এনআরসি-তে মনে করানো হয়েছিল কেবল সংখ্যালঘুদের জবাবদিহি করতে হবে। হেনস্তার শিকার সব অংশই। এসআইআর ঘিরে তেমনই প্রচার চলছে। এটিও অসত্য, হেনস্তার শিকার হবে সব অংশই।
শুক্রবার দার্জিলিঙে সিপিআই(এম) জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক সমন পাঠক।
এদিনই বিহারের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে এসআইআর প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর। খসড়া ভোটার তালিকা রাজনৈতিক দলগুলিকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর ঘিরে নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্তের অভিযোগে সরব বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।
শিলিগুড়িতে সেলিম বলেন, ‘‘আধার কার্ড চালু করেছে দেশের সরকার। কমিশন বলছে বৈধ ভোটারের প্রমাণ হিসেবে এই নথি মানা হবে না। রেশন কার্ড যদি জাল হয় তার দায় তো রাজ্যের খাদ্য দপ্তরের। ভোটার হিসেবে বৈধ প্রমাণের নথি থেকে রেশন কার্ড বাদ দিয়ে হেনস্তার মুখে ফেলা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।’’
পশ্চিমবঙ্গেও এসআইআর-র তৎপরতা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন একাধিক জেলার বিএলও-দের বৈঠক করেছে। বামপন্থীরা রাজ্যে ভোটার তালিকায় বারবার সংশোধনের দাবি জানালেও এতদিন কমিশন নীরব থেকেছে। এবার বিহারের আদলে এরাজ্যে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত ডিগ্রি জাল। আর সাধারণ মানুষকে একের পর এক নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। এসআইআর’র নামে এখন নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। আগে থেকেই শুরু হয়েছে এনআরসি’র নোটিশ দেওয়া। তখন বিজেপি বুঝিয়েছিল কেবল মুসলমানদের নোটিশ দেওয়া হবে। এখন দেখা যাচ্ছে যে কেউ বিপদে পড়তে পারেন। আসামে তা দেখা গিয়েছে। কোচবিহারে যাঁরা আসামের এনআরসি’র নোটিশ পাচ্ছেন তাঁরা মুসলিম নন। শুরু হয় মুসলিমদের লক্ষ্য বানিয়ে। হিটলারের জার্মানিতে প্রথমে ইহুদিদের লক্ষ্য করা হয়েছিল। তারপর সব অংশকে আক্রমণ করা হয়েছিল।’’
সেলিম বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ বন্ধ। আদালত নির্দেশ দিয়েছে। তৃণমূল বলেছিল দিল্লি গিয়ে ছিনিয়ে আনবে। তার কিছুই হলো না। বিজেপি-তৃণমূল দুই সরকারই দায়ী।’’
সেলিম পাড়ায় সমাধান প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এখন বলছে পাড়ায় সমাধান। আইপ্যাককে দিয়ে করানো হচ্ছে। সংবিধানে সংশোধন করে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছিল। এরাজ্যের পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বিকেন্দ্রীকরণে। সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে আইপ্যাককে দিয়ে এই কাজ করা হচ্ছে। এদের কাছে পঞ্চায়েত, পৌরসভা মানে লুট আর নিজেদের মধ্যে মারামারি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বাইরে রেখে কাজ করানো হচ্ছে প্রশাসন আর আইপ্যাককে দিয়ে। দেশে বিজেপি যা করছে এরাজ্যে তৃণমূল সেই গণতন্ত্র বিরোধী পথেই চলছে। ভোটের আগে গিমিক। সংবিধান, নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাড়ায় সমাধানের প্রকল্প।’’
সেলিম সিপিআই(এম)’র লড়াই কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘জুলাই-আগস্ট জুড়ে অন্য বামপন্থী দলগুলিকে নিয়ে আন্দোলন চলছে। জমি, কাজের দাবি জানানো হচ্ছে। ভাগাভাগির রাজনীতির বিরুদ্ধে, বাংলাভাষীদের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। বহু মানুষ যোগ দিচ্ছেন।’’
এসআইআর-এ তৃণমূল বলেছে রাজ্যের কারও নাম বাদ পড়বে না বলেছে। এই প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘পিসি-ভাইপো দু’জনে খানদানি মিথ্যাবাদী। ২০০৬’র ভোটের আগে মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশি নামের কথা তুলে বাংলার ভোটার লিস্ট ছুঁড়ে মেরেছিলেন। ওনাকে কে বিশ্বাস করবে?’’
অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত বিজেপি’র বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান অনুযায়ী সীমানার দায়িত্ব তো কেন্দ্রের। আদবানি থেকে অমিত শাহ বহু কথা বলছেন। আমরা সরকার চালানোর সময় জমির ব্যবস্থা করেছি। কাটাতাঁর হয়েছে। বিজেপি আগে দায়িত্ব স্বীকার করুক, কাঁটাতারের বেড়া সত্ত্বেও তৃণমূলের সঙ্গে যোগসাজশে মানবপাচার চলছে। সেই আসল কথাটি বলা হচ্ছে না। এসআইআর-এ যা হচ্ছে তা হলো সব নাগরিককে হেনস্তা করা।’’
মমতা ব্যানার্জির দু-মুখো নীতির কড়া সমালোচনা করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘কোচবিহারের বাসিন্দাদের আসামের পাঠানো এনআরসি নোটিশ দিচ্ছে রাজ্য প্রশাসনেরই লোক। তা’হলে রাজ্য জানে না এটা হতে পারে না। রাজ্যের মুখ্যসচিব আসামে চিঠি পাঠিয়ে বলছেন না কেন যে এ রাজ্যের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব পরীক্ষা করা তোমাদের কাজ নয়! আর তৃণমূল মুখে এনআরসি বা এসআইআর-র বিরোধিতা করছে।’’
বাংলাদেশির নাম করে বাংলাভাষীদের নিপীড়ন প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘গুরগাঁওয়ে যা হয়েছে তা হলো পুলিশ নিজেই তুলে নিয়ে শাস্তি দিয়েছে। পুলিশ শাস্তি দিতে পারে না। সেই দায়িত্ব আদালতের। আসল উদ্দেশ্য ভয় এবং আতঙ্ক তৈরি করা।’’
Md Salim
এসআইআর’র নামে হেনস্তা সব নাগরিককে, বিজেপি-তৃণমূলের কড়া সমালোচনা সেলিমের
×
Comments :0