ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে নাগরিকত্ব যাচাই নিয়ে এবার আপত্তি তুললো মোদী সরকারের শরিক তেলুগু দেশমও। বিহারে আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে বিতর্কিত এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে এনডিএ’র প্রধান সহযোগী দলেরই তীব্র আপত্তি রয়েছে। বিজেপি’র জোটসঙ্গী ও এনডিএ’র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে স্পষ্ট জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্য শুধুই ভোটার তালিকা সংশোধন ও অন্তর্ভুক্তি হওয়া উচিত, নাগরিকত্ব যাচাই নয়।
টিডিপি’র প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই চিঠি জমা দেয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, “এসআইআর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ যাতে ভোটার তালিকা ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছভাবে হালনাগাদ করা যায়। এর লক্ষ্য স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে এবং নাগরিকত্ব যাচাইয়ের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই— এ কথা জনগণকে জানাতে হবে।”
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যাঁরা ইতিমধ্যেই বৈধ ভোটার তালিকায় আছেন, তাঁদের পুনরায় যোগ্যতা প্রমাণ করতে বাধ্য করা অনুচিত। ভোটার তালিকা থেকে নাম মুছে দেওয়ার আগে সুনির্দিষ্ট তদন্ত করতে হবে এবং প্রমাণের দায় ভোটারের নয়, বরং রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক বা আপত্তিকারীর ওপর।
এছাড়াও টিডিপি’র ওই চিঠিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ নির্বাচনের অন্তত ছ’মাস আগে শেষ করতে হবে। অস্থায়ী ঠিকানা ঘোষণা করে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম না বাদ দিতে মোবাইল বিএলও ইউনিট চালু করা উচিত। ভোটার বাতিলের আগে যথাযথ নোটিস ও যুক্তিসঙ্গত নির্দেশ জারি করতে হবে। ভোটার তালিকায় অনিয়ম ধরতে বছরে একবার তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে অডিট করা এবং এআই টুল ব্যবহার করে নকল/মৃত ভোটার শনাক্ত করা। সমস্ত রাজনৈতিক দলের বুথ এজেন্টদের সংশোধন প্রক্রিয়ায় যুক্ত রাখা এবং জেলা ভিত্তিক ভোটার অন্তর্ভুক্তি/বাতিলের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, দেশে অনন্য এপিক নম্বর জারি ত্বরান্বিত করা, আধার-ভিত্তিক যাচাই চালু করা এবং স্থানীয় প্রভাব এড়াতে বিএলওদের ঘনঘন রোটেশনের পরামর্শও দিয়েছে টিডিপি। টিডিপি’র পক্ষ থেকে এই চিঠিতে সই করেছেন লোকসভায় দলনেতা লাভু শ্রীকৃষ্ণ দেবরায়ালু, সাংসদ বায়রেড্ডি শাবরি, প্রসাদ রাও, অন্ধ্র প্রদেশের রাজ্য সভাপতি পল্লা শ্রীনিবাস রাও এবং সর্বভারতীয় মুখপাত্র জ্যোৎস্না তিরুনাগাড়ি।
এদিন এসআইআরের বিরোধিতা করেছেন কংগ্রেস নেতা কানহাইয়া কুমারও। তিনি বলেন, নির্বাচনী তালিকা সংশোধনের নামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) চালু করা ঠিক নয়, নাগরিকত্ব যাচাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব। কানহাইয়ার কথায়, “ভোটার তালিকা সংশোধন স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং যথেষ্ট সময় নিয়ে করতে হবে। তিন মাসে নয়, অন্তত এক বছর সময় দেওয়া উচিত।” তিনি দাবি করেন, বিহারে বহু মানুষ জন্মসনদ দেখাতে পারবেন না, অথচ তাদের কাছ থেকে এমন প্রমাণ চাওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যদি সত্যিই ভোটার তালিকায় বাংলাদেশ, মায়ানমার বা নেপালের মানুষ পাওয়া গিয়ে থাকে, তার দায় কাদের? তা হলে বিজেপি যে ভোটে জিতেছে, সেগুলো কি বৈধ? প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস নেতা।
সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে এই কাজ চালিয়ে যেতে অনুমতি দিয়েছে এবং জানিয়েছে— সংবিধান অনুযায়ী কমিশন যা করতে পারে, তা তারা করুক; যা তারা করতে পারে না, তা যেন না করে।
টিডিপি ও কংগ্রেসের স্পষ্ট বার্তা— ভোটার তালিকা হালনাগাদ হোক, কিন্তু এর নামে মানুষের নাগরিকত্বের বৈধতা নিয়ে কোনও পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।
SIR
ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে নাগরিকত্ব যাচাই নয়, নির্বাচন কমিশনকে চিঠি বিজেপি’র জোট শরিকের

×
Comments :0