কলকাতা পৌরসভায় একাধিক শূন্যপদ। ২০১০ পর থেকে স্থায়ী নিয়োগ নেই। সংখ্যা কমছে স্থায়ী কর্মীদের। অভিযোগ করছেন শাসক থেকে বিরোধী কাউন্সিলররা। আর মেয়র পারিষদ সরাসরি জানাচ্ছেন যে অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে কাজ করানোর ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে পৌরসভার তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড।
কলকাতা পৌরসভার মাসিক অধিবেশন হয়েছে শুক্রবার। এদিন ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলার সন্তোষ পাঠক প্রশ্ন করেন যে তাঁর ওয়ার্ডে বিভিন্ন হেরিটেজ বিল্ডিং, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান দপ্তর ও রিজিওনাল অফিস রয়েছে। বাংলার বিভিন্ন মানুষ প্রান্ত থেকে মানুষ প্রতিদিন নিজেদের জীবিকার জন্য এখানে আসেন। তাই ওয়ার্ড পরিষ্কার রাখা জরুরি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা এবং বিভিন্ন জায়গা পরিষ্কার করার জন্য একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁকে। তিনি আগেও মেয়র পারিষদ সদস্য দেবব্রত মজুমদারকে চিঠি দিয়ে ছিলেন। কিন্তু তার সুরাহা এখনো পর্যন্ত হয়নি।
সন্তোষ পাঠকের দাবি, তাঁর ওয়ার্ডে যথেষ্ট সংখ্যায় কর্মী নেই। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে দেবব্রত মজুমদার বলেন ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৩ জন স্থায়ী কর্মী রয়েছেন। ১৭ জন ক্যাজুয়াল কর্মী রয়েছেন। ১০ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মী রয়েছেন। এছাড়াও ৫০ জন ১০০ দিনের কাজের কর্মী রয়েছেন। তাঁর দাবি, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে যথেষ্ট পরিমাণ কর্মী রয়েছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে ব্যাটারি চালিত গাড়ি দেওয়া হয়েছে জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য।
সন্তোষ পাঠকের পালটা বক্তব্য, ২০১০ সালে ১৬৩ জন স্থায়ী কর্মী ছিলেন, ১০ জন ক্যাজুয়াল কর্মী ছিলেন, ওয়ার্ড অবজারভার ছিলেন দুজন। সেই সংখ্যাই ২০২৫ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৮৩ জন স্থায়ী কর্মীতে। তার মানে সংখ্যা এখন প্রায় অর্ধেক। তাঁর অভিযোগ, সঠিকভাবে জঞ্জাল পরিষ্কার করা হচ্ছে না যার কারণ দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী নিয়োগ নেই। কেবল ১০০ দিনের কর্মী ও ক্যাজুয়াল বা কন্ট্রাকচুয়াল কর্মীদের দিয়ে এই কাজ সরাসরি করানো সম্ভব নয়। তাঁর বক্তব্য, স্বাস্থ্য বিভাগেও এইরকম দৈন্য দশা। বর্ষার কারণে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে মশাবাহিত রোগ সমস্যা থাকে। বাড়তি সতর্কতার দরকার হলেও তা নেই পৌরসভার।
তৃণমূলেরই কাউন্সিলর ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের মোনালিসা ব্যানার্জি অধিবেশনে তাঁর ওয়ার্ডের জলের পাইপলাইন লিকেজ সংক্রান্ত অভিযোগ জানান। কর্মীর সংখ্যা কম হওয়ায় খেদ জানান তিনিও। তিনি বলেন যে যে কর্মীরা রয়েছেন তাঁরাও শুধুমাত্র সকাল আটটা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত কাজ করেন। ছুটির দিন অথবা শনিবার, রবিবার যদি কোনও সমস্যা হয় সেই সমস্যা মেটানো যায় না।
এই প্রশ্নে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন যে সবসময় স্থায়ী কর্মীদের ওপর ভরসা করা হচ্ছে না। অস্থায়ী কর্মীদের কাজের ভাগ করে দেওয়া রয়েছে।
কলকাতা পৌরসভার প্রায় ৪০ হাজার শূন্য পদ রয়েছে। এই বিষয় নিয়ে একাধিকবার বামপন্থী ছাত্র যুব সংগঠন সরব হয়েছে। পৌরসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা মধুছন্দা দেব বলেন, স্থায়ী কর্মী নিয়োগ একটি বড় সমস্যা, বর্তমান পৌরসভা প্রশাসন কোনোভাবেই নিয়োগ করতে চাইছে না। যারা অবসর নিচ্ছেন সেই জায়গায় সব অস্থায়ী কর্মীদের নেওয়া হচ্ছে। কম মজুরিতে কাজ করানো হচ্ছে। তাঁদের সামাজিক সুরক্ষা কিছু নেই, নেই পেনশন গ্র্যাচুইটি প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো সুবিধাও। পৌরসভা প্রশাসন এটাই চাইছে যাতে কম মজুরিতে সামাজিক সুরক্ষা দিতে না হয়। কিন্তু অস্থায়ী কর্মীদের থেকে কাজ আদায় করে নেওয়া যায়।
মধুছন্দা দেবের প্রশ্ন, পৌরসভা এমন অনেক বাড়তি খরচ করে যা বাঁচিয়ে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা যেত। তিনি বলেন, বামফ্রন্ট পৌরসভার দায়িত্ব পালনের সময় বছরে নির্দিষ্ট সংখ্যক স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করেছিল। কিন্তু ২০১০’র পর থেকে একজন স্থায়ী কর্মীও নিয়োগ করা হয়নি পৌরসভায়।
বামপন্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি, সব শূন্য পদে স্থায়ী নিয়োগ করতে হবে। ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও অন্যান্য পদে স্থায়ী নিয়োগ করতে হবে।
KMC
স্থায়ী কর্মীর তীব্র অভাব কলকাতা পৌরসভায়, ক্ষোভ অধিবেশনেই

×
Comments :0