কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার ৮২দিন পর গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা। তার আগে সর্বদলীয় বৈঠকের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ক্ষীণ কণ্ঠে নিরাপত্তার গলদ ছিল বলে মেনে নিলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ প্রশ্নে এখনো পর্যন্ত টু শব্দটিও করেননি। প্রধানমন্ত্রীর অভ্যেসই হলো যেখানে যত সাফল্য সবই তাঁর কৃতিত্ব বলে দাবি করেন। কিন্তু ব্যর্থতার পাহাড় জমলেও তাঁর মৌনভঙ্গ হয় না।
এখন প্রশ্ন হলো যে চরম ব্যর্থতা ও অপদার্থতার কারণে ২৬জন নিরাপরাধ মানুষের প্রাণ গেল তার জন্য মুখে দায় স্বীকার করলেই সাত-খুন মাপ হয়ে যাবে। তার পরও তিনি বহাল তবিয়তে শীর্ষপদে বসে ছড়ি ঘোরাবেন? এক্ষেত্রে যে কোনও দায়িত্বশীল, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বিবেকবান মানুষেরই প্রথম কাজ স্বেচ্ছায় পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া। যারা স্বজন হারালেন তারা অন্তত এইটুকু বুঝবেন ভদ্রলোকের এইটুকু হলেও মনুষ্যত্ব বোধ আছে। তার থেকেও বড় প্রশ্ন দায় কি একান্তভাবেই রাজ্যপালের? জম্মু-কাশ্মীরের যাবতীয় বিষয়ে নীতি নির্ধারণে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁর ক্ষমতা বা এক্তিয়ার কতটুকু। তিনি নিছকই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি মাত্র। তাঁকে শিখণ্ডি খাড়া করেই কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং নীতি নির্ধারণ করে। আর জঙ্গি দমন, সীমান্ত পাহারা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুরোপুরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর অধীনে। এটা কে না জানে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গুলি হেলন ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর এদিক ওদিক করার জো নেই। তাহলে মনোজ সিনহার দায় স্বীকার নিতান্তই ভাঁওতাবাজি ঠেকছে না! নিরাপত্তা তথা গোয়েন্দা নজরদারি যাবতীয় ব্যবস্থা তো অমিত শাহর দপ্তর থেকে হয়, রাজ্যপাল তো শুধু হুকুম তামিল করেন। তাহলে মনোজ সিনহা দায় স্বীকার করলে তো কেন্দ্রীয় সরকারের দায় চুকে যাচ্ছে না। দায় যদি নিতেই হয় তাহলে সেই দায় নিতে হবে অমিত শা-কে। কারণ তিনিই তো আসল নাটের গুরু। মনোজ সিনহার দায় অবশ্যই আছে এবং সেই দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করাটাই তার পক্ষে ন্যায়সঙ্গত ও উচিত কাজ। কিন্তু তার মানে এই নয় মনোজ সিনহাকে বলির পাঁঠা বানিয়ে অমিত শাহ পার পেয়ে যাবেন। ২৬টি অমূল্য জীবন চলে গেছে তাঁর মন্ত্রকের সীমাহীন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে। এই দায় অমিত শাহ অস্বীকার করতে পারেন না। দায় স্বীকার করে তাঁর পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে যাওয়া উচিত। ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেননি। এক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় সরে না গেলে প্রধানমন্ত্রীরই উচিত তাকে সরিয়ে দেওয়া।
আর প্রধানমন্ত্রীই বা দায়মুক্ত হন কি করে? ৩৭০ ধারা বিলোপ সহ কাশ্মীরের হেন বিষয় নেই যা তাঁর অগোচরে ঘটে। তিনি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মাঝে মধ্যেই ঘোষণা করেন কাশ্মীর স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সন্ত্রাসবাদ এখন ইতিহাস হয়ে যাবার পথে। পহেলগাম হামলার কয়েক দিন আগেও অমিত শাহ শ্রীনগরে গিয়ে ঘোষণা করেছেন কাশ্মীর শান্ত। প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বারবার এমন ঘোষণা ও আশ্বাসে ভরসা করেই গোটা দেশ থেকে পর্যটকরা কাশ্মীরে বেশি বেশি করে যেতে শুরু করেছেন। পর্যটকদের ডেকে এনে যদি তাদের নিরাপত্তার পরিপূর্ণ ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে তার দায় সরাসরি বর্তায় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর উপর। প্রধানমন্ত্রী এবার অন্তত মুখ খুলে দায় স্বীকার করে নিন। পদত্যাগ না হয় পরে করবেন।
Pahelgam Responsibility
মোদী-শাহ কবে দায় স্বীকার করছেন

×
Comments :0