রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ করে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার এবং তুলে দেবার সম্ভাব্য সব রকমের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে মা-মাটি-মানুষের সরকার। মমতার তৃণমূল চায় শিক্ষার যাবতীয় দায়দায়িত্ব, বিশেষত আর্থিক দায়িত্ব পুরোপুরি সরকারের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে। সেজন্য হাজারো কৌশলে শিক্ষা ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি করা হচ্ছে যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা বাধ্য হয় লেখাপড়া ছেড়ে দিতে অথবা যাদের সামর্থ্য আছে তারা বাধ্য হয় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে এরাজ্যের অথবা ভিন রাজ্যের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে। সরকারি পরিকল্পনায় হু হু করে মুনাফা বাড়ানোর বন্দোবস্ত করছে মমতা ব্যানার্জির সরকার।
লেখাপড়া একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একটা শ্রেণি শেষ হলে শুরু হয় পরবর্তী শ্রেণি। বসে থাকার বা সময় নষ্ট করার অবকাশ ছাত্র-ছাত্রীদের থাকে না। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বহুদিন আগে প্রকাশ হয়ে যাবার পরও কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তি বন্ধ। ওবিসি শংসাপত্র নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হলেও শীর্ষ আদালত জানিয়েছে তার জন্য ভর্তি প্রক্রিয়া আটকে রাখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু রাজ্য সরকার সচেতনভাবেই ভর্তির জন্য কেন্দ্রীয় পোর্টাল তৈরি করেছে অস্বাভাবিক বিলম্বে। পোর্টাল চালু হলেও চালু হয়নি ভর্তি। এদিকে শারদোৎসব এগিয়ে আসছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে। খোলার পরই এসে যাবে সেমিস্টার পরীক্ষা। কার্যত ক্লাস না করেই পরীক্ষায় বসতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের।
এমন এক পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্ত, দরিদ্র সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ার আশা ছেড়ে দিয়ে কাজেকর্মে যোগ দেবার চেষ্টা করছে। অনেকে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে রাজ্যের ও অন্য রাজ্যের বেসরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে গেছে। আবার একটা বড় অংশের ছেলেমেয়ে নিদারুণ হতাশায় উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নকে হত্যা করে ফেলছে। তারা চোখের সামনে দেখছে লেখাপড়া করে কাজ পাবার কোনও সুযোগ নেই। উচ্চ শিক্ষার পর অনিবার্য বেকার জীবন। তাই সময় নষ্ট না করে উচ্চ মাধ্যমিকের পরই বেরিয়ে পড়ছে রোজগারের সন্ধানে।
রাজ্যে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল প্রকাশ হয়নি ৯০ দিন পেরিয়ে গেলেও। লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে জানে না তাদের ভবিষ্যতের কি হাল হবে। এদের মধ্যে যারা কেন্দ্রীয় বা অন্য রাজ্যের পরীক্ষায় বসেছে তাদের অনেকে অন্য রাজ্যে চলে গেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে এভাবে অনন্তকাল বসে থাকা যায় না। হতাশা গ্রাস করে। বীতশ্রদ্ধ হয়ে অনেকে লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। এখন সেটাই হচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলি ফাঁকা পড়ে আছে। কেউ জানে না কবে ফল প্রকাশ হবে।
প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে অর্ধেক শিক্ষক পদ খালি। গত দেড় দশকে নিয়োগ কার্যত বন্ধ। যেটুকু নিয়োগ হয় চরম দুর্নীতির কারণে চাকরি বাতিল হয়েছে বা হবার মুখে। বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার পরিবেশ নেই। রাজনীতি আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত। চরম অরাজকতার মধ্যে মানুষ সরকারি স্কুল থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন দ্রুত। রাজ্যে আধিপত্য বাড়ছে শিক্ষা ব্যবসার। বেসরকারি স্কুল ছড়াচ্ছে গ্রাম পর্যন্ত। আসলে মমতা ব্যানার্জির সরকার শিক্ষার জন্য সরকারি অর্থ ব্যয় করতে চান না। স্কুল চালানো, উন্নয়ন, শিক্ষকদের বেতন ইত্যাদিতে অর্থ ব্যয় না করে তিনি সেগুলি লুটে খাবার ব্যবস্থা করতে চান। চুলোয় যাক সাধারণ মানুষের শিক্ষা। লেখাপড়ার পেছনে টাকা খরচ করলে তাঁর ভোট বাড়বে না। সরকারি টাকা সেখানেই খরচ হবে যেখানে সর্বাধিক ভোট মিলবে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থা খরচার খাতায়। চলছে ধ্বংসের অভিযান।
Education TMC Govt
শিক্ষা ব্যবস্থা খরচার খাতায়

×
Comments :0