BIHAR SIR

তোমারে বধিবে যে বিহারে বাড়িছে সে

উত্তর সম্পাদকীয়​

অলকেশ দাস
ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কভার। মলাট দেখেই একটা বইয়ের বিচার করতে যেও না। এ কথাটা প্রযোজ্য এদেশের নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে।  আগে নির্বাচন কমিশন মানুষের চোখে নিরপেক্ষতার প্রশ্নে  শ্রদ্ধার আসনে ছিল।  সে সময়ের ডাকসাইটে নেতা শিবসেনা প্রধান বাল থাকারেকে ছয় বছরের জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অযোগ্য ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচন কমিশন এখন ভারতের কষ্টার্জিত গণতন্ত্রের নিম্নতম বিন্দুতে। জনগণের চোখে অশুভ অভিশাপ। 
কিভাবে নির্বাচিত হবে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা? ২ মার্চ ২০২৩ দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় এই প্রক্রিয়াকে নিরাপদ এবং স্বাধীন রাখতে রায় দেয় যে, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং দেশের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে একটা কমিটি নির্বাচন কমিশনারদের নামের সুপারিশ পাঠাবে রাষ্ট্রপতিকে।  তড়িঘড়ি করে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও  কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার প্রতিনিধি হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নাম সুপারিশ করেন রাষ্ট্রপতিকে। রাষ্ট্রপতি সবুজ সংকেত দেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি জ্ঞানেশ কুমার হয়ে যান দেশের মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার। এই সেই (নিরপেক্ষ!) জ্ঞানেশ কুমার যিনি জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপের  এবং রাজ্যটাকে দু'টুকরো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করার আইনের খসড়া করেছিলেন। নির্বাচন কমিশন আর একবার চলে আসে নিরপেক্ষতার পরিবর্তে রাজনৈতিক স্বার্থের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে।
গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভেই আঘাত করেছে সঙ্ঘ পরিবার, সামনে রেখেছে বিজেপি-কে, সরকারকে। লোকসভা, বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মোদীর ঘৃণা ভাষণের ঝড় বয়ে যায়। নির্বাচন কমিশন মুখে কুলুপ এঁটে থাকে।  ২০১৯ -এর মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের মধ্যবর্তী প্রায় পাঁচ বছর সময়ে ৩২ লক্ষ ভোটার বৃদ্ধি হয়। কিন্তু ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সময় অর্থাৎ মে মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত পাঁচ মাস সময়ে ৩৯ লক্ষ ভোটার বৃদ্ধি হয় নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে। এছাড়াও প্রচুর ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়। মোট ভোটারের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় মহারাষ্ট্রের মোট প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সংখ্যাকে। 
সন্দেহ তৈরি হয় তীব্র যখন দেখা যায় লোকসভা নির্বাচনে যে যে আসনে বিজেপি পরাজিত হয়েছিল সেই সেই আসনেই ভোটার বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ। নির্বাচন কমিশনের এহেন বদান্যতায় নির্বাচনে বিজেপি’র নেতৃত্বের জোট ২৮৮ আসনের মধ্যে ২৩৫টিতে জয়লাভ করে।
