Chhattisgarh Bengali

ছত্তিশগড়ে শতাধিক হিন্দু বাঙালিকেও হেনস্তা বিজেপি সরকারের, মুখ্যমন্ত্রী নীরব কেন ?

উত্তর সম্পাদকীয়​


 

 

বিজেপি শাসিত ছত্তিশগড়ে ১০৯ জন বাঙালিকে নোটিস দিয়ে সেরাজ্যের প্রশাসন হয়রানি করে চললেও পশ্চিমবঙ্গের সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী নীরব কেন? বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর মিছিলের পরেই এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। 
এদিন বিকালে সাংবাদিক বৈঠক করে সুজন চক্রবর্তী ছত্তিশগড়ের কাঁকের জেলায় ১০৯ জন বাঙালিকে হেনস্তার তথ্য প্রকাশ করে বলেছেন, এরা বাংলার মানুষ, ভারতীয় নাগরিক, এমনকি এক্ষেত্রে ঘটনাচক্রে তাঁরা হিন্দুও। তাঁদের নামের তালিকাও আমাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু ছত্তিশগড়ের পুলিশ তাদের নোটিস পাঠিয়ে ডেকে পাঠাচ্ছে, বাংলাদেশি বলে তাড়াতে চাইছে। বিজেপি এই হয়রানির সম্পর্কে কী বলছে? আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিই বা চুপ করে বসে আছেন কেন? মুখ্যমন্ত্রীর ভোটার না হলে কি তাঁদের প্রতি এরাজ্যের সরকারের কোনও দায়িত্ব নেই? 
বাংলাভাষীদের হয়রানি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গের সরকার কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ না নিয়ে কেবল রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়েই আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পারস্পরিক এমনভাবে কর্মসূচি নিচ্ছে যাতে একে অপরকে সাহায্য করতে পারে। এরজন্য বিজেপি এখন যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে হইচই করছে মমতা ব্যানার্জি সেই একই কথা বলে লোকসভায় উপাধ্যক্ষকে কাগজ ছুঁড়েছিলেন ২০০৫ সালে। তারপর থেকে ভিন রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্তা করে বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে একবারও মমতা ব্যানার্জিকে সরব হতে দেখা যায়নি। ২০০৩ সালে এনডিএ সরকারের সময়কালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতাও করেননি মমতা ব্যানার্জি। আর বিজেপি তো ভিন রাজ্যে হেনস্থাকারীদের পাশেই রয়েছে। দুই দল মিলে সাম্প্রদায়িক বিভাজন করতে চাইছে এরাজ্যের মানুষের মধ্যে।
মুখ্যমন্ত্রীর হিন্দিতে ভাষণ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, বাঙালি অস্মিতা দেখাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিন্দিতে ভাষণ দিয়েছেন কার কাছে বার্তা দেওয়ার জন্য? বাংলার মানুষের জন্য উনি নন, উনি কেবল নিজের উদ্দেশ্যপূরণের জন্য যা করার করছেন।  
বাংলাকে ছারখার করে দেওয়ার জন্য তৃণমূলকে দায়ী করে তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন বাংলা তার মেয়েকে চায়। কিন্তু বাংলায় মেয়েদের নিরাপত্তা নেই, যুবদের কাজ নেই, শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর আশেপাশে সেই সব ব্যক্তিরাই রয়েছেন যারা বাংলা বিরোধী, তারা যে কোনও সময়ে বিজেপি’তে চলে যেতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারে আসার শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় টাকা দিয়ে চাকরি হয়েছে। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে এসএসসি বছরে বছরে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ করতো। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছিল। এখন রাজ্যে কাজ না পেয়ে রাজ্য ছেড়ে যুবদের চলে যেতে হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে। সিপিআই(এম) মহাশূন্য বলে মুখ্যমন্ত্রী মহানন্দে নাচছেন? কিন্তু এর জন্যই তো আনিস হত্যা, অভয়া হত্যা, এমনকি তৃণমূলের হাতে তৃণমূলের কর্মীদের খুন ধর্ষণ ঘটে চলেছে, কোনো ঘটনায় ন্যায়বিচার মিলছে না। সিপিআই(এম) দুর্বল হলে মানুষের জীবনজীবিকার আন্দোলন দুর্বল হয়ে যায়। তাই সিপিআই(এম)’কেই শক্তিশালী করতে হবে রাজ্যের মানুষের স্বার্থে। 
বিজেপি’কে রুখতে ইন্ডিয়া মঞ্চে তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি উড়িয়ে দিয়ে সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, দেশের যেখানে ইন্ডিয়া আছে সেখানে তৃণমূল নেই, যেখানে তৃণমূল আছে সেখানে ইন্ডিয়া নেই। কাজেই ওঁর মুখে ইন্ডিয়ার কথা মানায় না। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি যত হিন্দুত্বের কথা বলছে, ততই তৃণমূলের সুবিধা হচ্ছে। কারণ রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে, দুর্নীতি বন্ধে তৃণমূল এবং বিজেপি’র কোনও ভাবনা নেই। সেগুলি আড়াল করতে চাইছে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের দাপট এতটাই আনলিমিটেড যে খুন করবে তৃণমূল, খুনের পরে বিরোধীদের ঘাড়ে দায় চাপাবে তৃণমূল! তৃণমূলের কর্মসূচিতে সবাইকে যোগ দিতে হবে, যোগদানের ছবি দিতে হবে, নইলে সরকারি প্রকল্প থেকে বাদ যাবে। বোমা বাঁধার লোক যদি মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয় তাহলে যে সর্বনাশ হওয়ার এরাজ্যে তাই হয়েছে। তৃণমূলের দুষ্কৃতীবাহিনীর পাশ থেকে পুলিশ যদি সাতদিনের জন্যও সরে যায় তাহলে তৃণমূলের লোকেরা মানুষের ঘৃণায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের মেয়াদ বৃদ্ধির বিরুদ্ধে যে কথা বলেছেন সেটাকেও দুই দলের সাজানো বিবাদ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী মনোজ পন্থের এক্সটেনশন চাইলে বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার অনুমতি দিয়েছেন কেন? আসলে তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী যা চান, বিজেপি তাই করে দেয়।
 

Comments :0

Login to leave a comment