Neo Fascism Bangladeshi

বাংলাভাষী-বিদেশি-বুলডোজার রাজনীতিতে নয়া ফ্যাসিবাদী প্রবণতা, বললেন সেলিম

রাজ্য

রাজ্যে রাজ্যে হেনস্তা। উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে পরিযায়ীদের পরিবার। দিনহাটার ছবি সংগ্রহ থেকে।

অরিজিৎ মণ্ডল

প্রান্তিক অসহায় প্রান্তিক মানুষকে উচ্ছেদ করার অভিযান চলছে। দেশের সরকার মানুষের চাহিদা, বুনিয়াদি চাহিদার দিকে নজর দিচ্ছে না। তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করার ব্যবস্থা করছে। তার একটি হলো বুলডোজার সংস্কৃতি। কেবল দেশের সরকার নয়। রাজ্যের সরকারও পিছিয়ে নেই।
সেলিম বলেন, হকার উচ্ছেদ করার জন্য টালিগঞ্জে লর্ডসের মোড়ে কিভাবে বুলডোজার ব্যবহার করা হয়েছে সবাই দেখেছেন। 
সেলিম বলেন, বারাসতে উদ্বাস্ত কলোনি গড়ে উঠেছিল পঞ্চাশের দশকে। ইউসিআরসি তার স্বীকৃতির জন্য লড়াই চালিয়েছিল। বামফ্রন্ট সরকার নিঃশর্ত দলিল দিয়েছিল এই সব কলোনিগুলিতে।  মমতা নানারকম ডিগবাজি আর কারসাজি করেছেন।
রেলের জমিতে এই উদ্বাস্তু কলোনি কেন সেই প্রশ্ন তুলে বাহাত্তর ঘন্টার নোটিসে ১৯ জুলাই উচ্ছেদের নোটিস দেওয়া হয়েছে। 
সেলিম বলেন, এখনও জেলা প্রশাসন বা রাজ্য সরকার নড়েচড়ে বসেনি। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় রেলের জমিতে স্বীকৃত উদ্বাস্তু কলোনি কারশেডের কথা বলে সরানোর চেষ্টা হয়। সে সময় বামফ্রন্ট সরকার, জেলা প্রশাসন, ইউসিআরসি যৌথভাবে তা ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়। রেলই বাড়তি জমিতে এই মানুষের বসতির ব্যবস্থা করে। এই মানুষ দ্বিতীয়বার উদ্বাস্তু হয়েছিলেন কিন্তু পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে পুনর্বাসন না দিয়ে উচ্ছেদ করা চলবে না।  
সেলিম বলেন, ওই দিকটি না দেখে নির্বিচারে উচ্ছেদ ও বুলডোজার রাজনীতি, যে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আধিপত্য জাহির করা হয়, তার প্রয়োগে নামা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। এই উদ্বাস্তু মানুষ যাতে আবার ছিন্নমূল না হন তার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। দুই সরকারি এই উচ্ছেদের পক্ষে। 
সেলিম বলেন, দেশের সংবিধান ও আইন এই ধরনের পদক্ষেপকে সমর্থন করে না। কিন্তু কোনও সরকারই এই আইন মানছেন না। 
আমরা দেখেছিলাম দিল্লিতে কিভাবে উচ্ছেদ আটকে ছিলেন বৃন্দা কারাত। বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছিলেন তিনি। বিভিন্ন রাজ্যে প্রান্তিক মানুষ খেটে খাওয়া মানুষ কোন ভাষা করা হচ্ছে বুলডোজার রাজনীতি দিয়ে।
সেলিম বলেন, পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ হবে না, এই রায় সুপ্রিম কোর্টের। আর জি কর সহ বিভিন্ন আন্দোলনে সাময়িক থেমেছিল। আবার উচ্ছেদে নেমেছে। বারাসতে অবিলম্বে রেল প্রশাসনকে ক্ষান্ত করা উচিত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজ্য সরকার, জেলা প্রশাসন সকলের উদ্যোগ নিতে হবে। এখানেই বামফ্রন্ট সরকারের সঙ্গে পার্থক্য। সে সময়ে রাজ্য প্রশাসন সবাই নেমে উচ্ছেদ ঠেকিয়েছিল। এখন কোনও ভূমিকা নেই কারণ রাজ্য ও কেন্দ্র দু’টি সরকারই উচ্ছেদপন্থী। 
সেলিম বলেন, দিল্লিতে বুলডোজার রাজনীতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলাম আমরা। এখন আবার প্রান্তিক মানুষ, পরিযায়ী শ্রমিক বিপন্ন। অর্থনীতির কারণে গ্রাম থেকে শহরে মানুষ আসছেন, সমানে বাড়ছে। সংবিধানে কেন্দ্র তালিকায় পরিযায়ীদের স্বাস্থ্য, সুযোগ-সুবিধার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। 
সেলিম বলেন, বিজেপি সরকার, আরএসএস’র বিভিন্ন সংগঠন নির্দিষ্ট ভাবে বাংলাভাষী মানুষকে আসাম থেকে গুজরাট পর্যন্ত, বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গা তকমা লাগিয়ে ‘পুশব্যাক’ করা বা ‘সন্দেহজনক ভোটার’ বলে চিহ্নিত করছে। বিহারের বিশেষ গভীর সমীক্ষা বা এসআইআর থেকে সিএএ-এনআরসি একই উদ্দেশ্যে। এখন যা হচ্ছে মহারাষ্ট্রে, ওড়িশায়, রাজস্থানে, ছত্তিশগড়ে, গুজরাটে। 
সেলিম বলেন, অপরায়ণর রাজনীতি আলাদা করে দেখাতে চায়। ভাষা-ধর্মের নামে চলে অপরায়ন। নয়া ফ্যাসিবাদের একটি বৈশিষ্ট এই অপরায়ণ। আমেরিকায় আমরা দেখেছি হাতকড়া পরিয়ে ফেরানো হচ্ছে। এখানে বৈষম্য এবং ঘৃণা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের জাতীয় সংহতিকে বিনষ্ট করার প্রক্রিয়া। আরএসএস বিজেপি যে ফ্যাসিস্ট কায়দায় দেশ পরিচালনা করতে চাইছে এসব তার অংশ। সে কারণে আসামের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বলেন বাংলা মাতৃভাষা লেখা হলে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হবে। এখনও বিজেপি সেই মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে বলেনি। বলবে না। কারণ এটি পরিকল্পিত। 
সেলিম বলেন, ছত্তিশগড়ে উদ্বাস্তু মানুষের ওপর নির্দয় আচরণ করা হচ্ছে ভাষার নামে। তাঁদের হেনস্তা করছে, অমানবিক আচরণ করছে। এটি আরএসএস’র প্রকল্পের অংশ। আর দিল্লিতে আমাদের রাজ্যের রেসিডেন্ট কমিশনার কেন বাংলাভাষী হেনস্তা রুখতে উদ্যোগ নেবেন না। আমাদের নেত্রী বৃন্দা কারাত এবং অন্যদের যেতে হয়েছে। 
সেলিম মহারাষ্ট্রে বাংলাভাষী হেনস্তা প্রসঙ্গে বলেন, শান্তনু ঠাকুর কার্ড দিয়েছিল। এই পদ্ধতি যদি চলে যে কার্ড দিয়েছে তাকেও ধরতে পারে। এসআইআর যা করা হয়েছে এরপর বাংলায় হবে। প্রান্তিক মানুষকে সরিয়ে রাখার কৌশল। মমতা-মোদী মানুষকে বাধ্য করছে বলতে যে আমাদের ভোট দিতে দিন। কখনও বন্দুক-বোমা ব্যবহার করা হয়। এখানে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সেলিম বলেন, মমতা মহাকরণ দখল করতে গেলেন ফটো আইডেন্টিটি কার্ডের দাবিতে। সেখানে ২১ জুলাইয়ের সূত্রপাত। কার্ড দেয় তো কমিশন। তারপর গুলি বোমা পিস্তল নিয়ে যা করলেন মনীষ গুপ্ত রিপোর্টে তা বেরলে। পরে মনীষ গুপ্তকে পুরস্কার দিলেন, আবার লুকিয়ে রাখলেন।  
মঙ্গলদই উপনির্বাচন স্থগিত করার দাবি উঠেছিল বাংলাদেশি ভোটার আছে। উগ্র অসমিয়া জাতীয়তাবাদ উসকে দেওয়া হয়েছিল। পঁচিশ বছর পর সংসদে একই কথা মমতা সংসদে বলেছিলেন। আরএসএস’র কর্মসূচি অনুযায়ী কাজ করেছিলেন মমতা। এখন নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে বিজেপি সে কাজ করছে। তৃণমূলের বিরোধিতা করার নৈতিক অধিকার নেই। এখন তামাশা করে মিছিল করছেন।

Comments :0

Login to leave a comment