এবার বিহার। এবছরেই নির্বাচন। মহারাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকা হচ্ছে ভিত্তি আর বিজেপি’র জয় হচ্ছে ভবিষ্যৎ। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই রুটিন মাফিক ভোটার তালিকা সংশোধন হচ্ছিল। এরমধ্যে হয়ে গেছে স্পেশাল সামারি রিভিশন। বিশেষ সংশোধন পর্ব। এ বছরের জুন মাসের মধ্যবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশন এবং তার আধিকারিকরা ভোটার সংযোজন এবং বিয়োজনের পরবর্তীতে ক্রমাগত সংশোধিত ভোটার তালিকা দেখে তা বিধানসভা নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট করেন। কিন্তু তার এক সপ্তাহ পরেই ২৪ জুন '২৫ পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে নির্বাচন কমিশন এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বলে যে বিহার রাজ্যে ১ জুলাই থেকে ২৫  জুলাই ভোটার তালিকা স্বচ্ছ করার জন্য ' স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিউ' হবে। সমস্ত ভোটারদের ফর্ম (এনুমারেশন ফর্ম) পূরণ করে নতুন করে প্রমাণপত্র দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি যোগ্য ভোটার। বিশেষ করে তাদের যারা ২০০৩ সালের পর ভোটার হিসাবে নথিভুক্ত হয়েছেন। এই প্রথম নির্বাচন কমিশন ভোটারদের দু’ভাগে ভাগ করে। ২০০৩ এর আগে, ২০০৩ এর পরে। ২০০৩ সালেই বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী, আদবানি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। ২০০৩ সালেই জারি হয়েছিল কুখ্যাত সিএএ ২০১৯। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০০৩। সেখানেই প্রথম ঢোকানো হয়েছিল এনআরসি, এনপিআর। বলা হয়েছিল ২০০৩ এর পর থেকে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য শুধু বাবা বা মা নয়, বাবা-মা দু'জনাই ভারতীয় নাগরিক অথবা একজন ভারতীয় আর একজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নয়— তা প্রমাণ করতে হবে । বলা হয়েছিল যার হাতে এ দেশে থাকার বা আসার কোনও বৈধ  প্রমাণপত্র নেই সে এদেশের নাগরিক নয়,অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। তাহলে বিহারে কি ঘুরপথে এনআরসি?
ভোটারদের  নিজেদের যোগ্য ভোটার প্রমাণ করার জন্য এনুমারেশন ফর্ম জমা দিতে হবে। সঙ্গে যে ১১ দফা প্রমাণপত্রগুলি যুক্ত করতে হবে সেগুলো এরকম: ১. রাজ্য সরকারি বা কেন্দ্রীয় সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মচারীর পরিচয় পত্র, অবসরপ্রাপ্ত হলে পেনশনের কাগজপত্র ২. ১৯৮৭ সালের আগের সরকার বা সরকারি সংস্থার দেওয়া তার নামে কাগজ ৩. জন্ম শংসাপত্র ৪. পাসপোর্ট ৫. শিক্ষাগত শংসাপত্র ৬. স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণপত্র ৭. বনাঞ্চলের পাট্টার কাগজ ৮. তফসিলি জাতি ,আদিবাসী, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতিভুক্ত হওয়ার শংসাপত্র ৯. নিবন্ধীকৃত নাগরিকের প্রমাণপত্র ১০. ফ্যামিলি ট্রি বা বংশ তালিকা ১১. জমি, বাড়ির দলিল।
