েছিল। সেই অধিকারকের টিকিয়ে রাখতে হবে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গরিব প্রান্তিক অংশের মানুষ যখন আমাদের সংগঠনের পতাকা তলে আসছেন তখন তৃণমূলের থ্রেট কালচার মাথা ঢাড়া দিচ্ছে। কখন কাউন্সিলার কখনো বা পাড়ার নেতাদের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের কর্মীদের। কিন্তু তাঁরা দমছেন না। আমাদের সংগঠনের মূল আদর্শ বাসস্থান সম্প্রীতি ও উন্নয়ন। আজ আমরা যে অঞ্চলে এই প্রকাশ্য সমাবেশ করছি, এটি একটি মিশ্র অঞ্চল একদিকে হিন্দু মানুষের বসবাস ঠিক একইভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে রয়েছে। আমরা দেখেছি এখানে সম্প্রীতির নিদর্শন একাধিক দাঙ্গার সময় এখানকার মানুষ একত্রে গরিব প্রান্তিক অংশের মানুষ বস্তিবাসী মানুষ তারা একত্রে দাঙ্গার বিরুদ্ধে বিভাজনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এই আদর্শ কেউ আমাদের তুলে ধরতে হবে যেভাবে ধর্মের নামে ভাষার নামে জাতির নামে বিভাজন হচ্ছে তার বিরুদ্ধে লড়াই মজবুত করতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment