এতদিন মোদী সরকারের বিরোধিতা বা সমালোচনা করলে তাদের দেশদ্রোহী সাব্যস্ত করে পুলিশি হেনস্তার ধারা প্রচলিত ছিল। এবার বম্বে হাইকোর্টের এক বেঞ্চ বুঝিয়ে দিয়েছে মোদী সরকারের জিগরি দোস্ত ইজরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ করা হলেও তা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী বলে বিবেচিত হবে। গাজায় ইজরায়েলী গণহত্যার বিরুদ্ধে দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা যাবে না। হিন্দুত্ববাদী একাধিপত্যকামী মোদী সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী রক্ষণশীলতার প্রভাব যে বিচার ব্যবস্থার ওপরও প্রবলভাবে সক্রিয় তাতে আর সন্দেহের অবকাশ নেই।
ইজরায়েল কেন্দ্রীয় আরএসএস-বিজেপি সরকারের অন্যতম ঘনিষ্ঠতম মিত্র। ইজরায়েল অসন্তুষ্ট হতে পারে বা আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিপদে পড়ে যেতে পারে এমন কোনও পদক্ষেপ থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকে মোদীর ভারত। গাজায় গণহত্যা প্রশ্নে রাষ্ট্রসঙ্ঘের একাধিক ভোটাভুটিতে মোদী সরকার ইজরায়েলকে রক্ষা করতে হয় ইজরায়েলের পক্ষে ভোট দিয়েছে অথবা ভোটদানে বিরত থেকেছে। সেই ইজরায়েলের গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে ভারতে প্রতিবাদ সভা হবে মেনে নিতে পারেননি বম্বে হাইকোটেরর দুই বিচারপতি। তাই আইন-শৃঙ্খলার অজুহাত দেখিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। পাশাপাশি নিদান দিয়েছেন ঘরোয়া বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করা যেতে পারে তাই বাইরের অবান্তর বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ নৈব নৈব চ। বিচারপতিদ্বয়ের বিবেচনায় সারা বিশ্বে স্বীকৃত গাজায় ইজরায়েলী গণহত্যার বিরুদ্ধে ভারতে প্রতিবাদ কর্মসূচি হলে সেটা নাকি ভারতের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে। গাজায় গণহত্যার বিরোধিতা বিশ্ব মানবিকতার দায়। তার সঙ্গে ভারতের জাতীয় স্বার্থের সম্পর্ক ঠিক কোন জায়গায় বিচারপতিরা স্পষ্ট করেননি।
বিশ্ব দুনিয়া প্রতিদিন দেখাচ্ছে গাজায় প্রতিদিন নরহত্যার অভিযান চালাচ্ছে ইজরায়েল। ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ হাজার নিরীহ মানুষকে খুন করেছে নেতানিয়াহুর খুনে বাহিনী। দুনিয়া জুড়ে দেশে দেশে চলছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। খোদ আমেরিকাতেও প্রতিদিন প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। এমনকি ইজরায়েলের মানুষও তাদের সরকারের নিরপরাধ মানুষ খুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। আন্তর্জাতিক আদালত গণহত্যার জন্য ইজরায়েলী প্রধানমন্ত্রীর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রতিটি সংস্থা গণহত্যা বন্ধ করার কথা বলছে বারবার। এমনকি ভারতও যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলছে। আর মা-র থেকে মাসির দরদ বেশির মতো দুই বিচারপতি বলছেন গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যাবে না। তারা ভারতের স্বার্থ ও ইজরায়েলের স্বার্থকে এক করে ফেলেছেন।
প্রসঙ্গত বম্বে হাইকোর্টের বেঞ্চ যখন এমন মতামত দিচ্ছে তখন ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করছেন তারা প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেবে। জেনে রাখা ভালো রাষ্ট্রসঙ্ঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৪টি দেশ ইতিমধ্যে প্যালেস্তাইনকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে। তাদের মধ্যে রয়েছে চীন, রাশিয়া এবং ভারতও। ভারতের স্বীকৃতি দেওয়া স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের নিরপরাধ নাগরিকদের নির্বিচারে খুন করার বিরুদ্ধে ভারতে প্রতিবাদ হলে সেটা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী হয় না, জাতীয় স্বার্থবাহী হয়।
editorial
এ কেমন বিচার!

×
Comments :0