বিহারে মোট ভোটার ৭ কোটি ৮৯ লক্ষ। ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিনের এক সপ্তাহ আগে ফর্ম জমা পড়েছে ৭ কোটি ৮৯ লক্ষ। অর্থাৎ ৯৪.৮৮ শতাংশ। ৫.১২ শতাংশ ফর্ম জমা পড়েনি। নির্বাচন কমিশন বলছে মোট ভোটারদের ১.৬১ শতাংশ মৃত, ২.৩ শতাংশ পুরোপুরি বিহার থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে, ৪.৬৭ শতাংশ ভোটারদের বাড়ির ঠিকানায় গিয়েও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ প্রায় ১২ লক্ষ মৃত, ১৭ লক্ষ রাজ্য ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে গেছে, ৫ লক্ষ মানুষের একাধিক জায়গায় ভোটার তালিকায় ভোটার তালিকায় নাম আছে। প্রায় ৩৭ লক্ষ মানুষের বাড়িতে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। ১ আগস্ট ভোটার লিস্টের খসড়া প্রকাশ হবে। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে যে ৩৫.৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ যাবে।  ১ আগস্ট বোঝা যাবে কত নাম বাদ গেল। তারপর হয়তো জনগণকে আরও একমাস সময় দেবে। কাগজ দেখানোর জন্য। মানুষ চুল ছিঁড়তে থাকবে কাগজের জন্য। আসাম সরকারের ১৬০০ কোটি টাকা খরচ করা এনআরসিতে বাদ যাওয়া ১৯ লক্ষ এখনও যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই আছে। আসামের এই লোকগুলোর ৮৯% কে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে যেতে হয়েছে। উদ্বেগে ,আশঙ্কায়, ভয়ে। সেই ২০১৮ সালেই হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছিল— এনআরসিতে যাদের নাম বাদ যাবে সংবিধানের কোনও মৌলিক অধিকার তারা পাবে না।
সাংবিধানিকভাবে জনগণের নাগরিকত্ব নির্ণয়ের অধিকার নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ার ভুক্ত নয়। এসআইআর বা 'স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন' এই শব্দবন্ধ নির্বাচন কমিশনের রুলস এর মধ্যে নেই। বিহারে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা যথেষ্ট। মাল্টি ডাইমেনশনাল পোভার্টি রেট ৩৩.৭৬ শতাংশ। এদের মধ্যে জাতিগত পিছিয়ে পড়া মানুষ অসংখ্য (জাতি সমীক্ষায় ধরা পড়েছিল ওবিসি,এসসি,এসটি মিলিয়ে জনসংখ্যার ৮৪.৪৭ শতাংশ)।  ২৬ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। এইসবের মধ্যে এরা কাগজ দেখাবে কি করে?  এই কারণেই সারা দেশে জনপ্রিয় হয়েছিল স্লোগান-কাগজ নেহি দেখায়েঙ্গে।
যারা সদ্য ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছে তাদেরও প্রমাণ করতে হবে তারা যোগ্য ভোটার। ২০০৩ সাল থেকে পাঁচটা লোকসভা ও পাঁচটা বিধানসভার নির্বাচনে যারা বিহারে ভোট দিয়েছে তাদেরও উঠতে হবে নির্বাচন কমিশনের কাঠগড়ায়। একটা নির্বাচনের ন্যায্যতা শুধু তার প্রক্রিয়ার সততার উপর নির্ভর করে না। করে তার অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতির ওপর।  যারা ধর্মতন্ত্রে আর ভাষাতন্ত্রে (হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্থান) দেশকে বেঁধে ফেলতে চায় তারা বর্জনমূলক একনায়কতন্ত্রের দিকে হাঁটবে। প্রশ্ন হলো আমরা সেটা করতে দেবো কি না। 
রহস্যটা অন্য জায়গায়। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বের এনডিএ জোট ভোট পেয়েছিল ৩৭.২৬ শতাংশ। মহা গাঁটবন্ধন পেয়েছিল ৩৭.২৩ শতাংশ। একেবারে গায়ে গায়ে। গত নির্বাচনে ১ শতাংশের কম ব্যবধানে অর্থাৎ অনূর্ধ্ব ৩০০০ ভোটের ব্যবধানে ৩৫টি আসনে ফলাফল নির্ধারিত হয়েছিল। ৫০০০ এর নীচে  ব্যবধানের ফলাফল ছিল ৫২টি আসনে। অর্থাৎ বলা চলে ৮৭ টি আসনে ৫ হাজারের কম ভোটে প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিল। ২.৫ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে এনডিএ জয়ী হয়েছিল ২১ টি আসনে। বিরোধীরা জয়ী হয়েছিল ২২ টি আসনে। মহারাষ্ট্রের অভিজ্ঞতায় এই জায়গাতে হাত দিতে চাইছে নির্বাচন কমিশনের সাহায্যে বিজেপি। নির্বাচক তালিকাকে নিষ্কলুষ করা নয় বা অবাঞ্ছিত মুক্ত করা নয়, ঘোর রাজনৈতিক সংসদীয় অঙ্কে এগনোটাই মূল লক্ষ্য বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের। 
উচ্চ ন্যায়ালয়  অবশ্য নির্বাচন কমিশনকে বলেছে ভোটারদের ভোটার কার্ড অর্থাৎ এপিক, আধার, রেশন কার্ডকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবার সূচক হিসাবে বিবেচনা করতে। একে গ্রহণ করা অথবা এর বিষয়বস্তুর সমীক্ষা করা অথবা একে বাতিল করা। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার গালে হাত দিয়ে বসেই আছেন। নিজের কমিশনের প্রদত্ত ভোটার কার্ড অর্থাৎ এপিককে স্বীকৃতি দিতেও হাত কাঁপছে পুতুল কমিশনারের। 
এখন সবচেয়ে চর্চিত যে শব্দ তা হচ্ছে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ।  দুই দেশের সীমানায় যে সীমান্তরক্ষীরা থাকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করে বিজেপি’র সরকার। সীমানা ফাঁকি দিয়ে যদি এদেশে ঢুকে তাহলে দায়িত্ব সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর। বিজেপি কিভাবে এই দায়িত্ব অস্বীকার করে? পশ্চিমবাংলায় ঢুকছে বাংলাদেশ থেকে।  বিজেপি’র অভিযোগ বাংলাদেশে আক্রান্ত হচ্ছে হিন্দুরা। তাহলে আক্রান্ত হবে হিন্দুরা আর এদেশে আসবে মুসলমানেরা! আজব অঙ্ক । এখন শিরোনামে  রোহিঙ্গা মুসলমান। এদেশে রোহিঙ্গা ঢুকেছে বলা হচ্ছে ১৭ লক্ষ। এক বিহারেই নাম বাদ যেতে পারে ৩৫ লক্ষ। আসামে ইতিমধ্যে বাদ গেছে ১৯ লক্ষ। পশ্চিমবাংলায় শুভেন্দু বলেছে ৯০ লক্ষ নাম বাদ দিতে হবে। রোহিঙ্গার হিসাব মিলছে না। 
সর্বনাশের শুরু হয়েছে বিহারে। এবার চালু হবে গোটা দেশে। ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন। প্রাথমিক লক্ষ্য সামনের বছর বিধানসভার নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরালা,পুদুচেরি এবং আসাম। বিয়োজনের এই  রাজনীতির মূল কথা হচ্ছে চাপ তৈরি করো। আতঙ্ক ছড়িয়ে দাও। তারপর নিয়ন্ত্রণে আনো। পায়ের তলায় রেখে শাসন করার মজাই আলাদা। সেই জন্য শুভেন্দু বলছেন বিহারে যদি ৩০ লাখ হয় পশ্চিমবঙ্গে ৯০ লাখ নয় কেন? বাড়িতে ঢুকে ঢুকে খুঁজে বার করতে হবে-কে অনুপ্রবেশকারী। মুখে বলছে বটে মুসলমান, রোহিঙ্গাদের কাগজ দেখাতে হবে। কিন্তু কাগজ দেখাতে গেলে যে হিন্দুরাও ফাঁদে পড়ে যায় তার নমুনা দেখাচ্ছে তার দলের রাজ চলা রাজ্যগুলো। কোচবিহারের দিনহাটায় যে ব্রজবাসীকে আসামের বিজেপি সরকার ফরেন ট্রাইবুনালের নোটিস পাঠিয়েছে বিদেশি বলে- সে মুসলমান নয়, রাজবংশী। মমতা যখন হেনস্তার কথা বলেছে তখন হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছে কোচ-রাজবংশী সম্প্রদায়ের ওপর ফরেন ট্রাইব্যুনালের ৪০,০০০ মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। বিজেপি কোচবিহারে এই প্রচার করছে খুব। কিন্তু বিজেপি’র ঘৃণা প্রচারের ফ্রন্ট লাইনার হিমন্ত বলেছে ২০১১ সালের জনগণনায় আসামে যারা মাতৃভাষা বাংলা লিখেছে- তারা সকলেই বাংলাদেশী। এদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। বাংলায় কি শুধু মুসলমান কথা বলে? হিন্দু নয়? মুসলমান বাদ যাবে এই কথা বলে হিন্দুদের গরম করে আসামে ১৯ লক্ষের মধ্যে ১৩ লক্ষ ভোটারের নাম এনআরসিতে বাদ গিয়েছিল বিজেপি’র প্রযোজনায়।  
যারা মতুয়া ও অন্যান্যদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলেছিল লোকসভা ভোটের এক বছর পরেও তা কাউকে দিতে পারেনি। বরং  এখন ঘরে ঘরে তল্লাশির কথা বলছে। আসলে এখন দাঁড়িয়ে গেছে বাংলায় কথা বললে সন্দেহজনক। বাংলাভাষীর সঙ্গে সে যদি মুসলমান হয় তাহলে নিশ্চিতভাবে টার্গেট। বাংলাভাষী, মুসলমান আর সে যদি মহিলা হয় তাহলে আর কোনও কথা হবে না। সঙ্ঘের তীব্র ঘৃণার প্রচার। মোকাবিলা করতে গিয়ে নির্বাচনের প্রচার করে ফেলেছেন মমতা। মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বাঙালি  বড় কথা নয়, আসল কথা ভোটে জয়।   নিজভূমিতে বাঙালি যন্ত্রণাদগ্ধ, পরভূমিতে যেতে হয়েছে  সরকারের ব্যর্থতার কারণে। সারাদেশে প্রাদেশিকতার গন্ধ। নয়া ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য। তামিল বনাম হিন্দি, অসমীয়া বনাম বাঙালি, মারাঠি অস্মিতা, কন্নড় অস্মিতা। এক রাজ্য অন্য রাজ্য থেকে আসা লোকগুলোর প্রতি বলছে— এরা আমাদের খায়, শোয় আর আমাদের অপমান করে। এই প্রাদেশিকতা আমাদের সাময়িক জেতাতে পারে। এটা হবে— রিস্ক অফ উইনিং এ ব্যাটল টু লুজ দ্য ওয়ার। অনুপ্রবেশ উপলক্ষ মাত্র। ভাষাগত, ধর্মীয়, সামাজিক আক্রমণের পিছনে রয়েছে সংসদীয় ক্ষমতা দখলের ছক। মুখ্যমন্ত্রী এর আগে বলেছিলেন এনআরসি নয়, এনপিআর চাই। রাজারহাট আর  বনগাঁয় ডিটেনশন সেন্টারের কাজ প্রায় শুরু করে দিয়েছিলেন। বিহারের ভোটের আগে ইন্ডিয়া ব্লকের সভায় না যাওয়ার বাসনা তার। বিজেপি’র বিরুদ্ধে গর্জানোর কাজটা তিনি ভালো শুরু করেছেন। কিন্তু শেষ অবধি বর্ষা হবে না। আসলে তার দৌড় বিজেপি অবধি, আরএসএস’র বিরুদ্ধে গলা তুলতে পারেন না। সময় বলবে স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন নিয়ে তিনি কতদূর এগোতে পারেন।
বিজেপি বলেছিল ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর এর আগে এ'দেশে এলে সব হিন্দুদের নাগরিকত্বের সাত খুন মাপ। চারিদিকের ঘটনা দেখে এখন বোঝা যাচ্ছে সেগুলো সব বকওয়াস। আপনি চেঁচাচ্ছেন অনুপ্রবেশ নিয়ে। আদানি বছরে রোজগার করে ৮.৪ লক্ষ কোটি টাকা। এদেশের ২৭.৫  শতাংশ মানুষ রোজগার করে দিনে ১০০ টাকার কম, বছরে ৩৬০০০ টাকা। এ সবের থেকে চোখ ঘুরিয়ে দিতে, মানুষকে টুকরো টুকরো করতে একের পর এক আসবে ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, নাগরিকত্ব, জাতের বহু প্রকরণের ধাক্কা। প্রতিবন্ধকতা উসকে দেয় সংগ্রামকে। শাণিততর করে তোলে তার ধারাকে। তাকে প্রমাণ করার দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment