তিন মাসেরও বেশি বিলম্বে হলে শেষ পর্যন্ত পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা ও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে। বিরোধীদের তোপের মুখে এবং একের পর এক প্রশ্ন ও অভিযোগের বাণের মুখে সরকার পক্ষ আগের মতই কৌশলে যথাযথ উত্তর এড়িয়ে গেছে। আগের মতই ইতিহাসের বস্তাপচা অভিযোগগুলি তুলে এনে বিতর্কের উদ্দেশ্যকে গুলিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে। বিরোধীদের তোলা অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট প্রশ্নগুলির কোনও উত্তরই স্পষ্টভাবে দিতে পারেনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও বিদেশ মন্ত্রীরা। আসলে প্রশ্নগুলির যথাযথ উত্তর ব্যাখ্যা দেওয়া হলে সরকারের চরম ব্যর্থতা ও অপদার্থতা প্রমাণ হয়ে যাবে। অতএব তাদের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকারই থাকে না। এই অসহায় পরিস্থিতির মধ্যেই মরিয়া চেষ্টা করে গেছে সত্যকে আড়াল করার।
বিরোধী দলনেতা প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর অর্ধেক সাহসও যদি নরেন্দ্র মোদীর থেকে থাকে তবে তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলুন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প পাক-ভারত যুদ্ধ বিরতি নিয়ে বারবার মিথ্যে কথা বলে চলেছেন। ট্রাম্পের চাপের কাছে মাথানত করে ভারত অপারেশন সিঁদুর আচমকা বন্ধ করে দেয়নি। বলাবাহুল্য মোদী সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সাহস দেখাতে পারেননি। ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ তো করেনইনি, এমনকি আমেরিকার নামও মুখে আনেননি। এটুকুই শুধু বলেছেন কোনও বিশ্বনেতা অপারেশন সিঁদুর বন্ধ করতে ভারতকে বলেনি। পাকিস্তানের অনুরোধেই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঘটনাচক্রে সংসদে আলোচনা চলার সময় ট্রাম্প দু’বার এমনকি মোদী ভাষণ দেবার সময়ও দাবি করেছেন। তাঁর মধ্যস্থতাতেই যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে। ১০ মে থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন উপলক্ষে ট্রাম্প অন্তত ২৮ বার তাঁর হস্তক্ষেপের কথা জোর গলায় দাবি করেছেন। অথচ বিশ্বগুরু নরেন্দ্র মোদী একবারের জন্যও সরাসরি ট্রাম্পের কথার প্রতিবাদ বা বিরোধিতা করেননি। একবারও বলেননি ট্রাম্প ভারতের নাম করে বারবার মিথ্যে কথা বলে চলেছেন। ট্রাম্প যাতে এমন মিথ্যে কথা না বলেন তার জন্য ভারতের তরফে ট্রাম্পকে মোদীর কড়া বার্তা দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু মোদী ভয়ে হোক বা অন্য কোনও রহস্যজনক কারণে হোক মুখে খিল দিয়ে বসে আছেন। দেশের সংসদে দাঁড়িয়েও মুখ খোলার সাহস তার হয়নি। তার মানে ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। মোদীরা যতই ইনিয়ে-বিনিয়ে ট্রাম্পের খবরদারি অস্বীকারের চেষ্টা করুন ট্রাম্প যে সত্যি সত্যি হস্তক্ষেপ করেছেন বাণিজ্য চুক্তি না করার হুমকি দিয়ে যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করিয়েছেন সেটা উড়িয়ে দেবার উপায় থাকছে না। ট্রাম্প সত্যি সত্যি হস্তক্ষেপ করেছেন বলেই মোদীরা ট্রাম্পের দাবির বিরোধিতা করতে পারছেন না। এবং তাঁকে মিথ্যাবাদী বলতে পারছেন না।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো ট্রাম্পের ভূমিকা কিন্তু প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে পাকিস্তান। এমনকি তারজন্য তারা ট্রাম্পকে ধন্যবাদও জানিয়েছে। বলাবাহুল্য যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব পাকিস্তানের তরফে আসার কয়েক ঘণ্টা আগে সুদূর ওয়াশিংটনে বসে ট্রাম্প যুদ্ধ বিরতিতে দু’দেশের সম্মতির কথা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। গোটা প্রক্রিয়ায় যুক্ত না থাকলে এটা কখনই সম্ভব হতে পারে না।
EDITORIAL
ট্রাম্পের নাম উচ্চারণের সাহস নেই মোদীর

×
Comments :0