অনিন্দিতা দত্ত : শিলিগুড়ি
অতীত ঘটনার পুনরাবৃত্তি উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। ফের চরম অমানবিক চিত্র ফিরলো উত্তরবঙ্গের সবচাইতে বড় হাসপাতালে। অজ্ঞাত পরিচয় মৃত ভবঘুরের দেহ খুবলে খেল কুকুর। বৃহস্পতিবার সকালে মেডিক্যালের করিডরে পড়ে থাকা ভবঘুরের মৃতদেহের ডান পা কুকুরের খুবলে খাবার ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। পরে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ভবঘুরের খুবলে খাওয়া রক্তাক্ত দেহ তুলে নিয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে মৃতদেহের খুবলে খাওয়া দেহের অংশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এইরকম হাড়হিম করা ঘটনার পুনরাবৃত্তির কথা জানাজানি হতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
অতীতেও প্রায় দেড় বছর আগে শিলিগুড়ি আশিঘর এলাকার এক বাসিন্দার দুর্ঘটনায় কাটা হাত রোগীর পাশেই রাখা ছিলো। সেই কাটা হাতটি আচমকাই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কলেজ থেকে উধাও হয়ে যায়। পরবর্তীতে দেখা যায় দুর্ঘটনায় কাটা পরে যাওয়া হাতটি হাসপাতালের এমারজেন্সি ওয়ার্ড থেকে কুকুর মুখে তুলে নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কলেজ চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও খুবলে খাচ্ছে। শুধু তাই নয়, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেও রক্তের পাউচ চুরি হয়ে যাবার ঘটে ঘটেছিলো বছরখানেক আগে। পরে রক্তের পাউচ মুখে তুলে নিয়ে মেডিক্যালে চত্বরে কুকুরকে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছিলো। এইরকমই ঢিলেঢালা চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা উত্তরবঙ্গমেডিক্যালে কলেজের। যা নিয়ে বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। উত্তরবঙ্গের সবচাইতে বড় হাসপাতাল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কলেজ ও হাসপাতালে মালদা থেকে কোচবিহার প্রতিটি জেলা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন। প্রতিটি জেলা থেকে রোগীদের স্থানান্তরিত করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। তৃতীয়বার এই ধরনের ঘটনার স্মৃতি ফিরলো উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কলেজ ও হাসপাতালে। ভয়ঙ্কর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই আরো একবার মেডিক্যালে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ব উঠতে শুরু করেছে। হাসপাতালের সুরক্ষা ব্যবস্থা ও নজরদারিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের করিডরে এই ঘটনা ঘটেছে। মেডিক্যালের রেডিওলজি ও ইন্টিগ্রেটেড অনকোলজি বিভাগের বাইরের করিডরে অসুস্থ অবস্থায় এক ভবঘুরের মৃত্যু হয়। আর করিডরেই ভবঘুরের মৃতদেহ পড়েছিলো। আশেপাশে কেউ ছিলো না। সকলের অলক্ষ্যেই পথ কুকুরেরা মৃত ভবঘুরের একটি পা খুবলে খায়। বিষয়টি বৃহস্পতিবার সকালে মেডিক্যালের নিরাপত্তা রক্ষীদের নজরে আসতেই দ্রুত তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে খবর দেয়। খবর পেয়ে কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি ভবঘুরের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়। এরপর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে মেডিক্যালে কলেজ ও হাসপাতাল ফাঁড়িতে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। হাসপাতালের আধিকারিকদের কথায়, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কলেজ ও হাসপাতালে পথ কুকুরদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে মেডিক্যালে কলেজ চত্বর এখন ভবঘুরেদের আস্তানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে নানাভাবে মেডিক্যালে কলেজ কর্তৃপক্ষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তথা সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, মেডিকেল চত্বরে পথকুকুরদের সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। প্রতিদিন কুকুরের সংখ্যা বাড়ছে। একইভাবে অনেক ভবঘুরে চলে আসছে মেডিক্যালে। হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে চলে যাচ্ছেন অনেকেই। পরে এই ভবঘুরেদের কেউ থাকছে না। বহু ভবঘুরেদের স্থায়ী আস্তানা হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কলেজ চত্বর। পথকুকুরদের দৌরাত্ম্য ও তার জেরে সমস্যা দীর্ঘদিনের। কখনও রাতে ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার সময় কুকুরেরা ধাওয়া করছে। আবার কখন মেডিক্যালের চিকিৎসক, ফ্যাকাল্টি ও পড়ুয়াদের কুকুর কামড়ে দিচ্ছে। এই বিষয়ে পৌর কর্পোরেশন, প্রাণী সম্পদ দপ্তর, জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন কিছুই হয়নি। হাসপাতালে আসা রোগীর পরিজনরা উচ্ছিষ্ট খাবার দিচ্ছে পথকুকুরদের। আশপাশে বাজারও রয়েছে। মেডিক্যালের সীমানা প্রাচীরের একাধিক জায়গায় ফাঁকা থাকার ফলে কুকুর অনায়াসে ভেতরে ঢুকে পড়ছে। সমস্যা আরো বাড়ছে। আবার বিষয়টি সবস্তরে জানানো হবে। তিনি জানান, নিরাপত্তারক্ষীদের কাছ থেকে খবর পাওয়া মাত্রই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ভবঘুরের দেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কলেজ ও হাসপাতালের রোগী কল্যান সমিতির সদস্য মেয়র গৌতম দেবের বক্তব্য ভবঘুরেদের এই সমস্যা মেটাতে আমাদের করনীয় খুব একটা কিছু নেই। হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা দেখে প্রয়োজনীয় যা করার তা করা হবে।
North Bengal Medical College
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ফের দেহ খুবলে খেল কুকুর

×
Comments :0