JOURNEY — AVIK CHATARJEE — UNKNOE DELLHI — MUKTADHARA — 26 JULY 2025, 3rd YEAR

ভ্রমণ — অভীক চ্যাটার্জী — অজানা দিল্লী — মুক্তধারা — ২৬ জুলাই ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

JOURNEY  AVIK CHATARJEE  UNKNOE DELLHI  MUKTADHARA  26 JULY 2025 3rd YEAR

ভ্রমণ মুক্তধারা, বর্ষ ৩

 

অজানা দিল্লী


অভীক চ্যাটার্জী

শেষ পর্ব

সেই শহরে ইতিহাস গান গায়
তানসেন ধরে মিঞা মল্লার রাগ
ভগ্ন প্রসাদ স্মৃতির রোমন্থনে,
লগি ঠেলে আঁকে ফেলা সময়ের দাগ।।

দিল্লির বুক চিরে দাঁড়িয়ে থাকা অগণিত নিদর্শনের মধ্যে বিজয় মণ্ডল আর অগ্রসেন কি বাওলি যেন এক যুগল রত্ন। একদিনের সফরে এই দুই প্রাচীন স্থানের গম্ভীর সৌন্দর্য যেন সময়ের অলিন্দে হেঁটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা দেয়।

সকালের কুয়াশা ভেদ করে প্রথমেই পৌঁছানো বিজয় মণ্ডলে। হাউজ খাসের কাছে, নির্জনতার আবেশে মোড়া এই স্থাপনাটি তুঘলক আমলের শক্তপোক্ত ইতিহাসের সাক্ষী। প্রায় ভগ্নপ্রায় ইটের প্রাচীর, খোলা প্রাঙ্গণ আর অর্ধেক ভাঙা মিনার যেন নিঃশব্দে অতীতের যোদ্ধাদের গল্প শোনায়। চারদিকের নীরবতা, কেবল বাতাসের হালকা সোঁ সোঁ শব্দে ভেঙে যায়। সূর্যের সোনালি আলো যখন পাথরের দেয়ালে পড়ে, তখন মনে হয় যেন শতাব্দীর প্রাচীন ইতিহাস নতুন করে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। এ সব জায়গায় এলে নিজেকে বড় তুচ্ছ মনে হয়। মনে হয় দুনিয়ার সর্বশক্তিমান কেউ নয়। শুধু সময়ের অপেক্ষা।

দুপুর গড়ালে গন্তব্য অগ্রসেন কি বাওলি। কানট প্লেসের কোলাহল থেকে কয়েক কদম দূরেই হঠাৎই যেন দাঁড়িয়ে যায় অন্য এক জগতে। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে ১০৩ ধাপ পেরিয়ে বাওলির গভীরে পৌঁছালে ভেসে আসে অদ্ভুত এক শীতলতা। লালবেলে পাথরের গায়ে সময়ের দাগ, আর নীচের অন্ধকারে যেন অজানা কাহিনির ছায়া। কিংবদন্তি বলে, রাজা অগ্রসেন এই বাওলি(কূপ )নির্মাণ করেছিলেন জনতার পিপাসা মেটাতে, কিন্তু আজ এই জায়গা এক রহস্যময় সৌন্দর্যের প্রতীক।কিন্তু হালের ইনস্টাগ্রামের চক্করে এ জায়গার সৌন্দর্য নষ্ট হতে বসেছে।

সন্ধ্যায় কানট প্লেসের আলো-ঝলমলে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়, দিল্লির পুরনো ও নতুন রূপ যেন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। বিজয় মণ্ডলের নিস্তব্ধতা আর বাওলির রহস্যময় গভীরতা দিনের শেষে মনে এক অবিস্মরণীয় সাহিত্যিক স্মৃতি এঁকে যায়।

এভাবেই শেষ হয় আমার দিল্লিকে নতুন করে চেনার এক প্রয়াস। এক উপলব্ধি, এ শহরকে গাড়িঘোড়ায় চড়ে চেনা দুষ্কর। এ শহরকে উপলব্ধি করতে হয় পায়ে হেঁটে। বুক ভরে নিতে হয় এ শহরের গন্ধ। আজলা ভরে নিতে হয় এ শহরের স্বাদ। এই চাঁদনীচকের গলিঘুজি, তুঘলকাবাদের নিস্তব্ধতা, কিম্বা জামালিকমলি মসজিদের রহস্যময়তা যেন নিয়ে যায় এক নতুন দুনিয়ায়। সে দুনিয়ার টানেই তো বেরিয়ে পড়া! দিনের শেষে পরমেশ্বরকে কৈফিয়ত দেওয়ার বেলায় যেন বলতে পারি, "ওখানেও ছিলাম স্যার"

সমাপ্ত

Comments :0

Login to leave a comment